ভাতের হোটেলে এখনও কি মিলছে টোম্যাটোর চাটনি? ছবি: স্ট্রিটফুড অনলাইন।
টোম্যাটোর দাম নিয়ে চিন্তা ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে গৃহস্থের। গগনচুম্বী দামের জেরে হেঁশেলে ক্রমশ কমছে টোম্যাটোর ব্যবহার। এ বার পাইকারি বাজারের আশঙ্কা, আগামী দিনে ৩০০ টাকা ছুঁতে পারে ‘লাল সোনা’র দাম। এমন লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধির কারণ হিসাবে টোম্যাটো উৎপাদনকারী রাজ্যগুলিতে অতিবৃষ্টির দোহাই দেওয়া হচ্ছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ, শহরের বিভিন্ন বাজারে টোম্যাটো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে। কেবল গৃহস্থের নয়, টোম্যাটোর আকাশছোঁয়া দাম চিন্তার ভাঁজ ফেলছে রাস্তার ধারের খাবারের স্টল মালিকদের কপালেও।
চাঁদনী চক মেট্রো স্টেশনের কাছে এলআইসি গলিতে তখন অফিসকর্মীদের চরম ব্যস্ততা। রাস্তার ধারে সারি সারি খাবার দোকানের সামনে অফিসকর্মীদের লম্বা লাইন। কেউ গলা ফাটাচ্ছেন খিচুড়ির জন্য, কেউ আবার মাছের ঝোল আর ভাতের খোঁজ করছেন। সাবওয়ে, ম্যাকডোনাল্ডসের মতো ফুড চেনগুলির খাবারে ইতিমধ্যেই টোম্যোটোর আকাল চোখে পড়ছে। বার্গার, স্যান্ডউইচে অমিল ‘লাল সোনা’। তবে কি ভাতের হোটেলগুলিতেও রান্নার নানা পদে ব্রাত্য হচ্ছে টোম্যাটো? ভাতের হোটেলের মালিক অশোক মাহাতোর দোকানে তখন বিক্রি হচ্ছে কাতলার কালিয়া, পারশের ঝাল। দেখতে বেশ লোভনীয় বটে। ঝোলের লাল রংটা কি টোম্যাটো দিয়ে এনেছেন? অশোক বললেন, ‘‘আদা-জিরে বাটা আর টোম্যাটো ভাল করে কষিয়ে নিলেই তো মাছের ঝোলের এমন রং আসে।’’ টোম্যাটোর এত দাম, এখনও রান্নায় ব্যবহার করছেন কী করে? দাম বাড়িয়েছেন নাকি? অশোক বললেন, ‘‘রাস্তায় খাবারের এত দোকান। এক দিন খাবারের স্বাদ ভাল না হলেই ক্রেতারা অন্য দোকানে চলে যাবেন। তাই দাম বাড়লেও খাবারের স্বাদের সঙ্গে আপস করতে পারব না আমরা। তাই দাম বাড়লেও টোম্যাটো দিই রান্নায়। তবে হ্যাঁ, আগের মতো পরিমাণে নয়, অল্প করে ব্যবহার করতে হয়।’’
ডালহৌসি চত্বরের একটি ভাতের দোকানের মালিক লোটন সাউ। ক্রেতার পাতে গরম ভাত দিতে দিতে বললেন, ‘‘আগে দিনে ২ কিলো টোম্যাটো আনলে এখন ৫০০ গ্রাম আনি। তাতেই সারতে হয় সারা দিনের রান্না। আগে রান্নায় যে হারে টোম্যাটোর ব্যবহার করতাম এখন তা করতে পারি না। অনেক ভেবেচিন্তে ব্যবহার করতে হয়। দাম বাড়ালে তো বিক্রি কমবে।’’
বিবাদী বাগের যে খিচুড়ির দোকানে আগে গরমাগরম খিচুড়ির সঙ্গে পাঁপড়, আলু মাখা, বেগুনি আর টোম্যাটোর চাটনি পরিবেশন করা হত, সেখানকার ছবিটা কেমন? এখনও কি চাটনি দিচ্ছেন দোকানদার? চাটনি এখনও দেওয়া হচ্ছে, তবে ৪০ টাকার খিচু়ড়ির সঙ্গে আর টোম্যাটোর চাটনি বিনামূল্যে দিতে পারছেন না। টোম্যাটোর চাটনির বদলে দেওয়া হচ্ছে আমের চাটনি।
ধর্মতলার দোকানগুলিতে দোসার পুরেও টোম্যাটো অমিল, বিট-গাজরের ছড়াছড়ি। ক্যামাক স্ট্রিটের এক পাউভাজি বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, টোম্যাটো নয়, সব্জির স্বাদ বাড়াতে এখন তাঁরা আমচুর গুঁড়ো, লেবুর রস বেশি ব্যবহার করছেন। আলুকাবলির ঠেলাতে কিন্তু আর টোম্যাটোর দেখা নেই। তেঁতুল, কাঁচা আম দিয়েই স্বাদ বৃদ্ধি করছেন বিক্রেতা।
বড় বড় ফুড চেনগুলি টোম্যাটোকে একেবারে ব্রাত্য করে দিলেও ফুটের ধারে দোকানগুলির বিভিন্ন রান্নার পদে অল্প হলেও টোম্যাটোর দেখা পাওয়া যাচ্ছে। তবে আরও দাম বাড়লে কী করবেন বিক্রেতারা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন সকলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy