দাঁতের ব্যথায় ভুগছেন বছর পঁয়ত্রিশের সুজাতা। ডাক্তারের পরামর্শ মতো দাঁতও তুলেছেন। তবে ব্যথা কমেনি। রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট করানোর পর থেকে গত ছ’মাস ধরে দাঁতের যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন অদিতিও। একাধিক বার দাঁতের এক্স-রে করিয়ে, ওষুধ, চিকিৎসক বদলেও মেলেনি সুরাহা। ম্যাক্সিলোফেশিয়াল ও ডেন্টাল সার্জন অঙ্কিত খন্ডেলওয়াল বলছেন, “দাঁত তোলা বা আরসিটি সফল ভাবে করানোর পরেও কিছু ক্ষেত্রে রোগীর দাঁতে ব্যথা সারে না। ব্যথার সম্ভাব্য সমস্ত কারণ পরীক্ষা করেও সমস্যা খুঁজে না পাওয়া গেলে, তখন তা ফ্যান্টম টুথ পেন বলে চিহ্নিত করা হয়।” ভূতের মতো সে ব্যথা আসে-যায় বলে একে ‘গোস্ট পেন’ও বলা হয়।
উপসর্গ কী?
সাধারণত দাঁত তোলা হলে বা আরসিটি করানো হলে সেই অংশের নার্ভে আর কোনও ব্যথা অনুভব করার কথা নয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই দাঁতের গোড়া ও তার পার্শ্ববর্তী জায়গা থেকেই ব্যথা শুরু হয়। ব্যথা ক্রমশ নির্দিষ্ট দাঁতের গোড়া থেকে মুখের আর এক পাশে অথবা গোটা মুখে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এ ক্ষেত্রে কখনও একটানা হালকা ব্যথা, কখনও আবার হঠাৎ হঠাৎ তীব্র ব্যথা হয়।
ব্যথার খুঁটিনাটি
ডা. অঙ্কিত বলছেন, অনেকেই এ ক্ষেত্রে ঠিক ভাবে দাঁত তোলা বা রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট না হওয়াকে দায়ী করেন। কিন্তু এ ধরনের ব্যথার পিছনে অন্য কারণও থাকে—
ফ্যান্টম পেন শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গেও হতে পারে। দেহের কোনও অঙ্গ যদি দুর্ঘটনায় কাটা পড়ে বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়, তখন সে জায়গাতেও এই ধরনের ব্যথার অনুভূতি হয়। ফ্যান্টম পেন আদতে এক ধরনের ছদ্ম ব্যথা। এ ক্ষেত্রে রোগনির্ণয় যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমন ব্যয়সাপেক্ষও। অনেক ক্ষেত্রেই তা চিকিৎসক, রোগী উভয়ের কাছেই বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। মানসিক
কারণে, স্ট্রেস থেকে ব্যথা হলে
অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ওষুধে অনেকের কাজ হয়। ডা. অঙ্কিত বলছেন, “কাজের চাপ, স্ট্রেস কমলে নিজে থেকেও এ ব্যথা সেরে যায়।” মানসিক বা স্নায়বিক কোনও সমস্যা ধরা না পড়লে অধিকাংশ সময়ে এ ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়।
কাদের হয়?
ডা. খন্ডেলওয়াল বলছেন, মধ্যবয়স অর্থাৎ ৩০-৩৫ বছর থেকে এ ধরনের সমস্যা শুরু হয়। মূলত মহিলাদের ক্ষেত্রে ফ্যান্টম টুথ পেনের সমস্যা বেশি। তবে রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট বা দাঁত তোলার পরের ব্যথা মানেই যে ফ্যান্টম টুথ পেন হচ্ছে, এমনটা না-ও হতে পারে। বরং এই সমস্যা খুব কম রোগীর ক্ষেত্রে হয়।
চিকিৎসকদের মতে, যে কোনও দাঁতের ব্যথা ফ্যান্টম টুথ পেন ভেবে, ফেলে না রাখাই ভাল। ব্যথা হলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কোয়েনা দাশগুপ্ত
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)