Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
কোলেস্টিয়াটোমা কানের একটি জটিল রোগ। চিকিৎসায় দেরি হলে তা থেকে গুরুতর ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে
Ear Problems

সময় থাকতেই সচেতন হোন

কানের মূলত দু’টি কাজ। শোনা এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করা। ককলিয়া (শোনার নার্ভ) এবং ল্যাবাইরিন্থ (ভারসাম্য রক্ষার নার্ভ) কোলেস্টিয়াটোমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৪৩
Share: Save:

কান একটি সংবেদনশীল অঙ্গ এবং পঞ্চেন্দ্রিয়র অন্যতম ইন্দ্রিয়। কানের পর্দায় ছিদ্র হলে তার বহিঃপ্রকাশ নানা ভাবে হতে পারে। কোলেস্টিয়াটোমা কানের একটি জটিল রোগ। এর অর্থ ‘স্কিন ইন রং প্লেস’। চিকিৎসার পরিভাষায়, এটি টিউমর নয়, কিন্তু এর আচরণ টিউমরের মতোই। ঠিক সময়ে রোগনির্ণয় না হলে, রোগী শ্রবণশক্তি হারাতে পারেন। এমনকি এর কারণে মস্তিষ্কেও সংক্রমণ হতে পারে। তবে এর চিকিৎসা রয়েছে।

কোলেস্টিয়াটোমা কী?

ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডা. দীপঙ্কর দত্ত বুঝিয়ে দিলেন এই রোগের নানা দিক। সাপুরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়া দু’ভাবে হতে পারে— অ্যাকিউট এবং ক্রনিক। অ্যাকিউট অর্থাৎ কানের পর্দার পিছনে ঠান্ডা লেগে সংক্রমণ হয়েছে। সেটি পর্দা ফেটে পুঁজ-রক্তের আকারে বাইরে নিঃসৃত হয়। এটি আপদকালীন অবস্থা। এটি ক্রনিকও হতে পারে। অর্থাৎ পর্দায় ছিদ্র রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। পর্দার পিছনে অন্য রোগও রয়েছে। তার সঙ্গে ডিসচার্জও (পুঁজ-রক্ত) হয়। সময়বিশেষে উপসর্গগুলির তীব্রতা বাড়ে।

ক্রনিক সাপুরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়ার (সিএসওএম) সাধারণ ভাবে দু’টি ভাগ রয়েছে— সেফ এবং আনসেফ ভ্যারাইটি। কানের পর্দার মাঝখানে যখন কোনও ছিদ্র হয়, কিন্তু তা কানের ম্যাস্টয়েড হাড় ক্ষয়কারী রোগ বহন করে না, তাকে বলা হয় সেফ ভ্যারাইটি। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি কম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ছিদ্রগুলো হয় সেন্ট্রাল পারফোরেশন।

অন্য দিকে, পর্দার পিছনে হাড়ে ক্ষয়ের কারণে যে ছিদ্র হয়, তাকে বলা হয় আনসেফ ভ্যারাইটি। কোলেস্টিয়াটোমা এমনই এক ধরনের আনসেফ ভ্যারাইটি, যেখানে কানের পর্দার পিছন দিকের মার্জিনে বা কানের ছাদে ছিদ্র তৈরি হয়। এই ছিদ্রকে বলা হয় মার্জিনাল বা অ্যাটিক পারফোরেশন।

ডা.দত্তের কথায়, ‘‘একদলা চামড়ার মতো দেখতে কোলেস্টিয়াটোমা, যা মুক্তোর মতো ধবধবে সাদা।’’ কানের হাড়ের মধ্যে যখন চামড়া বা এপিথেলিয়াম জন্মাতে শুরু করে, যা হাড়ের ক্ষয় ঘটায় এবং হাড়-সংলগ্ন যে কোনও ধরনের স্ট্রাকচারের ক্ষয় করতে শুরু করে, সেটিকে বলা হয় কোলেস্টিয়াটোমা।

কী কী ক্ষতি হতে পারে?

মস্তিষ্কের সঙ্গে মুখের পেশির সংযোগ থাকে ফেশিয়াল নার্ভের মাধ্যমে, যে নার্ভের গতিপথ পুরো কানের ভিতর দিয়ে। এই নার্ভের জন্য মুখ নাড়ানো, চোখ বন্ধ করা-খোলা এমন কাজগুলো করা যায়। কোলেস্টিয়াটোমা ফেশিয়াল নার্ভের ক্ষতি করতে পারে, যার কারণে রোগীর ফেশিয়াল প্যারালিসিস হতে পারে।

কানের পর্দার পিছন দিকে যেহেতু এই ছিদ্র হয়, সেহেতু মস্তিষ্কের সঙ্গেও এর যোগ স্পষ্ট। তাই কোলেস্টিয়াটোমার কারণে মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস বা ব্রেন অ্যাবসেসের মতো গুরুতর অবস্থা তৈরি হতে পারে।

কানের মূলত দু’টি কাজ। শোনা এবং দেহের ভারসাম্য রক্ষা করা। ককলিয়া (শোনার নার্ভ) এবং ল্যাবাইরিন্থ (ভারসাম্য রক্ষার নার্ভ) কোলেস্টিয়াটোমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

কানের ভিতরে ডায়াগনোসিস না হওয়া কোলেস্টিয়াটোমা যদি থাকে, তা থেকে রোগীর মাথা ঘোরানো, ভারসাম্য রাখতে না পারার (টাল খাওয়া) মতো উপসর্গও দেখাদিতে পারে।

কোলেস্টিয়াটোমা কি ম্যালিগন্যান্ট?

ডা. দত্তের কথায়, ‘‘এটি ম্যালিগন্যান্ট নয়। কারণ ম্যালিগন্যান্সিতে কোষ বৃদ্ধি হওয়ার যে বিষয়টি থাকে, তা এতে নেই। কিন্তু এর ধরন টিউমরের মতো। খুব দ্রুত ছড়ায়।’’ সেফ ভ্যারাইটি কি আনসেফে রূপান্তরিত হতে পারে? ‘‘সেফ ভ্যারাইটি আনসেফ হতে পারে, কিন্তু এটি খুব বিরল ঘটনা। যা আনসেফ, তার ধরন বা প্রকৃতি প্রথম থেকেই সাধারণত আনসেফ হয়,’’ বললেন ডা. দত্ত।

রোগনির্ণয়

অনেক ক্ষেত্রে রোগীর কানের পর্দায় ছিদ্র হয়তো ধরা পড়ছে না। কিন্তু কানে কম শোনা, দুর্গন্ধময় ডিসচার্জের উপসর্গ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা কোলেস্টিয়াটোমার সন্ধান করেন।

সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে চিকিৎসকেরা এর বিস্তৃতি নির্ধারণ করেন। এ ছাড়া একটি অডিয়োমেট্রি বা হিয়ারিং টেস্টের মাধ্যমে রোগীর শ্রবণশক্তি হারানোর ব্যাপ্তি নির্ধারণ করা হয়। ডা. দত্তের মতে, অনেক ক্ষেত্রে পর্দায় ছিদ্রের আকার বা প্রকৃতি যা, তার তুলনায় টেস্টের রিপোর্ট বা রোগীর উপসর্গ আরও অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে এই রোগের ক্ষতি করার সম্ভাবনাও বাড়ে।

কনজেনিটাল কোলেস্টিয়াটোমা

বিরল হলেও, জন্মগত ভাবে কোলেস্টিয়াটোমা থাকতে পারে শিশুদের। কিন্তু শিশু বয়সে তা ধরা পড়ে না। ডা. দত্ত বললেন, ‘‘খুব কম মা-বাবাই শিশুদের নিয়ম করে ইএনটি পরীক্ষা করান। যার ফলে পেডিয়াট্রিশিয়ান রেফার না করলে, এই রোগ ডায়াগনোসিস করতে দেরি হয়ে যায়।’’

চিকিৎসা

কোলেস্টিয়াটোমার একটাই চিকিৎসা, সার্জারি। রোগীর পর্দার কতটা ক্ষতি হয়েছে, কতটা হাড় ক্ষয় হয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে সার্জারির ধরন নির্ধারিত হয়। গোড়া থেকে রোগ নির্মূল করাই এর প্রধান চিকিৎসা। কোলেস্টিয়াটোমা নির্মূলের পরে রোগীর হিয়ারিং রিকনস্ট্রাকশনও করা হয়।

সময়মতো চিকিৎসা করালে কোলেস্টিয়াটোমা সেরে যায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Ear Problems Cholesteatoma
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy