মেঘলা সাজতে খুব ভালবাসে। রোজ রোজ ফাউন্ডেশন, লিপস্টিক, লাইনার, আইশ্যাডো তাকে সাজাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বিনিময়ে কি আস্তে আস্তে প্রাকৃতিক জেল্লা কেড়ে নিচ্ছে সে সব কৃত্রিম প্রসাধনী? এই প্রশ্নই ইদানীং কুরে কুরে খাচ্ছে মেঘলাকে।
কিন্তু রূপবিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করছেন, প্রায়শই প্রসাধন ব্যবহারেও ত্বকের ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই মেকআপের কুপ্রভাব দেখা যায়। তার মোদ্দা কারণ দু’টি। প্রথমত, ত্বকের ধরন বুঝে প্রসাধন সামগ্রী তাঁরা ব্যবহার করেন না। দ্বিতীয়ত, দিনের শেষে মেকআপ ঠিক মতো তোলাও হয় না। মেকআপ কেনা, তার ব্যবহার ও প্রসাধনের পরে পরিচর্যার কিছু কায়দা মনে রাখলে এই সব সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব।
কী ভাবে ক্ষতি, কোথায় ক্ষতি
মেকআপে যদি রাসায়নিক রঞ্জক বেশি মাত্রায় থাকে, তবে তাতে জীবাণু মিশতে পারে। এই ধরনের মেকআপ ত্বকে বেশিক্ষণ থাকলে র্যাশ, ব্রণ বার হয়। ত্বকের নতুন কোষ তৈরি হতেও বাধা পায়। তখনই চামড়া স্থিতিস্থাপকতা হারায়, তাতে বলিরেখা পড়ে। সবচেয়ে আগে ভাঁজ পড়ে চোখের চার পাশে। চেহারায় বয়সের ছাপ আসে। আর কোনও ভাবে যদি মেকআপের অবশিষ্ট ত্বকে থেকে যায়, তবে তা রোমকূপের মুখ আটকে দেয়। ওই ছিদ্রে ব্যাকটিরিয়া জন্মায়। ফলে ছিদ্র বড় হতে থাকে। তখনই ত্বকে গর্ত দেখা দেয়। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতাও নষ্ট হয়। ত্বক নিষ্প্রাণ, বয়স্ক দেখায়। নিম্ন মানের কাজল, আইলাইনার ভুল ভাবে ব্যবহার করলে চোখে সংক্রমণও হতে পারে। চোখ চুলকায়, জ্বালা করে, লাল হয়। দৃষ্টিশক্তিও দুর্বল হতে শুরু করে। তাই চোখের মেকআপ নির্বাচনের সময়ে সাবধানতা বিশেষ জরুরি।
সারা দিন ঠোঁটে লিপস্টিক লাগিয়ে রাখেন? লিপকালার ত্রুটিপূর্ণ হলে ঠোঁটের স্বাভাবিক রং চলে যেতে পারে। তখন ঠোঁট শুকিয়ে ছাল ওঠে, কালচে ছোপও দেখা দেয়।
সাবধান!
কোনও মেকআপে আপনার ত্বক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করলে কয়েকটি লক্ষণ মারফত তা জানান দেয়। কোনও প্রডাক্ট ব্যবহারের পরে হঠাৎ ক্লান্তি বোধ, চোখে জ্বলুনি, ঘুম পাওয়া মানে তা আপনার সহ্য হচ্ছে না। গাল কুটকুট করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই র্যাশ বেরোতে পারে। মাথা ধরছে মানে এই প্রডাক্টে বেশি রাসায়নিক রয়েছে বা আপনি অতিরিক্ত মেকআপ করেছেন। এই লক্ষণ দূর না হলে প্রাথমিক ভাবে জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে নিন। তবে অন্য মেকআপ দিয়ে তা ঢাকার চেষ্টা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
প্রসাধন নির্বাচনের নিয়মাবলি
ভাল গুণমানের প্রডাক্টে এমন উপাদান থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্যরক্ষা করে, সজীব রাখে, দ্যুতি বাড়ায়। তাই খুব উন্নত মানের প্রডাক্ট বাছলে ত্বক ভাল থাকবে। তবে শখ বা পেশার প্রয়োজনে রোজ মেকআপ করতে হলে, ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন। আপনার ত্বকের ধরনে কোন কোন প্রসাধনী উপযুক্ত, সে বিষয়ে ত্বকবিশেষজ্ঞ গাইড করে দেবেন। তৈলাক্ত, শুষ্ক ও মিশ্র ত্বকের প্রসাধন সামগ্রী এক হবে না। অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলেও সংবেদনশীল ত্বকের উপযুক্ত সামগ্রী কিনতে হবে। কোনও প্রডাক্টে কৃত্রিম রঞ্জক, ল্যানোলিন বা মিনারেল অয়েল থাকলে, তা এড়িয়ে চলুন।
অন্য দিকে মিনারেলসমৃদ্ধ মেকআপ বেছে নেওয়া ভাল। কারণ এই ধরনের প্রসাধনী ত্বকে আটকে না থেকে তার উপরের পরতে আলগা লেগে থাকে। ফলে রোমকূপ বন্ধ হয় না। আবার পরিবেশের ক্ষতিকর পদার্থগুলি ত্বকে ঢুকতে বা মেকআপে মিশতেও বাধা দেয়।
মেকআপের স্বাস্থ্যকর অভ্যেস
স্ক্রাব করে, দু’বার মুখ ধুয়ে তবে মেকআপ শুরু করুন। এতে কোনও ময়লা মেকআপে মিশে বিক্রিয়া হওয়ার সুযোগ থাকবে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মেকআপ তোলার বিষয়টি। ঘরে ফিরে যতই ক্লান্ত লাগুক, মেকআপ ভাল ভাবে ধুয়ে তুলে ফেলুন। প্রথমে মেকআপ রিমুভার দিয়ে সমস্ত প্রসাধনী পরিষ্কার করে নিন। চোখের অংশ সুইট আমন্ড অয়েল দিয়ে মুছে নিন। তার পরে ক্লেনজ়ার দিয়ে মুখ ধুয়ে হালকা ময়শ্চারাইজ়ার লাগান। মেকআপ ঠিক করে না তোলার জন্যই ত্বকে বেশির ভাগ সমস্যা হয়। মেকআপ না তুলে ভুলেও ঘুমোতে যাবেন না। এতে রোমকূপের মুখ বুজে গিয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। বালিশের ময়লার সঙ্গে মেকআপ, ত্বকের মৃত কোষ মিশে ত্বকের দফরফা নিশ্চিত।
মেকআপ ব্রাশগুলিও সাফসুতরো রাখুন। এগুলিতে আগের দিনের ব্লাশ, গ্লিটার বা পাউডার লেগে থাকলে পরের দিন তা ব্যবহার করবেন না। প্রত্যেক বার মেকআপের পরে পরিষ্কার তুলো দিয়ে আলতো করে ব্রাশ-তুলি ঝেড়ে নিন। সপ্তাহে এক বার স্প্রে-ক্লেনজ়ার এবং মাসে এক বার করে শ্যাম্পু দিয়ে মেকআপ কিটের যত্ন নিন। এতে ব্রাশ বেশি দিন টিকবে।
যতই ভাল প্রডাক্ট হোক, সব প্রসাধনীর এক্সপায়ারি ডেট থাকে। কোনও কসমেটিকস অনেক মাস বা বছর ধরে ব্যবহার করবেন না। কোনও পছন্দের লিপস্টিক একটু একটু করে কয়েক মাস ধরে লাগালেই তফাতটা টের পাবেন। প্রথম দিকে তা যতটা ভাল ভাবে ঠোঁটে বসত, পরের দিকে তা হবে না। ভেঙে ভেঙে যাবে।
অল্প-বিস্তর হলেও মেকআপে ত্বক শুষ্ক হয়। তাই প্রাইমারেরও আগে ময়শ্চারাইজ়ার লাগিয়ে মেকআপ করা শুরু করুন। এতে মূল মেকআপ ও ত্বকের মধ্যে একটি দেওয়াল থাকবে। ত্বক সরাসরি প্রভাবিত হবে না। সকালে মেকআপ লাগিয়ে বেরোতে হলে সানস্ক্রিন-বেসড ময়শ্চারাইজ়ার জরুরি। সানস্ক্রিনে অ্যান্টি-এজিং উপাদান থাকে। মেকআপের জন্য ত্বক কুঁচকে গেলে সানস্ক্রিন সামাল দিয়ে দেবে।
নিজের মেকআপ অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করা করবেন না।
পনেরো মিনিটের ম্যাজিক
মেকআপ করলে ত্বকের বাড়তি পরিচর্যা প্রয়োজন। দেড় মাস অন্তর ডিপ ক্লিন ফেশিয়াল করান। এক দিন অন্তর পিল অফ মাস্ক ব্যবহার করুন। মুলতানি মাটি, গোলাপ জলে মিশিয়ে পনেরো মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন। শসা, লেবুর রস ও অ্যালো ভেরা জেলের মিশ্রণ লাগান। ঠিক পনেরো মিনিট পরে মাস্কটা তুলে নিন। এমন মাস্কে ত্বকের সাতটি স্তর পর্যন্ত পরিষ্কার হয়ে যায়। ব্ল্যাক ও হোয়াইট হেডস, জীর্ণ কোষ, ত্বকের গভীরে ঘাপটি মেরে থাকা ময়লা ও মেকআপের অবশিষ্টও উঠে আসে।
এই কয়েকটি উপায়ে মেকআপের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারেন। কমপ্যাক্ট-লাইনার-লিপস্টিকের প্রতিক্রিয়া হোক— কী দারুণ দেখতে!
মডেল: জুহি ঘোষ, তৃণা সাহা, ডিম্পল আচার্য; ছবি: অমিত দাস; মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; অভিজিৎ পাল (জুহি ঘোষ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy