ডায়াবিটিসে সাবধান।—ছবি : শাটারস্টক
করোনা হলে মধুমেহ রোগীদের ইনসুলিন চিকিৎসাই নিরাপদ। সুগারের মাত্রা কমানোর বিশেষ ধরনের কিছু ওষুধ রোগীকে মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে, বলছে গবেষণা।
ডায়াবেটিক রোগীর শরীরে সুগারের মাত্রা কমানোর জন্য অনেক সময়েই তাঁকে এসজিএলটি-২ ইনহিবিটর গোত্রের ওষুধ দেওয়া হয়। এই ওষুধের সবচেয়ে বড় গুণ হল, এটি রোগীর শরীর থেকে দ্রুত অনেকটা গ্লুকোজ বের করে দিতে পারে। ফলে সুগারের মাত্রা সহজেই নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু, মুশকিল হয়, যখন এই প্রক্রিয়ায় শরীরের ইনসুলিনের পরিমাণও কমে যায়। কমে যাওয়া ইনসুলিন সেই ক্ষেত্রে বিপদে ফেলতে পারে রোগীকে। তেমন পরিস্থিতিতে বাড়তে পারে মৃত্যুর আশঙ্কাও।
করোনা হলে বিপদ বেশি
ডায়াবেটিক রোগীর করোনার হওয়ার পর বা করোনা হওয়ার পর ডায়াবিটিস হলে তাঁদের যদি এই জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়, তবে তা ঝুঁকি বাড়াবে রোগীর। ‘দ্য আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রোনোলজিস্টস’-এর একটি রিপোর্টে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এই তথ্য। সেই তথ্যকে যদি করোনা পরিস্থিতির নিরিখে ফেলে বিশ্লেষণ করা হয়, তবে তার ব্যাখ্যা অন্তত তাই দাঁড়াচ্ছে।
কী বলছে রিপোর্ট
রিপোর্ট অনুযায়ী, রোগীর শরীরে যদি ডায়াবিটিস, অত্যন্ত কম ক্যালোরির খাওয়া দাওয়ার অভ্যাস, ইনসুলিনের মাত্রা কমে যাওয়া-সহ বেশ কয়েকটি শারীরিক জটিলতা একসঙ্গে দেখা যায়, তবে তাঁরা আক্রান্ত হতে পারেন ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস (ডিকেএ) নামের এক ধরনের রোগে। যার মারণ ক্ষমতা রয়েছে।
বিশিষ্ট ডায়াবেটোলজিস্ট সতীনাথ মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, “ডিকেএ খুব খারাপ ধরনের একটি রোগ। এতে আক্রান্ত প্রায় ২ শতাংশ মানুষ এখনও মারা যান। তাই রোগটা বেশ গুরুতর। আর এই রোগ থেকে বাঁচতেও কিছুটা সচেতনতা দরকার। তবে তার মানে এই নয় যে, হঠাৎ করে সব ডায়াবেটিক রোগীদেরই ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণের ওই বিশেষ ধরনের ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে। করাটা ঠিকও নয়। কারণ এই রোগ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পৌঁছলে ওই ওষুধগুলোই তাঁদের সুগার নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগে।”
আরও পড়ুন : বদ্ধ ঘরে বসে কাজ, ব্যথা বেদনার পৌষমাস, কিন্তু বাঁচবেন কী করে?
তাহলে অসুবিধা কোথায়
সতীনাথের কথায়, “এসজিএলটি ২ ইনহিবিটর গোত্রের ওষুধ কিডনির সাহায্যে রেচন প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত গ্লুকোজ বের করে দেয় শরীর থেকে। ফলে স্বাভাবিক থাকে ব্লাড সুগারের মাত্রা। কিন্তু, জটিলতা বাড়ে যখন এই ব্লাড সুগার স্বাভাবিক দেখায় অথচ শরীরে ইনসুলিনের পরিমাণ একেবারেই কম থাকে।”
ইনসুলিন কমলে সমস্যা কেন
ইনসুলিন আমাদের শক্তি সরবরাহে সাহাষ্য করে। রোজ আমরা ভাত বা রুটি থেকে যে কার্বোহাইড্রেট খাই তা থেকে তৈরি হয় গ্লুকোজ। আর আমরা প্রত্যেক দিন যে কাজ করি তার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি আমাদের শরীরে আসে গ্লুকোজ থেকে। ইনসুলিন এই গ্লুকোজ থেকে শক্তি তৈরি করতে সাহায্য করে।
এখন শরীরে যদি ইনসুলিনই না থাকে তা হলে প্রয়োজনীয় শক্তি গ্লুকোজ থেকে আসবে কী করে? তখন দরকারি শক্তি পাওয়ার জন্য শরীর ভাঙতে শুরু করবে আমাদের ফ্যাট সেলগুলো। এই ফ্যাট সেলগুলো যত ভাঙবে শরীরে ততই তৈরি হতে থাকবে ফ্যাটি অ্যাসিড। আর এই ফ্যাটি অ্যাসিডই লিভারে এসে তৈরি করবে কিটোন বডি।
এই পরিস্থিতিতেই রোগীর শরীরে বাড়বে জটিলতা। বাড়বে ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। বিশেষ করে যদি রোগী ডায়াবেটিক হওয়ার পাশাপাশি কিটো ডায়েটে বা অত্যন্ত কম ক্যালারির ডায়েটে থাকেন, তা হলে। কেন না সে ক্ষেত্রে তাঁর শরীর সঠিক মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট পাচ্ছে না। শক্তি সঞ্চয়ের জন্য যেতে হচ্ছে ফ্যাট সেলগুলোর কাছেই। ফলে শরীরে বাড়ছে কিটোন বডির পরিমাণ। এই কিটোন বডি অত্যন্ত বেড়ে গেলে রক্ত অ্যাসিডিক হয়ে যায়। আর তখনই তৈরি হয় ডিকেএ-এর আশঙ্কা।
ডিকেএ কী
ডায়াবেটিক কিটো অ্যাসিডোসিস। নামেই বলা আছে এই অসুখের মূল তিনটি সমস্যা। ১, ডায়াবেটিক অর্থাৎ রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকতে হবে। ২, কিটো। শরীরে কিটোন ব়ডি থাকতে হবে। ৩, অ্যাসিডোসিস অর্থাৎ রক্ত অ্যাসিডিক হতে হবে। সতীনাথ বলছেন, “একইসঙ্গে রক্তে বেশি শর্করা, কিটোন বডি ও রক্ত অ্যাসিডিক হলে তবেই ডিকেএ হবে। না হলে নয়।’’
আরও পড়ুন : সৌরভ: কী হয়েছিল, কেন হয়েছিল
ডিকেএ + এসজিএলটি ২ = ঝুঁকি বৃদ্ধি
সে ক্ষেত্রে একজন রোগী যদি নিয়মিত এসজিএলটি ২ গোত্রের ওষুধ খেয়ে থাকেন এবং তিনি একইসঙ্গে। ডিকেএ-তেও আক্রান্ত হন, তবে তাঁর ঝুঁকি বাড়বে যদি তাঁর ব্লাড সুগারের মাত্রা স্বাভাবিক থাকে। কেন না সে ক্ষেত্রে কোনও চিকিৎসক তাঁর অসুস্থতার কারণ সহজে না বুঝতেও পারেন। এবং ভুল চিকিৎসায় তাঁর সুস্থ হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তে পারে ঝুঁকি।
করোনা হলে এই ঝুঁকি বাড়বে কেন
করোনা বা যে কোনও বড় রোগ শরীরের ইনসুলিনের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। তাই করোনা রোগী, যাঁর ডায়াবিটিস আছে, তিনি যদি এসজিএলটি ২ গোত্রের ওষুধ খেতে থাকেন, তবে তার ঝুঁকি বাড়বে। বিষয়টা খুবই বিরল হলেও অসম্ভব নয়। তাই ঝুঁকি এড়াতে রক্তে শর্করার চিকিৎসায় করোনা রোগীর ইনসুলিন চিকিৎসাই নিরাপদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy