ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও হতে পারে ত্বকের প্রদাহ। ছবি: আইস্টক
ত্বকের যত্ন নেওয়া মানে শুধুই পরিচর্যা নয়। ঘরোয়া উপায় হোক বা পার্লার ত্বককে সুস্থ রাখতে চেষ্টার কসুর নেই অনেকেরই। কিন্তু তাতেও র্যাশ, ফুসকুড়ি। যখন তখন ব্রণর হামলা আর কমছে কই? কোনও কোনও ক্ষেত্রে অকারণ প্রদাহ ও চুলকানিরও শিকার হতে হয়।
অনেকেই মনে করেন, নিশ্চয় কোনও না কোনও অ্যালার্জি থেকে এমনটা হচ্ছে। কিন্তু আদতে অনেক সময়ই দেখা যায়, রোগ তাড়াতে যা খাচ্ছেন, তা-ই পাল্টা অসুখ ডেকে আনে। ওষুধ। চিকিৎসকদের মতে, ভিলেন অনেক সময় এটাই। তাই সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্য তো বটেই, নিছক চামড়াকেও যদি সুস্থ, ঝকঝকে রাখতে চান, ওষুধ নিয়ে ছেলেখেলা করা চলবেন না একেবারেই।
নিজের ইচ্ছে মতো ওষুধ কিনে খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিলেও সেই ওষুধে আগে কোনও সমস্যা হয়েছে কি না তা ভেবে নিন। প্রয়োজনে সে কথা জানাতেও হবে চিকিৎসককে। যে সমস্ত ওষুধ মোটামুটি নিয়মিত খেতে হয় তারা কী ভাবে ত্বকের ক্ষতি করতে পারে, করলে কী করণীয়?
ওষুধের বিপদ
জ্বর বা পেটখারাপে হয়তো খেলেন সিপ্রোফ্লক্সাসিন। তার পর বেরোলেন রোদে। শুরু হল চুলকানি৷ প্রদাহ হয়ে ফোস্কা পরে গেল৷ ওশুধের প্রভাবেই হতে পারে এমন অ্যালার্জি। ন্যালিডিক্সিক অ্যাসিড খেলেও একই সমস্যা হতে পারে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ ত্বকে সহ্য না হলে কালো হয়ে যেতে পারে ত্বক। ক্লোরোকুইন বা ক্লোরপ্রোমাজিন থেকে রং বদলে যেতে পারে চুলেরও। আর্থ্রাইটিস বা সোরিয়াসিসের ওষুধ মিথোট্রিক্সেট থেকে মুখে ঘা হতে পারে৷ ব্যথার ওষুধ থেকে হতে পারে আমবাত।
যে কোনও প্রকার ক্রিম ব্যবহারের আগে সতর্ক হোন।
অ্যাসপিরিন শুধু ব্যথা নয়, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক ঠেকাতেও এর বিরাট ভূমিকা। কাজেই কোনও কোনও রোগীকে তা নিয়মিত খেতে হয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই এর ফলস্বরূপ চামড়ার নীচে রক্তপাত হতে পারে। অন্য কিছু ওষুধের যোগসাজসে অনেক সময় চামড়া লাল বা কালচে হতে পারে। ফোস্কাও দেখা দেওয়া অসম্ভব নয়।
নিওস্পোরিন বা লোকাল অ্যানেস্থেটিক মেশানো ক্যালামাইন লাগিয়ে চুলকানি, জ্বালা, ফুসকুড়ি হলে বুঝবেন কনট্যাক্ট ডার্মাটাইটিস হচ্ছে। বিসেষ করে কোনও স্টেরয়েড মেশানো ক্রিম— অনেকেই রং উজ্জ্বল করতে বছরের পর বছর মেখে যান এই ওষুধ। প্রথম দিকে ত্বকে জেল্লাও দেখা যায়। তার পর ধীরে ধীরে ব্রণর উপদ্রব সাঙঘাতিক বাড়ে। ত্বক পাতলা হয়ে সরু সরু রক্তনালী দেখা যায় অনেকের ৷ রোদে গেলেই লাল হয়ে যায় মুখ।
বডি বিল্ডিংয়ের অনুপান হিসেবে ওমনাকর্টিল বা বেটনিসল জাতীয় ওষুধ খেলে দিনে দিনে মুখের আকার গোল হয়ে মোটা হতে পারে। তার সঙ্গে সরু হাত–পা, চামড়ায় ফাটা দাগ, গায়ে–পিঠে–মুখে ব্রণ দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও প্রবল। ডায়াবিটিস বা হাইপ্রেশারও হতে পারে এর প্রভাবে।
আমাদের দেশে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নেওয়ার প্রবণতার চেয়ে নিজে নিজে ওষউধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে রোগ তাড়ানোর প্রবণতা বেশি। তাই এ দেশে ড্রাগ র্যাশ খুব সাধারণ অসুখ৷ যে কোনও ওষুধ থেকে যে কারও র্যাশ হতে পারে। প্রথমে লাল র্যাশের সঙ্গে চুলকানি হয়। পরে আস্তে আস্তে জায়গাটা কালো হয়ে যায়। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে সালফার ড্রাগ, টেট্রাসাইক্লিন, পেনিসিলিন, স্যালিসাইলেটস বা অন্য ব্যথার ওষুধ খেয়ে সারা শরীরের চামড়া উঠে এক্সফোলিয়েটিভ ডার্মাটাইটিস যেমন হতে পারে, হতে পারে অ্যাঞ্জিওইডিমাও। অর্থাৎ ঠোঁট–মুখ ফুলে শ্বাসকষ্টের উপদ্রব। সারা গায়ে ফোস্কা হয়ে এরিথিমা মাল্টিফর্মি থেকে ভয়ঙ্কর স্টিভেন জনসন সিনড্রোম। কুমারিন নামের ওষুধ থেকে অনেকের গ্যাংগ্রিন হয়। ব্যথার ওষুধ, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, মৃগী বা টিবির কিছু ওষুধ খেয়ে টক্সিক এপিডার্মাল নেক্রোলাইসিস হয়ে সারা শরীরের চামড়া পোড়া চামড়ার মতো উঠে যায়৷। ভাল করে চিকিৎসা না হলে রোগী মারাও যান কিছু ক্ষেত্রে।
বিভিন্ন ওষুধ থেকেও হতে পারে ত্বকের সংক্রমণ।
কী করণীয়
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ ছুঁয়েও দেখবেন না। প্রেসক্রিপশনের ওষুধেও যদি সামান্যতম সমস্যা হয়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসককে জানান। যে কোনও ত্বকের ক্রিম আগে থাই বা জঙ্ঘার উপর সামান্য ঘষে সারা দিন রাখুন। কোনও রকম র্যাশ বেরচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন। তার পর সেই ক্রিম ব্যবহার করুন। কোনও নির্দিষ্ট অসুখএ চলে না অনেক রকমে ওষুধ। তাই চিকিৎসকের কাচে একটি নির্দিষ্ট রোগ নিয়ে গেলেও অন্যান্য অসুখ সম্পর্কেও তাকে ওয়াকিবহাল করুন। স্টেরয়েডের যথেচ্ছ ব্যবহার কমান। দরকারে চিকিৎসকের কাছে জেনে নিন কোনও ওষুধে স্টেরয়েড আছে কি না। থাকলে তার ব্যবহার সম্পর্কেও বিষদে জানুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy