পেশী ও গাঁটে গাঁটে ব্যথা হঠাৎ শুরু হয়ে দিন কয়েকে না কমলে সতর্ক হোন। ছবি: শাটারস্টক।
লাগাতার লক ডাউন আর নভেল করোনা ভাইরাস— কেউই ব্যথাকে ভয় দেখিয়ে জব্দ করতে পারেনি। বরং নাগাড়ে বাড়িতে থেকে ভাল-মন্দ খেয়ে শরীর আরও ভারী হয়েছে। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ঠেলায় ঘাড়ে-কোমরে আর পিঠে ব্যথা বেড়েছে। ছোটদেরও রেহাই নেই ব্যথার কবল থেকে। দিনরাত অনলাইনে পড়াশোনা করে, ভিডিয়ো গেম খেলে আর টিভিতে কার্টুন দেখে ওজন বাড়াচ্ছে আর ঘাড়, পিঠ মাথার ব্যথায় নট নড়নচড়ন হয়ে বসে আছে।
ছোট থেকে বয়স্ক—বেশির ভাগ মানুষ এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যথায় কাতর। অন্য দিকে যাঁরা নিয়মিত কিছু আসন ও শরীরচর্চা করেন, তাঁরা দিব্যি আছেন। স্পাইন সার্জন সৈকত সরকার জানালেন, ব্যথা-বেদনার ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে থাকলে ব্যথা বাড়ে বই কমে না।
অনেক আগে ধারণা ছিল, ব্যথা হলে চুপচাপ শুয়ে বা বসে না থাকলে ব্যথা বেড়ে যায়। হাড় ভাঙা, স্লিপ ডিস্ক-সহ কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া পুরনো এই ভাবনা এখন বাতিল, বললেন সৈকতবাবু।
আরও পড়ুন:‘হার্ড ইমিউনিটি’ গড়ে উঠতে আর কত দিন, ভ্যাকসিনই বা কবে?
অক্সিজেন যুক্ত রক্ত চলাচলের অভাবে পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়লে ব্যথা বাড়ে। নড়াচড়া না করে চুপচাপ শুয়ে বসে থাকলে ব্যথার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বরং যত বেশি চলাফেরা করবেন, ব্যায়াম করবেন, ততই রক্ত চলাচল বাড়বে, ব্যথার কষ্ট কমবে। প্রত্যেক দিন কিছুক্ষণ শরীরচর্চা ও নিয়ম করে হাঁটাহাঁটি করলে রক্ত চলাচলের গতি বেড়ে গিয়ে ব্যথার কষ্ট থেকে রেহাই পাওয়া যায়, বললেন সৈকতবাবু।
অল্প ব্যথা অগ্রাহ্য করলে পরে ভোগান্তির মাত্রা বাড়ে। ছবি: শাটারস্টক
আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথার কারণ একদিকে ভুল ভঙ্গিমা আর অন্যদিকে বাড়তি ওজন ও সঠিক পুষ্টিকর খাবারের অভাব। কিছু জন্মগত ও গঠনগত ত্রুটি এবং নার্ভের সমস্যার ফলে ঘাড়, পিঠ, কোমর-সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যথার ঝুঁকি থাকে। তবে ব্যথা বলে কি বেরনো একেবারেই বন্ধ করলে চলে? একটু চেষ্টা করলে পুজোর আগেই ব্যথামুক্ত হতে পারেন।
ঘাড়, পিঠ বা কোমরের ব্যথার মূলে আছে শরীরচর্চার অভাব আর বেঁকেচুরে সোফায় বসে নাগাড়ে টিভি দেখা, ঘাড় গুঁজে মোবাইল বা ল্যাপটপে গেম খেলা বা কাজ করা। কম্পিউটার বা ল্যাপটপের মনিটর সঠিক দূরত্বে এবং নির্দিষ্ট উচ্চতায় না থাকলে ঘাড়, কাঁধ আর পিঠের ব্যথার ঝুঁকি খুব বেশি। তার সঙ্গে সামনে ঝুঁকে ভারী জিনিস তোলার মতো ভুল ভঙ্গিমার কাজকর্মও ব্যথা বাড়ায়।
কী মাথায় রাখতে হবে
•এখন থেকেই যদি সচেতন হয়ে নিয়ম করে সকালে সন্ধ্যায় হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
•কয়েকটি ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন, সর্বোপরি মেরুদণ্ডের সংলগ্ন পেশিকে সচল রাখতে নিয়ম করে কিছু যোগাসন করতেই হবে।
•যাঁদের ঘাড়ে, কোমরে, হাঁটুতে বা পিঠে খুব ব্যথা, তাঁরা একবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক চিকিৎসা, ফিজিওথেরাপি ও আসন করা শুরু করুন।
•দরকার হলে হাঁটার সময় হাঁটুতে নি-ক্যাপ, কোমরে বেল্ট বা ঘাড়ে কলার পরতে পারেন। তবে রাস্তায় হাঁটাচলার সময় পরলেও রাত দিন এইসব কলার বা বেল্ট পরে থাকলে পেশি ক্রমশ অলস হয়ে পড়ে। ফলে ব্যথার প্রকোপ বাড়তে পারে।
•পেটের পেশি বা অ্যাবডোমিনাল মাসল দুর্বল হয়ে গেলে পিঠের ব্যথার কষ্ট বেড়ে যায়। তাই নিয়ম করে পেটের ব্যায়াম করতে হবে।
আরও পড়ুন:স্বাদ-গন্ধের অনুভূতি নেই মানেই কি করোনা, কী বলছেন চিকিৎসকরা
পেটের পেশি মজবুত করলে পিঠের ব্যথার কষ্ট পেতে হবে না। কোমরের ব্যথা ও হাঁটুর ব্যথায় যেটুকু সহ্য হয়, সেটুকুই হাঁটুন। সমান জায়গায় হাঁটা-চলা করা যেতে পারে। বেশি বয়সে অস্টিওপোরোসিসের কারণে ব্যথা হলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করা উচিত নয়। ব্যথা হলে নিজে থেকেই ব্যথার ওষুধ কিনে খেলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাই সমস্যা হলে কোভিড-এর ভয়ে নিজেরা ডাক্তারি না করে সঠিক চিকিৎসা করিয়ে ব্যথামুক্ত থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy