Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
international women’s day

Women’s Day Special: আধুনিক কলকাতা যতই তাঁদের সাজিয়ে রাখতে চাক, এখনকার নীরারা হারতে শেখেননি

এটা কোনও নিছক বলিউডি কায়দায় ‘মেয়েরাও পিছিয়ে নেই’ গোছের ট্যাগলাইন দেওয়া ফেসবুক পোস্ট নয়, এটা একটা ইশতেহার।

এখনকার নীরারা, ‘মহানগর’-এর মতো পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটেন তাঁরা স্বামীদের সঙ্গে।

এখনকার নীরারা, ‘মহানগর’-এর মতো পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটেন তাঁরা স্বামীদের সঙ্গে। ছবি: সংগৃহীত

শ্রয়ণ চন্দ
শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২ ১৯:১০
Share: Save:

এই ইশতেহারের পিছনে যে গল্পগুলি একের পর এক কুঁড়ি হয়ে ফুটে উঠছে, তারা বলে দিচ্ছে, আজকের নীরারা সহজে হার মানতে শেখেননি।

১৮৯০ সালে কলকাতা সেশন কোর্টে দাঁড়িয়ে ফুলমণী দাসীর মা রাধামণীও মানেননি যে, তাঁর ১১ বছরের ফুটফুটে মেয়েটিকে বিয়ের পরেই ধর্ষণ করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে তার স্বামী। আদালতে দাঁড়িয়ে তখনও অপরাধ হিসেবে গণ্য না হওয়া বৈবাহিক ধর্ষণকে মেনে নিতে পারেননি তিনি। তিনি মানেননি, যে তাঁর মেয়ের রক্তাক্ত শরীরটা ওভাবে বিনা চিকিৎসায় পড়ে থেকে থেকে শেষ পর্যন্ত নিষ্প্রাণ হয়ে যাবে। বিচারক থেকে শুরু করে সমাজের প্রায় কোনও স্তরের মানুষের কাছেই এই বিচার চাওয়ার কোনও ভিত্তি ছিল না। কিন্তু তবুও একটা হেরো পার্টির মতো লড়ে গিয়েছিলেন রাধামণী। হেরে গিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু কল্পবিলাসী রোম্যান্টিক আধুনিকতার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা মন তাঁকে হারতে দেখতে পারে না, তিনি হারেনওনি। এই ঘটনার পরেই ইংরেজ সরকার বৈবাহিক ধর্ষণ, যৌন সম্পর্ক স্থাপন করার ন্যূনতম বয়সসীমা, আর সর্বোপরি মহিলাদের ব্যক্তিপরিচয়ের অধিকার নিয়ে নতুন আইন নিয়ে আসতে বাধ্য হয়।

আজকের নীরারাও সহজে হার মানতে জানেন না।

ঋত্বিকের (চক্রবর্তী) চুলের কাঁটা নিয়ে ক্ষণিকের খেলা করার কয়েক মুহূর্তের সাদা কালো শান্তির অনুভূতি কোথাও গিয়ে পুরুষ-মহিলার সম্পর্ককেও নতুন করে দেখতে বাধ্য করে।

ঋত্বিকের (চক্রবর্তী) চুলের কাঁটা নিয়ে ক্ষণিকের খেলা করার কয়েক মুহূর্তের সাদা কালো শান্তির অনুভূতি কোথাও গিয়ে পুরুষ-মহিলার সম্পর্ককেও নতুন করে দেখতে বাধ্য করে। ছবি: সংগৃহীত

এখনকার নীরারা ‘আসা যাওয়ার মাঝে’তেও ওই অত্যন্ত সাধারণ যাপনের কাণ্ডারী হয়ে থেকে যান, ‘মহানগর’-এর মতো পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটেন তাঁরা স্বামীদের সঙ্গে। মুখ নিচু করে বাধ্য স্ত্রী সেজে হেঁটে যাওয়ার সময় বোধহয় এখন আর নেই। বরং ঋত্বিকের (চক্রবর্তী) চুলের কাঁটা নিয়ে ক্ষণিকের খেলা করার কয়েক মুহূর্তের সাদা কালো শান্তির অনুভূতি কোথাও গিয়ে পুরুষ-মহিলার সম্পর্ককেও নতুন করে দেখতে বাধ্য করে। এখনকার নীরারা শুধুমাত্র ‘খাওয়ার পরে একটা করে, কথা দিয়েছ’র মিষ্টত্বেই সীমিত থাকেন না। বরং তাঁরা ‘মহানগর’-এর পোস্টারে মধ্যমণী হয়ে থাকেন, পিছনে কলকাতা, কিছুটা অন্ধকার কিছুটা আলোয়।

‘বাস স্টপে দেখা হল তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ’-এর প্রহেলিকাসম নাম-না-জানা এক একটি কুয়াশাচ্ছন্ন সত্তা হয়ে রেখে দিতে বড় ইচ্ছে করে নীরাদের। এই রোমান্টিকতার সহজ সরল মোড়কে মুড়ে রাখা এক নীরাকে খুঁজে চলেছে এই শহর। অনেকটা শালীমারের বিজ্ঞাপনের ওই চিরাচরিত ছবির মতো, যা নারীর সত্তাকে এক আলাদা আলমারিতে রেখে দিয়েছে খুব অনায়াসেই। এই ছবিকে খুব একটা পাল্টানোর বিধান নেই সমাজে। এক অদ্ভুত গা-গোলানো পৌরুষ দৃষ্টিভঙ্গী থেকে যেন নারীর একটা সংজ্ঞা ঠিক করে নিয়েছে এই শহর। খুব আদর, করে যত্ন করে, আহ্লাদী মোড়কে মুড়ে তাকে রেখে দেওয়া হয়েছে জনসমক্ষে। তাই যখন এসপ্ল্যানেড দিয়ে ভর সন্ধেবেলায় প্রিয়জনের হাত ধরে গল্প করতে করতে হেঁটে যান নীরা, একটু আধটু ঠান্ডা হাওয়ায় মনটা অনায়াসে ভাল হয়ে যেতে চায়, দু’জনের একে অপরকে আর একটু কাছে টেনে নিতে ইচ্ছে হয়, তখন হঠাৎ নীরাকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা হাত ধরে বেশ জোরে কাছে টেনে নিয়ে গলা নামিয়ে বলেন, “এ রকম জামা পরে বেড়িও না। বুকের অনেকটা দেখা যাচ্ছে।”

মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় চিত্রটা।

কোথায় সেই শীতকালীন মাদকতা, কোথায় সেই রোমান্টিকতার মায়াবী মূর্ছনা? মিষ্টত্বের আভাস এখনও লেগে আছে ঠিকই, কিন্তু তার সঙ্গে জুড়ে আছে এক হঠাৎ পাল্টে যাওয়া আবহাওয়া। নীরা বিরক্তিভরে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে এগিয়ে যান। পিছনে মহিলা অনেক কিছুই বিড়বিড় করতে থাকেন, কিছুটা শোনা যায়, বাকিটা শোনা গেলেও শোনার প্রয়োজনীয়তা কমতে কমতে মনের মধ্যে এক পুরু জঞ্জালের স্তূপের মতো জমে থাকে।

এখানে সবটুকুই বড্ড দ্রুত ঘটে যায়। ভিক্টোরিয়া থেকে কলকাতার প্রত্যেকটা গলি দেখা যায় না। দেখা যায় না প্রত্যেকটা বাড়ির প্রশ্নবাণে পিঠ ঠেকে যাওয়া মেয়েটির আর্তনাদ। দেখা যায় না আন্দোলনরত তরুণী ও তার বন্ধুদের কী ভাবে যথেচ্ছ অত্যাচার করা হয় জেলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে। দেখা যায় না কী ভাবে ভরদুপুরে স্লোগান দিতে থাকা ছাত্রীদের গায়ে হাত তুলতে পিছপা হন না কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কতৃপক্ষও। নীরার জামা এবং বুক দেখানো নিয়ে চিন্তাগুলি খুব সহজেই দানা বাঁধতে থাকে ওই এক একটি আলমারিতে তোলা সত্তার সঙ্গে।

নারীকে একটা শিকড়হীন জড়পদার্থ করে রাখতে বেশ লাগে পুরুষতন্ত্রের। তার উপর যদি সাজিয়ে গুজিয়ে লিপস্টিক মাখিয়ে মেকআপ করিয়ে লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিয়ে তাকে সুন্দর করে তোলা যায়, তা হলে সেই দিনটি পুরুষতন্ত্রের উৎসব, তার কোনও সন্দেহ নেই।

আজকের নীরারাও সহজে হার মানতে জানেন না। 

আজকের নীরারাও সহজে হার মানতে জানেন না। 

প্যারিসকে এ রকম সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিল তৃতীয় নেপোলিয়নের ফরাসি সরকার। ব্যারন হাউসম্যানের তত্ত্বাবধানে প্যারিস শহরটিকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য পুনর্গঠনের কাজ শুরু করা হল। আঘাত নামল সাধারণ মানুষের অস্তিত্বের উপর। এই পুনর্গঠনের ফলে বাড়ি ছাড়া হয় প্রচুর সংখ্যক মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা মফস্সল ছেড়ে পেট চালানোর তাগিদে প্যারিসে এসে ঘর বেঁধেছিলেন। প্যারিসকে সুন্দর দেখানোর জন্য একটি গোটা শ্রেণিকে কার্যত অস্বীকার করে দেয় ফরাসি সরকার। প্যারিসে সেই উৎখাত হওয়ার কিছু সময় পরেই জন্ম নেয় প্যারি কমিউন, যার কথা এখনও সাম্রাজ্যবাদকে, ফ্যাসিবাদকে কাঁপতে বাধ্য করে। ইতিহাস থেমে থাকে না, সে বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে আমাদের চারপাশে। তেমনই এই বুক দেখানো নিয়ে চিন্তিত কলকাতাকে সিনেমার চোখ দিয়ে অসামান্য সুন্দর ও ‘সিটি অফ জয়’ বলে দেখানোর অদম্য উন্মাদনা বোধ করেন সকলে। তাই হয়তো সন্ধেবেলার এসপ্ল্যানেডের ছোট্ট সিকোয়েন্সটা শেষ পর্যন্ত আর প্রিয় শহরের দৃশ্যপটের অংশ থাকবে না। কেটে দেওয়া হবে। যেমন ট্রাম্প আসার সময়ে খুব সহজেই পাঁচিল তুলে দেওয়া হয়েছিল দারিদ্র্য লুকোনোর নাম করে।

এই শহরের ক্ষতগুলি নিজের কপালে বয়ে বেড়াতে হয়ে তাঁদের। ওই যে, কিছু দেখি, কিছু দেখতে পাই না, সেই রকমই অনেকগুলি ভিক্টোরিয়াতে বসে থাকি আমরা। কিছু দেখি, কিছু দেখার কোনও প্রয়োজনও বোধ করি না।

এই শহরের ক্ষতগুলি নিজের কপালে বয়ে বেড়াতে হয়ে তাঁদের। ওই যে, কিছু দেখি, কিছু দেখতে পাই না, সেই রকমই অনেকগুলি ভিক্টোরিয়াতে বসে থাকি আমরা। কিছু দেখি, কিছু দেখার কোনও প্রয়োজনও বোধ করি না। ছবি: সংগৃহীত

যখন দু’জন একে অপরকে ভালবেসে জড়িয়ে ধরায় পাশ দিয়ে সাইকেলে করে যাওয়া লোকটি তাড়াতাড়ি নেমে খালি ছেলেটাকে বলেন, “এ সব করতে হলে পার্কে গিয়ে করো,” মেয়েটির উদ্দেশ্যে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেন না তিনি। যেন ছেলেটি একা একা একটি খেলনা নিয়ে খেলছিলেন, আর তাই নিয়ে ভদ্রলোকের বড্ড আপত্তি। তখন যে ভাবে মেয়েটিকে এই আপাত ভাবে অত্যন্ত শিক্ষণীয় একপেশে কথোপকথন থেকে কেটে দেওয়া হয়, তেমনই ওই এসপ্ল্যানেডের সিকোয়েন্সটাও শহুরে শহরপ্রেমিকদের জন্য অত্যন্ত অবাঞ্ছিত অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায়। এটা নিছক কোনও বিধান নয়, কলকাতামাত্রেই এই রোমান্টিকতার প্রতি এক অদম্য অনুগত্য অনুভব করে এই শহরের প্রতিটা কেন্দ্রবিন্দু।

কলেজে আহ্লাদী হয়ে প্রেমিকের কোলে বসেছে প্রেমিকা। পাশ দিয়ে শিক্ষক যেতে যেতে ভুরু কুঁচকে যায় তাঁর, দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। জোর গলায় বলে ওঠেন, “বারোটা দেশে ঘুরেছি আমি, কোত্থাও কখনও এমন অসভ্যতামো দেখিনি।”
সভ্যতা, অসভ্যতা, আধুনিকতা। এই শব্দগুলি খুব সহজেই ছুড়ে দেওয়া হয় ইদানীং। সকলের কথা, আমরা নাকি আধুনিক হয়ে গিয়েছি। কোথাও কখনও কেউ একটি বোতাম টিপে দিয়েছে আর আমরা আধুনিক হয়ে গিয়েছি! সংজ্ঞা শিখিনি আধুনিকতার, বুঝতে শিখিনি এই আধুনিকতার মানে, কিন্তু আমরা আধুনিক হয়ে গিয়েছি। কিন্তু তার পরও দু’জনের জড়িয়ে ধরা দেখলে সাইকেল থেমে যায়, সুন্দর সাজতে গেলে দেখতে হয় কতটা বুক দেখা যাচ্ছে।

যখন দু’জন একে অপরকে ভালবেসে জড়িয়ে ধরায় পাশ দিয়ে সাইকেলে করে যাওয়া লোকটি তাড়াতাড়ি নেমে খালি ছেলেটাকে বলেন, “এ সব করতে হলে পার্কে গিয়ে করো,” মেয়েটির উদ্দেশ্যে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেন না তিনি।

যখন দু’জন একে অপরকে ভালবেসে জড়িয়ে ধরায় পাশ দিয়ে সাইকেলে করে যাওয়া লোকটি তাড়াতাড়ি নেমে খালি ছেলেটাকে বলেন, “এ সব করতে হলে পার্কে গিয়ে করো,” মেয়েটির উদ্দেশ্যে কিছু বলার প্রয়োজন বোধ করেন না তিনি। প্রতীকী ছবি।

যদি কলকাতা এখন আধুনিক হয়ে থাকে, তা হলে এই শতাব্দীপ্রাচীন পুরুষতন্ত্রও আধুনিক। যদি কলকাতা এখন আধুনিক হয়ে থাকে, তা হলে এই রোমান্টিকতার পাঁচিলের পিছনে লুকিয়ে থাকাটাই আধুনিকতা। যদি এই কলকাতা আধুনিক বলে নিজেকে জাহির করতে পারে, তা হলে ভরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রীদের গায়ে হাত তোলা কর্তৃপক্ষের রূঢ় সদস্যও আধুনিক, আর সেই ঘটনার পরেও ক্যাম্পাসের মধ্যে তার বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানোই সত্যিকারের আধুনিকতা।

ভিক্টোরিয়া থেকে কলকাতার প্রত্যেকটা গলি দেখা যায় না।

দেখা যায় না, যে অফিসে একই পদের অধিকারী হয়েও মেয়েটিকে তুড়ি মেরে বা অপমানজনক আঙুলের ইঙ্গিতে খুব সহজেই কোনও কাজের জন্য ডেকে নেওয়া যায়। দেখা যায় না, যে রাতে বাড়ি ফেরার সময়ে ট্যাক্সিতে বসে সমানে কারও সঙ্গে কথা বলে যেতে হয় মেয়েটিকে। দেখা যায় না সেই মেয়েটিকে, যাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ, বন্ধুদের সঙ্গে যথেচ্ছ মার খেয়েছেন যিনি থানার অন্ধকারে। এ বার এই সব নাম-না-জানা গল্প থেকে উঠে আসা মুখগুলিকে আমরা নীরা বলে ডাকবো, না বনলতা, না ফুলমণী, কিচ্ছু যায় আসে না।

কিন্তু এখনকার নীরারা হারতে শেখেননি কখনও।

তিনি ‘মহানগর’ হোক, বা ‘কাহানি’, মেয়ের জন্য রাধামণীর কান্না হোক, বা নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে দাঁড়িয়ে নিজের গায়ে কর্তৃপক্ষের হাত অনুভব করা ছাত্রী হোক—

নীরারা হারতে শেখেননি। লোকে অনেক রকম উপমা ব্যবহার করে, দেবীতুল্য করে তোলে তাঁদের, লক্ষ্মীসুলভ ছবি বানিয়ে নেওয়া হয় তাঁদের চারপাশে। কিন্তু নীরা কোনও দুর্গা নন। লক্ষ্মী-সরস্বতী-কালীর মতো সব ভিত্তিহীন সংজ্ঞা এড়িয়ে তিনি আলমারি থেকে নেমে আসতে চান। তিনি ওই শালিমারকেন্দ্রিক চিত্রতে থাকেন না। তিনি আরও অনেক বিরক্তিভরে সেই বিড়বিড় করা মহিলার কাছ থেকে হাত ছিনিয়ে নিয়ে এগিয়ে যান। মার খাওয়ার পরের দিন সেই কর্তৃপক্ষের ইস্তফার দাবিতে তিনি সেখানেই স্লোগান তোলেন জোর গলায়। আধুনিকতার সংজ্ঞার জন্য নীরা অপেক্ষা করেন না। কারণ আধুনিকতা তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেড়ে নেওয়া ছাড়া খুব একটা কিছু করেনি কখনও। নীরারা তাই হয়ে যান উদাহরণের মতো। ইতিহাস কখনও থেমে থাকে না, বৃত্তাকারে ঘুরতে থাকে আমাদের চারপাশে। বাগানে ফুল হয়ে থাকা নীরাদের সঙ্গে সভ্যতা থাকুক বা না থাকুক, সভ্যতার ইতিহাস ঠিক থেকে যায়।

এই শহরের ক্ষতগুলি নিজের কপালে বয়ে বেড়াতে হয়ে তাঁদের। ওই যে, কিছু দেখি, কিছু দেখতে পাই না, সেই রকমই অনেকগুলি ভিক্টোরিয়াতে বসে থাকি আমরা। কিছু দেখি, কিছু দেখার কোনও প্রয়োজনও বোধ করি না। নিজের কপালে বয়ে বেড়াতে বেড়াতে মাঝেমধ্যে নীরারা ছুটে বেরিয়ে যেতে চান প্রবল বৃষ্টির মধ্যে, ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নীতার মতো বৃষ্টির জলে ভিজতে দিতে চান তাঁরা সব সংজ্ঞা যা আধুনিকতার রঙিন মোড়কে লেগে আছে তাঁদের শরীরের সঙ্গে। পিছনে আর্তনাদের মতো বাজতে থাকে ‘আয় গো উমা কোলে লই’। বেজে যাক, যত ক্ষণ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া থেকে শোনা না যায় সেই আর্তনাদ।

নীরারা হারতে শেখেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

international women’s day Women's Day Special Women's Day Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy