Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল

শুশ্রূষা হবে কি,পরিস্রুত জলই নেই হাসপাতালে

শুধু মশা নয়। মারণ রোগটা যে জলকেও বাহন করেছে, হুঁশিয়ার করে দিয়ে গিয়েছেন জীবাণুবিজ্ঞানীরা। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এখনও পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাই নেই! অথচ উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলার এনসেফ্যালাইটিস রোগীদের মূল চিকিৎসা হচ্ছে ওই হাসপাতালেই। এবং বিজ্ঞানীরা ওই হাসপাতালে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন, পানীয় জল থেকে ছড়ানো দূষণের জেরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসেফ্যালাইটিসের উপসর্গযুক্ত জ্বর ছড়াচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৬
Share: Save:

শুধু মশা নয়। মারণ রোগটা যে জলকেও বাহন করেছে, হুঁশিয়ার করে দিয়ে গিয়েছেন জীবাণুবিজ্ঞানীরা। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এখনও পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থাই নেই! অথচ উত্তরবঙ্গের তিনটি জেলার এনসেফ্যালাইটিস রোগীদের মূল চিকিৎসা হচ্ছে ওই হাসপাতালেই। এবং বিজ্ঞানীরা ওই হাসপাতালে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন, পানীয় জল থেকে ছড়ানো দূষণের জেরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এসেফ্যালাইটিসের উপসর্গযুক্ত জ্বর ছড়াচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের রাতারাতি ওই হাসপাতালের সুপারকে বদলি করা হয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে জল সরবরাহ ব্যবস্থার কোনও উন্নতিই হয়নি। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাইরে থেকে পরিস্রুত জল আনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কিন্তু রোগীদের মধ্যে যাঁদের সামর্থ্য আছে, শুধু তাঁরাই বাইরে থেকে জল কিনে এনে খাচ্ছেন। গরিব পরিবারের রোগীরা কী করছেন?

গরিব রোগীদের আত্মীয়স্বজনকে জলের জন্য হাত পাততে হচ্ছে আশপাশের হোটেলে। হাসপাতালের কাজের জন্য ঠিকাদারেরা ওই চত্বরেই যে-নলকূপ বসিয়েছেন, কেউ কেউ দৌড়চ্ছেন সেখানে। তবে সেই জল কতটা পরিস্রুত, কেউ তা জানেন না।

এনসেফ্যালাইটিসের উপসর্গ নিয়ে এমএম-১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি নলিনীমোহন রায়, প্রভাতচন্দ্র রায়েদের পরিবারকে জল কিনে আনতে হচ্ছে। নলিনীবাবুর ছেলে নিরঞ্জন বলেন, “হাসপাতালে জল নেই। বাইরের দোকান থেকে জল (দু’লিটারের বোতল ২৫ টাকা) কিনতে হচ্ছে খাওয়ার জন্য।”

মহিলাদের ওয়ার্ডে ভর্তি রোগিণীর আত্মীয়া সাথী বিশ্বাস, রোগিণী বাবনা লামাদের অভিযোগ, জল পরিস্রুত করার যন্ত্র একটা আছে বটে, কিন্তু তা খারাপ। উপরের ট্যাঙ্ক থেকে জল সরবরাহের কলটি দেখিয়ে সাথীদেবী বলেন, “ওখানে হাত ধুতেও কেউ যান না!”

কেন যান না? কারণ, ওই কলের মুখটার কাছেই জমে রয়েছে ময়লা! তাই বাইরে থেকেই জল নিয়ে আসতে হচ্ছে রোগীর আত্মীয়দের। সেই জলেরও কোনটা পরিস্রুত আর কোনটা নয়, তা বোঝার উপায় নেই।

জলাধার থাকা সত্ত্বেও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পরিস্রুত জল যাচ্ছে না কেন?

হাসপাতালের কর্মীরাই জানাচ্ছেন, তাঁরা কখনও কাউকেই ওই জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করতে দেখেননি! তাই ওই জলাধারের জল কেউ খান না। খুব বেশি হলে হাত ধোয়ার জন্য ব্যবহার করা হয় সেই জল। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা যে বিষয়টি জানেন না, তা কিন্তু নয়। কারণ, স্বাস্থ্য দফতরই বিভিন্ন ওয়ার্ডে (ব্যতিক্রম শিশুদের ওয়ার্ড) জল পরিস্রুত করার যন্ত্র লাগিয়েছিল। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, যে-আরোগ্য নিকেতনে শুদ্ধ জলই মেলে না, সেখানে রোগীর শুশ্রূষা কতটা কী হওয়া সম্ভব?

সরাসরি জবাব দেওয়ার কেউ নেই। হাসপাতাল সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওয়ার্ডমাস্টারদের অফিসের সামনে সম্প্রতি পরিস্রুত পানীয় জলের একটি বড় যন্ত্র বসানো হয়েছিল। সেখানে দু’টি ট্যাপকল রয়েছে। কিন্তু তা থেকেও জল মিলছে না।

হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “কলগুলি ভেঙে খারাপ হয়ে পড়ে ছিল। রবিবারেই সেগুলো সারানো হয়েছে।” তবে এ দিনও ওই কল থেকে কেউ জল পাননি। সুপার এই প্রসঙ্গে আরও জানান, ওয়ার্ডে পরিস্রুত পানীয় জলের যন্ত্র থেকে জল নিতে সমস্যা হচ্ছে কি না সেই যন্ত্র খারাপ রয়েছে কি না, সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল জুড়ে পানীয় জলের এই সমস্যা কেন?

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “স্বাস্থ্য (শিক্ষা) অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ওই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। হাসপাতালের কর্মী এবং ওয়ার্ডের রোগীদের পানীয় জল নিয়ে যে-সব সমস্যা আছে, তার সমস্তটাই দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছেন তিনি।” আর উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের বক্তব্য, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা আছে। কোথাও সমস্যা হলে কর্তৃপক্ষকে তা দেখতে বলা হচ্ছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE