দিনের বেশির ভাগ সময়টাই ঘরে কাটে। তাই প্রকৃতির ছোঁয়ায় অন্দরমহল সুন্দর করে সাজিয়ে নিলে মন অনেকটাই ভাল থাকে, জীবনযাপনে আসে আলাদা ছন্দ। কিন্তু সাজাবেন কী ভাবে? কী ভাবেই বা ঘরের মধ্যে নিয়ে আসব ছায়ানিবিড় শান্তির নীড়ের অনুভূতি? আর এখানেই সাহায্য করে বায়োফিলিক ইন্টিরিয়রের ধারণা।
বায়োফিলিক ইন্টিরিয়র কী?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, অন্দরসজ্জার পরিবেশ ও জীবনযাপনের সঙ্গে প্রকৃতিকে মিশিয়ে দেওয়ার পদ্ধতি। বায়োফিলিক কথাটির উৎপত্তি ‘বায়োফিলিয়া’ থেকে, যার অর্থ প্রকৃতিপ্রেম। বলা যায়, প্রকৃতির সহাবস্থানে নিজের বাসস্থানকে শান্তির আবাস বানিয়ে তোলা। যে শান্তির আবাস শারীরিক ও মানসিক উন্নতির পরিচায়ক।
কী ভাবে সাজাবেন?
- বায়োফিলিক ইন্টিরিয়রের জন্য দামি জিনিসপত্র কিনতে হবে, এমনটা নয়। বরং খুব সহজেই অল্প কিছু বিষয় রদবদল করলেই আপনার ঘর হয়ে উঠবে অন্যরকম। তবে মাথায় রাখতে হবে একটাই জিনিস, প্রকৃতিকে বাদ দিয়ে কিন্তু এই অন্দরসজ্জা হয় না।
- n আলো-হাওয়ার পরশ: এই অন্দরসজ্জায় জানালা বন্ধ রাখা নৈব নৈব চ। বরং হাট করে খুলে দিন জানালা। হাওয়া ও আলো যেন লুটোপুটি খায় আপনার ঘরের মধ্যে। সকালবেলায় চায়ের কাপটি নিয়ে জানালার কাছে বসুন। লকডাউনে শহরে পাখি বেড়েছে খানিক, তাদের কলকাকলি শুনুন মন দিয়ে। খোলা জানালার সঙ্গে মানানসই হালকা রঙের পরদা লাগান। কাচের ছোট ছোট টাম্বলারে গাছও রাখতে পারেন জানালার পাশে। প্রয়োজন হলে জানালার সামনে খানিকটা ফাঁকা জায়গা রাখুন। বাড়িতে নিয়মিত সূর্যালোকের প্রবেশ মানসিক ও শারীরিক উন্নতিতে ভীষণ ভাবে সহায়তা করে। ছোট টেবল ও আরামদায়ক বেতের মোড়া দিয়ে জানালার পাশে তৈরি করে নিতে পারেন ব্রেকফাস্ট নুক।
- n গৃহসজ্জায় গাছের ভূমিকা: যে অন্দরসজ্জার মূল উপজীব্য প্রকৃতিপ্রেম, তাতে গাছের ভূমিকা যে থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। সুতরাং, বাড়ির আকার, আসবাবপত্রের অবস্থান অনুসারে পছন্দসই ইন্ডোর প্লান্টের সমাবেশ ঘটান বাড়িতে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানুষের মনে ও মননে সবুজ রঙের সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। বিছানার পাশে একটা লম্বা পাম গাছ। বারান্দায় সিঙ্গোনিয়াম, স্নেক প্লান্ট জাতীয় গাছ বাড়ির পরিবেশ করে তুলবে শান্তিপূর্ণ ও সতেজ। তবে আপনি কী ভাবে ঠিক কতটা যত্ন করতে পারবেন তা মাথায় রেখেই কিন্তু বেছে নেবেন অন্দরসজ্জার গাছ। ইদানীং ওয়ার্ক ফ্রম হোমের যুগে বাড়িতে তৈরি করতে হয়েছে অফিস স্পেসও। সেখানে অবশ্যই রাখুন ছোট ছোট ইন্ডোর প্লান্ট। প্রয়োজনে কিনতে পারেন শৌখিন প্লান্টার্স ও প্লান্ট স্ট্যান্ড।
- ঘরের লাগোয়া খোলা বড় বারান্দা বা অ্যাটিক থাকলে তো সোনায় সোহাগা। ছোট বড় নানা টবের গাছে সাজিয়ে তুলুন সেই স্থানটি। মাটি ফেলে তৈরি করুন ছোট এক টুকরো সবুজ ঘাসজমি। সেই ছাদ-বাগানে রাখুন দুটো বেতের চেয়ার ও টেবল। ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ঝক্কি সামলে প্রিয়জনের সঙ্গে বসে এক কাপ কফি খেতে খেতে দিব্যি মনে হবে প্রকৃতির খুব কাছে আছেন।
- n প্রাকৃতিক জিনিসে বিশ্বাস রাখুন: অন্দরে প্রকৃতিকে ডেকে আনতে আরও বেশি করে প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহার করুন। আসবাব, হোম ডেকর, কিচেন ডেকর হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন কাঠ, পাট, বাঁশ, পাথর ইত্যাদি দিয়ে তৈরি সামগ্রী। পাটের তৈরি একটি ওয়াল ডেকর আপনার বসার ঘরের ভোল বদলে দিতে পারে। অথবা নিজের পছন্দের কোনও প্রাকৃতিক ছবি। তা হতে পারে কোনও জঙ্গলের অথবা নদীর, বাঁধিয়ে রাখুন ঘরের দেওয়ালে।
- বায়োফিলিক ইন্টিরিয়রের আর একটি বিষয় হল সাসটেনিবিলিটি। সঙ্গে রিসাইকলিং বা পুনর্নবীকরণের ছোঁয়াও। অতএব এই দু’টি বিষয় মাথায় রেখেই অন্দরসজ্জার পরিকল্পনা করবেন।
- n প্রকৃতির আকার ও রং থেকে অনুপ্রেরণা নিন: সাধারণ ইন্টিরিয়রের কৌণিক ও রেখাকার নকশা থেকে বেরিয়ে বায়োফিলিক ইন্টিরিয়রের প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই অন্দরসজ্জা বেছে নিন। ব্যবহার করতে পারেন গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি টেবল। পর্দা বা কুশনে বেছে নিতে পারেন রেখাকার বা কৌণিক বাদে যে কোনও প্যাটার্ন। একই সঙ্গে প্রকৃতির ঋতু অনুসারে যে রংগুলো দেখা যায় সেগুলো দিয়েও রাঙিয়ে নিতে পারেন আপনার বাসস্থান। বেছে নিতে পারেন প্রকৃতির সঙ্গে তালমেলানো ফ্লোরাল ওয়ালপেপারও। বিশেষ করে, হালকা সবুজ, হালকা নীল, বাদামির নানা শেড, লেমন ইয়ালো, ক্রিম, বেজ প্রভৃতি রং আপনার ঘরকে দেবে আলাদা মাত্রা।
- n জলের শব্দ: জলের শব্দের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক চিরকালীন। আমাদের সভ্যতার সূচনাই তো নদী থেকে। তাই জলের শব্দের সঙ্গে রয়েছে আমাদের আত্মিক যোগ। নদী প্রবাহের সেই অনুভূতি ঘরে বসে পাওয়ার জন্য করতে পারেন ইন্ডোর ফাউন্টেনের বিশেষ ব্যবস্থা। এ ছাড়া যদি বড় বারান্দা বা অ্যাটিকে জায়গা থাকে, তা হলে ব্যবস্থা করতে পারেন ছোট জলাশয়েরও। তবে জলাশয় তৈরি করা ছোট ফ্ল্যাটে অসুবিধেজনক, তাই সেক্ষেত্রে উপায় ওই ইন্ডোর ফাউন্টেনই। বসার ঘরের এক কোণে একটি লম্বা টুলের উপরে রেখে দিন ফাউন্টেনটি। সারাদিন জলের কলকল শব্দে পাবেন প্রশান্তি।
এ ছাড়াও টেরেনিয়াম
বা ইকেবানা দিয়েও সাজিয়ে তুলতে পারেন অন্দর। প্রকৃতির স্পর্শ থাকলেই প্রাণ পাবে ভিতরমহল।