‘কাহন’ -এর শিল্পকর্ম। নিজস্ব চিত্র।
পেশা। তার বাইরে থাকে নেশা। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে অনেকেই এমন অনেক কিছু করেন, যা থেকে যায় ব্যক্তিগত পরিসরে। এই গোপনে রয়ে যাওয়া ‘অন্য আমি’কে সুপরিকল্পিত ভাবে তুলে ধরল ‘কাহন’।
কলকাতার বুকে গত ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে শিল্পের প্রদর্শনী। ‘কাহন’ নামে সেই প্রদর্শনীতেই তুলে ধরা হয়েছে বিজ্ঞাপনী জগতের সঙ্গে যুক্ত ৪৬ জনের সৃষ্টি। উদ্যোক্তা হলেন, সৌভিক পয়রা, জয় আইচ এবং যাদব সেন।
কোন ভাবনা কাজ করেছে এর পিছনে? সৌভিক জানালেন, এখানে যাঁদের শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে তাঁরা বিজ্ঞাপন জগতের লোকজন। কেউ ছবি তোলেন, কেউ জিঙ্গল তৈরি করেন, কেউ আবার আর্ট ডিরেক্টর। কাজের পরিসর বাদ দিলেও, তাঁদের মধ্যে যে সৃজনশীলতা, সেটাই তুলে ধরা হয়েছে এখানে।
প্রদর্শনীতে ঢোকার মুখেই চোখে পড়বে শৈল্পিক সাজসজ্জা। ভিতরে গেলে দেখা যাবে ফোটোগ্রাফি, হাতে আঁকা ছবি, ভাস্কর্য, কাঠের উপর অ্যাক্রিলিকের কাজ, কাগজের তৈরি মুখোশ। একটি ভাঙা দরজা দিয়েও যে এমন সুন্দর কারুকাজ সম্ভব, তা না দেখলে বোঝা যায় না। প্রতিটি ‘ইনস্টলেশন’-ই দৃষ্টিনন্দন। সৌভিক বললেন, ‘‘এত রকমের শিল্পকর্মকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসাটাই উদ্দেশ্য ছিল।’’
প্রদশর্নীর দ্বিতীয় দিনে গায়ক উপল সেনগুপ্তের পরিচালনায় তৈরি অ্যানিমেশন ছবি দেখানো হয়। ‘মরীচিকা’ নামে এই অ্যানিমেশন ছবিটি অবশ্য আগেই ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছিল। এ প্রসঙ্গে গায়ক বললেন, ‘‘অনেক দিন ধরেই ইচ্ছা ছিল অ্যানিমেশন ছবি বানানোর। কর্মক্ষেত্রে শুরুতে এ নিয়ে কাজ করেছিলাম। পরে গানের জগতে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় ওটা নিয়ে চর্চা করা হয়নি। কিছু দিন আগে সুযোগ এসে গেল।’’ ভবিষ্যতে গায়ককে কি অন্য ভূমিকায় দেখা যাবে? উপল বলছেন, ‘‘ভাবনা থাকলেও, স্বল্প দৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন ছবির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। আমার ছবি দেখে কেউ যদি উৎসাহিত হন, ভবিষ্যতে সুযোগ আসে, তখন নিশ্চই করা যাবে।’’
শনিবার আয়োজিত সঙ্গীত সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন সঙ্গীত পরিচালক প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রদর্শনীতে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ছবি দিয়ে একটি ফ্রেম তৈরি করা হয়েছিল। যার সামনে দিয়ে কেউ চলে গেলেই সুরধ্বনি শোনা যায়। সেই সুরটি তৈরি করেছিলেন প্রবুদ্ধ। তিনি বললেন, ‘‘বিজ্ঞাপনের লোকেরা ভাবেন, তাঁদের নেশা আর পেশা এক হয়ে গিয়েছে। এখানে সৃজনশীল মানুষেরা কাজ করেন। বিজ্ঞাপন জগতের কাজ সৃজনাত্বক হলেও, এখানে বিজ্ঞাপনী সংস্থার চাহিদাপূরণের দায় থাকে। কিন্তু ওই যে বাদ্যযন্ত্রের জন্য সুর তৈরি করা, সেখানে কোনও শর্ত নেই। এটা একটা ভাল লাগার জায়গা থেকে করা।’’ কাহনের বিশেষত্ব হল, বিজ্ঞাপন জগতের মানুষদের যে আরও একটি সৃজনশীল দিক রয়েছে, তারা সেটাকে তুলে ধরছে।
প্রদর্শনী চলবে, কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে ২৩ সেপ্টম্বর পর্যন্ত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy