Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
infertility

পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বাড়ছে, কী কী খেয়াল রাখতেই হবে

পুরুষদের মধ্যে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, দাবি বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসকদের।

ন্যূনতম ২ কোটি শুক্রাণু না থাকলে সন্তান উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে। ফাইল ছবি।

ন্যূনতম ২ কোটি শুক্রাণু না থাকলে সন্তান উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে। ফাইল ছবি।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩৮
Share: Save:

কোভিড আবহে গৃহবন্দী থাকায় জন্ম হার বাড়বে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। কিন্তু ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ অ্যাসিস্টেড রিপ্রোডাকশন (আইএসএআর)-এর হিসাব অনুযায়ী ভারতে সন্তানহীন দম্পতির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

প্রতি ৬ জোড়া দম্পতির এক জোড়া সন্তানহীনতার শিকার। শহরাঞ্চলে বন্ধ্যাত্বের হার বেশি। আইএসএআর এর হিসেবে ২০১৯ সালে এ দেশে সন্তানহীন দম্পতির সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৭৫ লক্ষ। মেয়েরাই প্রধানত বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী এই ভাবনাকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত করে পুরুষদের মধ্যে সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, দাবি বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসকদের।

সমীক্ষায় জানা গিয়েছে যে মেয়েদের তুলনায় ১.৫% বেশি বন্ধ্যাত্বের সমস্যা দেখা যাচ্ছে পুরুষদের মধ্যে। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ, এন্ডোমেট্রিওসিস, পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজ ও জেনিটাল টিবির জন্য বন্ধ্যাত্ব দেখা যায়। সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসার সাহায্যে সমস্যা সারিয়ে তোলা যায়। পুরুষদের সমস্যা হলে মেল ইগোর কারণে একদিকে চিকিৎসা করাতে গাফিলতি করেন, অন্যদিকে অবসাদ তৈরি হয়।

আরও পড়ুন: ইলিশে জব্দ হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোক-স্নায়ু রোগ, আর কোন মাছে জেনে নিন​

অভিনিবেশ জানান, সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হলে কিছু কিছু মানুষ নিজের পৌরুষ সম্পর্কে নিজেই সন্দিহান হয়ে অবসাদে ভোগেন। ইনফার্টিলিটি ফিজিশিয়ান রোহিত গুটগুটিয়া জানালেন, বাবা না হতে পারা আর পুরুষত্বহীনতা এক নয়। সন্তান উৎপাদনের জন্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে সুস্থ স্বাভাবিক ও গতিশীল শুক্রাণুর প্রয়োজন। শুক্রাণুর অভাবেই সন্তান হতে অসুবিধা হয় বললেন রোহিত।

সন্তানহীনতায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কাউন্সেলিং করান প্রয়োজন অনুযায়ী। ফাইল ছবি।

পুরুষত্বহীনতা হল স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতা। এর ডাক্তারি নাম সেক্সুয়াল ডিজফাংশন। বাচ্চা ছেলেরা যখন যৌবনে পৌঁছয় তখন থেকেই টেস্টিস বা শুক্রথলি থেকে অবিরত শুক্রাণু তৈরি হতে শুরু করে।

আরও পড়ুন: ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মৃত্যু, ‘সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোম’ ঠেকাতে কী বিষয়ে সতর্ক থাকতেই হবে​

প্রতিদিনই প্রায় ১২ কোটির বেশি শুক্রাণু তৈরি হয়। কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে আছে ২৩টি ক্রোমোজোম। যার মধ্যে একটি হল সেক্স ক্রোমোজোম। এটিই স্থির করে দেয় সে ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে । শুক্রাণুর মধ্যাঞ্চলে শরীরের মধ্যে আছে মাইটোকনড্রিয়া,এটি হল সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস। আর এর লেজ শুক্রাণুকে সাঁতার কেটে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। শুক্রাণুর সমস্যা হলে চিকিৎসা শুরুর পর তা কার্যকর হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে।

পুরুষের বন্ধ্যাত্বে অ্যাজোস্পার্মিয়া, অলিগোস্পার্মিয়া, অ্যাস্থেনোস্পার্মিয়া, টেরাটোস্পার্মিয়া বা স্পার্মের ইনফেকশন এই সবই চিকিৎসার সাহায্যে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া ইরেকটাইল ডিজফাংশন বা ইজাকুলেশনের সমস্যা থাকলে তাঁর চিকিৎসাও ইনফার্টিলিটি ফিজিশিয়ানরা করেন। প্রথমেই রোগের কারণ জানার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে তারপরই চিকিৎসা শুরু করা হয়।

আরও পড়ুন:সর্বনাশ তামাকেই, দেশে প্রতি ঘণ্টায় মুখের ক্যানসারে মৃত ৫​

শুক্রাণুর সংক্রমণ হলে তাঁর নড়াচড়ার ক্ষমতা লোপ পায়। ফলে বন্ধ্যাত্ব অবধারিত। ওষুধের সাহায্যে শুক্রাণুর সংক্রমণ সারানো যায়। কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাণুর কাউন্টও বাড়ানো সম্ভব হয়। তবে শুক্রথলি বা টেস্টিসের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করা মুশকিল। ন্যূনতম ২ কোটি শুক্রাণু না থাকলে সন্তান উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে।

অত্যাধুনিক চিকিৎসার সাহায্যে ইকসি বা ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইঞ্জেকশন করে অতি স্বল্প সংখ্যক শুক্রাণুর সাহায্যেও সন্তান পাওয়া সম্ভব বলে ভরসা দিলেন রোহিত। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অবসাদ, অ্যাংজাইটি, আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস, অতিরিক্ত গরম ইত্যাদি কারণে শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যায়।

আরও পড়ুন:শুধুমাত্র অতিরিক্ত চিনি খেয়েই বিশ্বে মারা যান ৩.৫ কোটি মানুষ!​

অতিরিক্ত ওজন ও ভুঁড়ি থাকলেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে। ধূমপান, মদ্যপান-সহ অন্যান্য নেশা সন্তান উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া চোট আঘাত ও কিছু ওষুধ ব্যবহারেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে। বেশি গরমে শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যায়। কোলে ল্যাপটপ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে।

শুক্রাণুর অভাবেই সন্তান হতে অসুবিধা হয় মত চিকিৎসকের। ফাইল ছবি।

আইটি সেক্টরে কর্মরত পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বাড়ছে। রাতে ঘুম না হলে একদিকে মনের চাপ বাড়ে, অন্য দিকে ওজনও বেড়ে যায়। এর ফলে শুক্রাণু উৎপাদন কমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় ও রোহিত গুটগুটিয়া দুজনেরই পরামর্শ বন্ধ্যাত্বের শুরুতেই চিকিৎসা শুরু করলে ভাল ফল আশা করা যায়। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই বন্ধ্যাত্বের সুচিকিৎসা করতে পারেন একজন ইনফার্টিলিটি ফিজিশিয়ান বা বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ। যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যাবে, জটিলতা কম হবে।

আরও পড়ুন:ফল-সব্জি স্যানিটাইজেশনে কী কী মানতেই হবে এখন

শুক্রাণু উৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা হলে প্রথমেই এর কারণ খুজে বের করতে হবে। যদি দেখা যায় যে স্পার্ম তৈরি হচ্ছে কিন্তু কোনও বাধা থাকার জন্যে তা বেরোতে পারছে না, সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে ব্লকেজ সারানো হয়। ওষুধের সাহায্যে ওলিগোস্পার্মিয়া বা স্পার্মের সংক্রমণ দূর করা যায়। কিন্তু যদি ছোটবেলায় কোনও অসুখের কারণে টেস্টিকিউলার কোষ নষ্ট হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দাতা শুক্রাণুর সাহায্য নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

শুক্রাণুর সমস্যার চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাপনে বদল করা জরুরি। ধূমপান ও মদ্যপানের নেশা ছাড়তে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করে ওজন স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:করোনা আবহে বাড়িতে অতিথি? কী কী খেয়াল রাখতেই হবে​

কাজের চাপে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক তৈরি না হলে সমস্যা বাড়তে থাকে। আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস পরলে ও টানা বসে কাজ করলেও শুক্রাণু তৈরিতে অসুবিধা হতে পারে। কাজের ফাঁকে কয়েকবার উঠে হেঁটে নিতে হবে। পর্যাপ্ত জল পান ও ঠিক সময়ে শৌচাগার যাওয়া দরকার। প্রস্রাব চেপে রাখলে সংক্রমণ ও তার থেকে শুক্রাণুর সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মনে রাখবেন, জ্বর-সর্দি বা কোভিড সংক্রমণের মতোই বন্ধ্যাত্ব একটা অসুখ, তাই মন খারাপ না করে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Infertility Sperm Trouble Male Infertility
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy