Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
CIMA Art Gallery

CIMA Awards: ব্যাকরণ ভাঙতে ভয় নেই নতুন শিল্পীদের, তাঁদের সাহস উদ্‌যাপন করবে সিমা পুরস্কার

গোটা দেশের নানা প্রান্ত থেকে নতুন শিল্পীদের এক মঞ্চে নিয়ে আসে ‘সিমা পুরস্কার’। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হবে ১২ জন বিজয়ীর নাম।

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হবে ১২ জন বিজয়ীর নাম।

আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হবে ১২ জন বিজয়ীর নাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২২ ১৮:৪৮
Share: Save:

শিল্প এবং নতুন শিল্পীকে খুঁজে বার করে তাঁকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মঞ্চ জোগান দেওয়ার কাজটি নেহাত সহজ নয়। কিন্তু সেই কাজই নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে ‘সিমা আর্ট গ্যালারি’। গত কয়েক বছর ধরে নতুন শিল্পীদের কাজ উদ্‌যাপন করতে শুরু হয়েছে ‘সিমা পুরস্কার’ও। গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শিল্পীরা। তাঁদের মধ্যে থেকে বাছাই করে কিছু শিল্পীকে পুরস্কৃত করা হয় ‘সিমা’র পক্ষ থেকে। এ বারও ৫ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা হবে ১২জন বিজয়ীর নাম।

অতিমারিতে শিল্প খোঁজার কাজ আরও বেশি কঠিন হয়ে গিয়েছে। এই প্রতিযোগিতায় প্রথমে সারা দেশের শিল্পীদের যোগ দেওয়ার এবং তাঁদের কাজ পাঠানোর আবেদন জানানো হয়। কিন্তু দেশের অনেক দুর্গম এলাকা থেকে শিল্পকলা এসে পৌঁছানো মুশকিল হয়ে যায় এই অতিমারির সময়ে। হয়তো সেই কারণেই অন্য বারের তুলনায় এ বছর কিছু কম সংখ্যায় আবেদনপত্র জমা প়়ড়েছিল। তা-ও বাছাই করা ৯০০ জনের মধ্যে সেরা ১২ জনকে বেছে নেবেন বিচারকরা। তাঁদের মধ্যে রয়েছে পেন্টার, ভাস্কর, ফোটোশিল্পী, গ্রাফিক ডিজাইনার, ইলাসট্রেটরের মতো নানা ধরনের শিল্পীর কাজ। রয়েছে বেশ কিছু আর্ট ইনস্টলেশনও।

এই প্রতিযোগিতায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, সকলের বয়সই ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে।

এই প্রতিযোগিতায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, সকলের বয়সই ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে।

এত ধরনের শিল্পের মধ্যে সেরাদের বেছে নেওয়ার কাজ কতটা কঠিন? বিচারকদের সভায় রয়েছেন মোট আট জন শিল্পী। তাঁদের মধ্যে শ্রেয়সী চট্টোপাধ্যায় বুঝিয়ে বললেন, ‘‘গ্যালারির আলোয় সব কাজই এত সুন্দর করে সাজানো থাকে, তাতে প্রথমে ঢুকে সবই ভীষণ ভাল লাগে। তার পর খুঁটিয়ে দেখলে একটু একটু করে বোঝা যায়, কোনটা বেশি মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। তবে বিচার করার পদ্ধতি এখানে খুবই নিরপেক্ষ। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিক ভাবে কিছু কাজ বাছাই করে আমাদের সামনে রাখেন। শিল্পীর নাম বা তিনি কোন অঞ্চলের, আগের অভিজ্ঞতা কিছুই আমাদের বলা হয় না। সব তথ্য গোপন রাখায় আমাদের কোনও রকম পক্ষপাতিত্ব করার অবকাশও থাকে না। শুধু কাজ দেখে আমরা রায় দিতে পারি।’’

যে কোনও কঠিন সময় শিল্প-সৃষ্টির উৎস হয়ে ওঠে। তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এ বারের অনেক প্রতিযোগীর কাজে। বিছিন্নবাস, পরিবেশের উপর অতিমারির প্রভাব, পরিযায়ী শ্রমিকদের লড়াই সবই প্রতিফলিত হয়েছে নানা রকম কাজে। তবে সিমা গ্যালারির অধিকর্তা রাখী সরকারের কথায়, ‘‘সব শিল্পীর কাজে যে সরাসরি অতিমারির যোগ পাওয়া যাবে, তা নয়। অনেকে অন্য ভাবেও কাজ করেন। কিন্তু তাঁরা নতুন কোন মাধ্যমে কাজ করছেন, কোন টেকনিকে কাজ করছেন, কী ভাবে করছেন, তা খুঁটিয়ে দেখলেও কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ের প্রভাব বোঝা যায়। নতুন শিল্পীরা ব্যাকরণ ভাঙতে ভয় পান না। নিজের মতো কাজ করে যান।’’

৯০০ জনের মধ্যে সেরা ১২ জনকে বেছে নেবেন বিচারকরা।

৯০০ জনের মধ্যে সেরা ১২ জনকে বেছে নেবেন বিচারকরা।

মোট আট জন বিচারক। সেরার তালিকা বাছতে মতের অমিল হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। বিচার করা কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়? প্রশ্ন শুনে খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে বললেন বিচারক আর এম পালানিয়াপ্পান, ‘‘শিল্পের ভাল-খারাপ হয় না। হয় সেটা শিল্প, কিংবা তা নয়। এক জন শিল্পীর কাজে মাটির গন্ধ থাকবে, পাশাপাশি যুগের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার দৃঢ় লক্ষণও থাকবে। সব শেষে থাকবে কোনও এক বার্তা। সেই বার্তা বাকিদের কাছে ঠিকঠাক পৌঁছতে পারলে কিন্তু মতের অমিল তেমন হয় না।’’ একমত শিল্পী পরেশ মাইতিও। তিনি বললেন, ‘‘শুধু টেকনিক দেখে শিল্প বিচার করা সম্ভব নয়। টেকনিক অনেকই জানতে পারেন। কিন্তু তাতেই তাঁর কাজ শিল্প হয়ে দাঁড়ায় না। কাজের মাধ্যমে তিনি কী বলতে চাইছেন, সেটা যতটা পরিষ্কার হবে, ততই তার মান বাড়বে।’’

এই প্রতিযোগিতায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকের কাজ প্রদর্শন করা থাকবে ‘সিমা আর্ট গ্যালারি’ এবং ‘জেম সিনেমা’-এ। প্রদর্শনী চলবে গোটা ফেব্রুয়ারি মাস ধরে। আলো ঝলমলে গ্যালারির চেয়ে জেম সিনেমার পরিবেশে বিস্তর ফারাক। কোন শিল্প গ্যালারিতে থাকবে এবং কোনটি স্থান পাবে জেম সিনেমায়, তা গোটাটাই সাজিয়েছেন রাখী। কোনও শিল্পীর কাজ কেমন ভাবে এক জন দেখছেন, তা নির্ভর করে অনেকটাই পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর। বিচারক কিংশুক সরকার বললেন, ‘‘বাড়িতে ছোটবেলায় দেখতাম, অতিথি এলে বাজারের দায়িত্বে থাকতেন বাবা। কিন্তু বাজার থেকে সেরা জিনিস কিনে আনার পর সেগুলি দিয়ে কী কী রান্না হবে এবং তা কেমন ভাবে পরিবেশন করা হবে, সেই দায়িত্ব ছিল মায়ের। অনেক সময়েই দেখা যেত, শুধু মাত্র আয়োজনের গুণেই অতিথিরা হয়তো অন্য কোনও বাড়ির চেয়ে আমাদের বাড়ির ভোজ খেয়ে বেশি খুশি হতেন। আর্ট কিউরেশনের কাজটি ঠিক তেমনই। গোটা দেশের শিল্পীদের কাজ যেন সেরা পরিবেশে তুলে ধরা যায়, সেই ভূমিকাই পালন করে সিমা।’’

 গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শিল্পীরা।

গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন শিল্পীরা।

যে দেশে শিল্পকে পেশা করার কথা এখনও অনেক বাবা-মা সহজে মেনে নিতে পারেন না, সেখানে এই ধরনের পুরস্কার কতটা গুরুত্বপূর্ণ? কম বয়সি নতুন প্রতিভাদের উৎসাহ জোগানোর জন্য এই ধরনের পুরস্কার খুবই জরুরি মনে মনে করেন বিচারকদের সকলেই। তার উপর সেরার উপহার যখন পাঁচ লক্ষ টাকা, তখন সেটা তাঁদের পরিবারের স্বীকৃতি পাওয়ার জন্যেও যথেষ্ট। বিচারকের আসনে এই প্রথম এসেছেন গোয়েথে ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা অ্যাস্ট্রিড ওয়েজ। তিনি এ বিষয়ে যোগ করলেন, ‘‘এই পুরস্কার শুধু যাঁরা অংশ নিচ্ছেন তাঁদের জন্যই নয়, তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্যেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রতিযোগিতায় যাঁরা অংশ নিয়েছেন, সকলের বয়সই ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে। তাঁদের কাজ স্বীকৃতি পেলে কনিষ্ঠরাও উৎসাহ পাবেন। কোন পথে এগোলে তাঁরা উন্নতি করতে পারবেন, তার একটি আধারও পাবেন। সেটাই বা কম কী!’’

অন্য বিষয়গুলি:

CIMA Art Gallery Kolkata Arts
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy