ইন্টারনেট ও মোবাইল— নয়া প্রজন্মের এই দুই অপরিহার্য জিনিসকে হাতিয়ার করে বিশ্ব জুড়ে বিনোদনের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে ইউটিউব। ছবি: সংগৃহীত।
সমাজমাধ্যম এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত হাতের মুঠোয় ফোন নিয়ে সারা ক্ষণ চলতে থাকে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক আর টুইটার। আড্ডা-প্রেম, কান্না-হাসি-অভিমান, সবটাই এখন সমাজমাধ্যমে খোলামেলা! বয়স আঠারো হোক বা আশি— সমাজমাধ্যমের নেশায় বুঁদ সকলেই।
সমাজমাধ্যমের এই যুগে নতুন পেশার হাতছানি অনেক! অল্পবসয়িদের দেখা যাচ্ছে রাস্তায় রাস্তায় হাতে ফোন নিয়ে ভিডিয়ো করতে। বছর খানেক আগেও এমন দৃশ্য চোখে পড়লে দু’বার ঘুরে তাকাতেন মানুষজন। তবে এখন শহরবাসীর কাছে এই ছবি খুবই পরিচিত। কেউ চাকরি করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উপর্জনের আসায় সমাজমাধ্যম সম্পর্কিত নানা পেশায় যোগ দিচ্ছেন। কেউ আবার ব্যবসা কিংবা চাকরি নয়, সমাজমাধ্যম ক্ষেত্রেই কাজের পরিসরের খোঁজ করছেন। চাকরির পাশাপাশি একটু সময় বার করে বাড়তি উপার্জন করতে চান? চাই শুধু একটা ফোন, আর অনেকটা ধৈর্য!
কী কী নতুন পেশা গজিয়ে উঠেছে
১। ইউটিউবার
অফিসের কাজের ফাঁকে হোক কিংবা অবসর সময়, ইউটিউব দেখেই সময় কাটছে অনেকেরই। ইন্টারনেট ও মোবাইল— নয়া প্রজন্মের এই দুই অপরিহার্য জিনিসকে হাতিয়ার করে বিশ্ব জুড়ে বিনোদনের সংজ্ঞাই বদলে দিয়েছে ইউটিউব। ক্রমশ লাফিয়ে বাড়ছে ইউটিউবের দর্শকসংখ্যা। শুধু দর্শক হিসাবেই নয়, নতুন প্রজন্ম ইউটিউবকে উপার্জনের মাধ্যম হিসাবেও ব্যবহার করছে। এখন অনেকেই অন্য পেশা ছেড়ে ইউটিউবার হতে চান। নিজস্ব একটি ইউটিউব চ্যানেল শুরু করেন। সেখানেই বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক ভিডিয়ো পোস্ট করেন। খাবার, ফ্যাশন, কৌতুক, শিক্ষামূলক— আপনার আগ্রহ আছে এমন বিষয় খুঁজে নিয়ে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেললেই কেল্লাফতে! সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা যত বাড়বে, ততই বাড়বে উপার্জন। মূলত বিজ্ঞাপন আর ব্র্যান্ডের বিনিয়োগ থেকেই উপার্জন করা হয় ইউটিউবে।
২। সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
তারকা হোক কিংবা বড় ইউটিউবার, সকলের মুখে মুখে এখন নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারের নাম। সকলেই এখন সমাজমাধ্যেমের প্রচারের আলোয় থাকতে চান! আর এই কাজে তাঁদের সাহায্য করেন সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা। কোন ধরনের কনটেন্ট বেশি লোক পছন্দ করছেন, একটা পোস্ট কী ভাবে বুস্ট করবেন, সবটাই দেখভালের দায়িত্বে থাকেন এঁরা। কন্টেট তৈরি করলেই তো আর হল না, সেই কন্টটেন্ট থেকে কী ভাবে অর্থ উপর্জন করা যাবে, সেই নিয়েই যাবতীয় কাজ সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে এখন এই পেশার বেশ ভালই রমরমা!
৩। ব্লগার
সাজগোজ করতে ভালবাসেন? খেতে ভালবাসেন? তা হলে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্লগার হয়েও উপার্জনের সুযোগ রয়েছে আপনার। সমাজমাধ্যমে ফ্যাশন, ফুড কিংবা ট্রাভেল ব্লগ লিখে অনেকেই বেশ পরিচিতি পাচ্ছেন। পছন্দের ক্ষেত্র বাছাই করে আপনিও ব্লগিং শুরু করতে পারেন। কেবল লেখালিখি করেই নয়, ভিডিয়োর মাধ্যমেও আপনি ব্লগিং করতে পারেন। সমাজমাধ্যমে এখন ভ্লগারদেরও বেশ রমরমা! ভিডিয়ো শুট, এডিটিং থেকে আপলোডিং— একা হাতে করতে হবে সবটা! খেতে ভালবাসলেই হল না, শুটিং, এডিটিংয়ের কাজেও হতে হবে দক্ষ। স্ক্রিপ্ট, এডিটিং ও কনটেন্ট সবটা ভাল হলে তবেই আপনার ভিডিয়ো মন জয় করবে দর্শকের।
৪। ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটার
সারা দিন আপনি কী কী করছেন সেটাই ক্যামেরাবন্দি করে আপনি হতে পারেন ডিজিটিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটার। সমাজমাধ্যমে যে কোনও বিষয়ে কনটেন্ট তৈরি করে তার প্রচার করাই ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েটারের কাজ। সেটা বলিউডের গানের সঙ্গে লিপসিঙ্ক করেই হোক, নাচের ভিডিয়ো বানিয়ে হোক বা কমেডি স্কিট করেই হোক। এখন এই কাজ করেই অর্থ উপার্জন করছেন অনেকে। হাতে খুব বেশি সময় না থাকলেও চিন্তা নেই। শর্ট ভিডিয়ো কিংবা রিল বানিয়েও এখন প্রচারের আলোয় থাকছেন অনেকে।
৫। এসইও এক্সপার্ট
সমাজমাধ্যমে কনটেন্ট বানালেই হল না, সেই কনটেন্ট যদি বেশি করে লোকজনের কাছে পৌঁছতে না পারে, তা হলে আপনার সমস্ত খাটনিই হবে বৃথা। আপনার কনটেন্টগুলি কী ভাবে বেশি মানুষের কাছে পৌঁছবে (আলাদা করে টাকা দিয়ে বুস্ট না করিয়ে), সেই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে এক জন এসইও এক্সপার্ট। এসইও মানে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন। যাতে যে কোনও সার্চ ইঞ্জিনে আপনার কনটেন্টগুলো উপরের দিকে থাকে, সে বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারেন এই পেশাদাররা। যত উপরে আপনার কনটেন্ট থাকবে, পাঠকরা তত বেশি ক্লিক করবেন। এই পেশায় যেতে হলে মানুষ কী ভাবে কোনও বিষয়ে সার্চ করেন, বা কোন বিষয়গুলি কখন বেশি সার্চ করেন, সবই নখদর্পণে রাখতে হয়। কী বিষয় এখন ইন্টারনেটে ট্রেন্ডিং, কোন বিষয় ভ্লগ করলে বেশি রিচ হবে, ভ্লগের হেডলাইনে কী ধরনের কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করবেন, তার হদিস দেওয়ার কাজ করেন এসইও এক্সপার্ট। টাকা ছাড়াই সমাজমাধ্যমে কনটেন্টের রিচ বাড়ানোর ফিকির জানান এসইও এক্সপার্ট।
৬) ডিজিটাল মার্কেটিং
বিভিন্ন সংস্থায় এখন ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য দক্ষ লোক রাখা হয়। সমাজমাধ্যমে সংস্থার প্রচার কিংবা ডি়জিটাল মাধ্যমে আপনার কোনও চ্যানেল কিংবা পেজ কী ভাবে আরও বেশি পরিচিতি পাবে, সেই কাজটাই দেখাশোনা করা হয় মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে। ডিজিটাল মাধ্যমে মূল উপার্জনই হয় বি়জ্ঞাপন থেকে। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি থেকে সরাসরিও টাকা পাওয়া যায় বটে, তবে বিজ্ঞাপনের তুলনায় সেই অঙ্কটা খুবই কম। সমাজমাধ্যম ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনের জন্য ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়টিতে নজর দিতেই হবে। আর এই ক্ষেত্রে চাকরি পেতে হলে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর কোর্স করতে পারেন। যে কোনও সংস্থার ব্র্যান্ড তৈরি করতে এখন সমাজমাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে কোন ধরনের ক্যাম্পেন চালানো যায়, কী ভাবে অনুরাগীদের সঙ্গে বেশি সংযোগ তৈরি করা যায়, তা বাতলে দেন ডিজিটাল মার্কেটররা।
সমাজমাধ্যমে কাজ করা মানেই প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যাবে— বিষয়টা কিন্তু মোটেই তেমন নয়। এই পেশায় পরিচতি লাভ ও অর্থ উপার্জন দুই করা যেতে পারে, তবে রাতারাতি তা সম্ভব নয়। পেশার প্রতি ভালবাসা আর ধৈর্য থাকলেই এই সব পেশার দিকে পা বাড়ানো যেতে পারে। নইলে নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy