ই বয়সে গর্ভধারণে কি ঝুঁকি রয়েছে?
একটা সময় ছিল যখন ভাবা হত, কুড়ির কোঠাই মাতৃত্বের জন্য সেরা সময়। ধীরে ধীরে সে পরিধি বড় হয়েছে। কেরিয়ার, চাকরি সব সামলে মা হওয়ার বয়স স্বাভাবিক ভাবেই পিছিয়েছে। তিরিশ, মধ্য তিরিশেও যে মা হতে বাধা নেই, মহিলারা তা বুঝেছেন। এখন অবশ্য বহু মহিলাই চল্লিশ বছর বয়সে বা তার পরেও মা হচ্ছেন। সম্প্রতি করিনা কপূর খানও দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন চল্লিশে। কিন্তু এই বয়সে গর্ভধারণে কি ঝুঁকি রয়েছে?
অ্যাডভান্সড ল্যাপরোস্কোপিক সার্জন অ্যান্ড ইনফার্টিলিটি স্পেশ্যালিস্ট ডা. অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, এই বয়সে প্রেগন্যান্ট হলে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। ‘‘বয়সজনিত কারণে এই সময়ে মাতৃত্বে মা ও সন্তানের ক্ষেত্রে কয়েকটি ঝুঁকি রয়ে যায়, যা নির্ভর করে মায়ের শারীরিক অবস্থার উপরে। তিনি আগে মা হয়েছেন কি না এবং তাঁর কোনও মেডিক্যাল হিস্ট্রি রয়েছে কি না, সেটিও এ ক্ষেত্রে বিবেচ্য। যেমন, মায়ের ভেনাস থ্রম্বোসিস (রক্ত জমাট বাঁধা), জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন ইত্যাদি রয়েছে কি না দেখতে হবে। সদ্যজাতর ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা হল, প্রিম্যাচিয়োর বার্থ, ডাউন সিনড্রোম, লো বার্থ ওয়েট ইত্যাদি।’’
গর্ভধারণের আগে
প্রেগন্যান্ট হওয়ার আগে চিকিৎসকের কাছে গেলে প্রথম থেকেই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা হয়, যাতে মা ও শিশু সুস্থ থাকে। থ্যালাসেমিয়া টেস্ট করানো হয়, রুবেলা ইমিউনিটি না থাকলে তার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। নিয়মিত ফলিক অ্যাসিড খেতে দেওয়া হয়। ধূমপান সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এবং ওজন বেশি হলে অবশ্যই তাকে কমাতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সোনোগ্রাফিও করাতে হবে নিয়মিত ভাবে। ডা. চট্টোপাধ্যায় আরও জানালেন, ৩৯ পার করে গেলেই সেই মহিলার রক্তের এনআইপিটি টেস্ট করে নেওয়া হয়। তাতেই ৯৯ শতাংশ বলে দেওয়া যায় বাচ্চাটির ডাউন সিনড্রোম রয়েছে কি না। মায়ের বয়স চল্লিশ হয়ে গেলে একশো জনের মধ্যে একজনের বাচ্চার ডাউন সিনড্রোম দেখা দিতে পারে। বয়স পঁয়তাল্লিশ হয়ে গেলে সেই অনুপাত দাঁড়ায় পঁচিশ জনের মধ্যে একজন। এ ছাড়াও প্রেশার, সুগার ইত্যাদিও পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া হয়, কারণ তিরিশ বছর পেরিয়ে গেলেই উচ্চ রক্তচাপ, ব্লাড সুগারের একটা প্রবণতা থাকে। তাই প্রথমেই তা নিয়ন্ত্রণে আনা জরুরি। প্রেগন্যান্সির ষোলো বা আঠেরোতম সপ্তাহে ইউটেরিন আর্টেরি ডপলার করলে বোঝা যায়, পেশেন্টের প্রেশার হবে কি না। যদি সে প্রবণতা দেখা যায়, তখন ওষুধ দেওয়া হলে সাধারণত প্রেশার বাড়ে না। সুগারের ক্ষেত্রেও গ্লুকোজ় টলারেন্স টেস্ট করিয়ে দেখে নেওয়া হয়। সেই মতো ডায়েট এবং এক্সারসাইজ়ের পরামর্শ দেওয়া হয়। তাতে সুগার কন্ট্রোলে থাকে এবং বাচ্চা বেশি বড় হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তবে এ সবের সঙ্গে পেশেন্টকে এটা বোঝানোও জরুরি যে, গর্ভাবস্থায় গোড়ার দিকে না হলেও পরের দিকে তাঁদের প্রেশার বাড়তে পারে এবং জেস্টেশনাল ডায়াবিটিস হতে পারে। তাই প্রেগন্যান্সিকে ভাল করে পর্যবেক্ষণে রাখা খুব দরকার।
নর্মাল নাকি সি সেকশন?
এই বয়সে মা হলে কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে এবং ডেলিভারি সাধারণত একটু আগে হয়। তাই সিজার করাটাই এ ক্ষেত্রে নিরাপদ উপায়। তবে সব কিছু ঠিক থাকলে নর্মাল ডেলিভারির দিকেও এগোনো যেতে পারে বলে মনে করেন ডা. চট্টোপাধ্যায়। তিনি বললেন, ‘‘নর্মাল ডেলিভারির জন্য শারীরিক ভাবে ফিট হওয়াটা জরুরি। তবে লেবার পেন নিতে পারেন না অনেকেই। চল্লিশ এবং তার বেশি হয়ে গেলেই সেটা হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি। এই বয়সে নর্মাল ডেলিভারি হলে পরবর্তীতে মল ধরে রাখতে অসুবিধে, পেলভিক ফ্লোরে উইকনেসের মতো সমস্যা হতে পারে। তবে নিয়ম মেনে চললে চল্লিশে মা হওয়ায় সমস্যা হয় না।’’
যমজ সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা কি বেশি?
চল্লিশের পরে অনেকেই মা হন চিকিৎসার পরে। ওভুলেশন ইনডাকশন বা ফলিকিউলোমেট্রির পরে সন্তান হয় বলে যমজ সন্তান হতে পারে। চিকিৎসা করে বাচ্চা নিলে অনেক সময়ে টুইন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে মা হলে সে সম্ভাবনা থাকে না।
খাওয়াদাওয়া, শারীরচর্চায় বাড়তি গুরুত্ব প্রয়োজন?
এ সময়ে সুষম আহার খুব জরুরি। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ভিটামিন যথাযথ পরিমাণে খেতে হবে। যদি কারও জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস হয়, তখন তাঁকে ডায়াবেটিক ডায়েটে রাখা হয়। আম, লিচু, কলা, আঙুর, মাটির তলার আনাজ বাদ পড়ে খাদ্যতালিকা থেকে। চলবে না চিনিও । সকালে, দুপুরে ও রাতে খাওয়ার পরে ১৫-২০ মিনিট হাঁটা জরুরি। সেই সঙ্গে ডাক্তার এবং ফিটনেস বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ব্যায়াম করা যেতে পারে।
বেডরেস্টে থাকতে হবে?
এমনিতে তার কোনও প্রয়োজন নেই। হবু মা তাঁর স্বাভাবিক কাজকর্ম, অফিসে যাওয়া সবই করতে পারেন। দু’টি কারণে বেড রেস্টের প্রয়োজন হয়। স্পটিং, ব্লিডিং বা পেটে সিভিয়ার ক্র্যাম্প হলে কিংবা আগে জল ভেঙে গেলে, বেড রেস্টের পরামর্শ দেওয়া হয়।
তাই চল্লিশ পেরিয়ে গেলেও ভয় নয়। মাতৃত্বকে সাদর আমন্ত্রণ জানান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy