Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Skincare

রূপকথার হিমরাজ্য

অঙ্গরাগ, প্রসাধনীর উপকরণ ঠান্ডা করে প্রয়োগ চলছে। উপাদানের তাপমাত্রা কমালে সৌন্দর্যের নাকি উত্তাপ বাড়ে! জেনে নিন কোল্ড থেরাপি সম্পর্কে

চিরশ্রী মজুমদার 
শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২১ ০৭:৫১
Share: Save:

বৃষ্টিভেজা দিনেও ভ্যাপসা গরমের কমতি কই? ও দিকে, যে দিন বৃষ্টি নেই সে দিন রোদের তেজ বুঝিয়ে দেয়, ক্রান্তীয় আর্দ্র গ্রীষ্ম আবহাওয়া কাকে বলে! ত্বকেও হাজির গরমের যন্ত্রণা। র‌্যাশ, লালচে ভাব, জ্বলুনি! ইস, ঘামাচিও। কায়দার পোশাক পরার শখে ওয়্যাক্সিং করলেও বিপত্তি। ক্রিম মালিশ করার পরেও ফুসকুড়ি দেখা দিচ্ছে! আর কেবলই তেলতেলে হয়ে যাচ্ছে ত্বক। এ সময়ে নিস্তার দেয় স্নানের পরে ফেস মিস্টের ঝিরঝিরে পরশ, কিংবা অ্যালো ভেরা জেলের হালকা ভিজে ভাব। ঠান্ডা ঠান্ডা আরামের প্রলেপে যখন আমাদের মন বুঁদ হয়ে গিয়েছে, তখনই ওই শীতল অনুভূতি চুপিসারে ত্বকের মেরামতিও সেরে ফেলে। শুধু গ্রীষ্ম আর বর্ষা নয়, যে কোনও ঋতুতেই ত্বকের যত্ন করে, বহু উপকারে লাগে শীতল উপকরণ। ত্বক পরিচর্যায় ‘কোল্ড কেয়ার’-এর প্রয়োগ বাড়ছে। বিনোদন জগতের তারকারা অনেকেই বলছেন, যে দিন ত্বকের অবস্থা খুব খারাপ, সিঙ্কে বরফ ঠান্ডা জলে মুখ ডুবিয়ে রেখেছেন, অমনি ত্বকে প্রাণ ফিরেছে। ফেসিয়ালে ‘ক্রায়ো ফ্রিজ় টুল’-এর ব্যবহারও জনপ্রিয় হয়েছে। দৈনন্দিন চর্চায় একটু একটু করে ‘শীতল স্পর্শ’ রাখুন, ত্বক সুফল পাবেই।

সৌন্দর্যের বরফ-সংরক্ষণ

শরীর গরম হয়ে উঠলে ঘাম হয়, তৈলগ্রন্থি থেকে তেল বার হয়। ফলে পিম্পল, সংক্রমণ, ব্যাকটিরিয়া-ছত্রাকের সমস্যা, লাল হয়ে ওঠা, জ্বলুনি ইত্যাদি বাড়ে। ঠান্ডা উপকরণ প্রয়োগে দেহের তাপমাত্রা কমিয়ে রাখতে পারলে এই সব থেকে রেহাই মিলবে।

ঠান্ডায় রোমকূপ সঙ্কুচিত হয়, ওপেন পোরসের সুরাহা হয়। বরফ দিলে বা ঠান্ডা কমপ্রেস করলে ফোলা ভাব কমে। ক্রায়ো টুলস দিয়ে মুখের ‘ডিপাফিং’ (ফোলা ভাব কমানো) করে ভাস্কর্যের মতো নিখুঁত গড়ন আনা হয়। জেড রোলার দিয়েও এ ভাবে ‘কুলিং এফেক্ট’ এনে ফেস টোনড করা যায়। আইস ফেস প্যাক বা জেলগুলি রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, চোখের নীচের ফোলা ভাব, বলিরেখা কমায়। তারুণ্য ধরে রাখে।

হঠাৎ অসুস্থ হলে, শরীর আনচান করলে ঘাড়ে জল দেওয়া হয়। কারণ, দেহে তাপমাত্রা হেরফেরের সময়ে ঘাড়ই সবচেয়ে সংবেদনশীল অঙ্গ হয়ে ওঠে। মুখে, গলায়, ঘাড়ে মিনিট দশেক কোল্ড কমপ্রেস করে, শরীর ঠান্ডা করে নেওয়া যায়। এর পর কোনও প্রডাক্ট ব্যবহার করলে তা ত্বকের ভিতরের স্তর পর্যন্ত পৌঁছবে। সপ্তাহে এক বার কাপড়ে চার-পাঁচ টুকরো বরফ দিয়ে ত্বকে কয়েক মিনিট কমপ্রেস করলেই উপযোগিতা বুঝতে পারবেন।

অনেক স্কিনকেয়ার প্রডাক্টেরই গায়ে লেখা থাকে, ঠান্ডা জায়গায় রাখতে হবে। অনেকেই ফ্রিজে ত্বকচর্চার উপকরণ রাখেন। বিশেষত যে প্রডাক্টগুলিতে অ্যাক্টিভ ইনগ্রিডিয়েন্টস রয়েছে, কম তাপমাত্রায় সেগুলি বেশি দিন ধরে কার্যকর থাকে। জলীয় সেরাম, ভিটামিন সি সেরাম, জেল জাতীয় প্রডাক্ট, লোশন, রেটিনয়েড, ফেস মাস্ক ফ্রিজে রাখলে পূর্ণমাত্রায় তার উপকারিতা পাওয়া যাবে।

ময়শ্চারাইজ়ার বা ক্রিমের কৌটো খোলামাত্রই তো বাইরের পরিবেশের সংস্পর্শে আসে। রোদ, তাপ, হাওয়া, পরিবেশের বা হাতের আঙুলের ব্যাকটিরিয়ার সংস্পর্শে তার কিছু রাসায়নিক বিক্রিয়া, উপাদানের রূপান্তর হয়। বার বার এমন হতে থাকলে ওই প্রডাক্টের গুণমান কমতে পারে। ফ্রিজে প্রডাক্টগুলি রাখলে এই বিক্রিয়ার সম্ভাবনা কমে। কম তাপমাত্রায় ব্যাকটিরিয়া, ছত্রাকও নষ্ট হয়ে যায়।

কুলিং জেল, বিউটি ফ্রিজ

পেশাদারেরা ড্রাই আইস ব্যবহার করে ক্রায়োজেনিক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে তিল, আঁচিল ইত্যাদির নিরাময় করেন। পার্লার বা সালঁ-য় কোল্ড সওনা, ক্রায়ো টুলসের মাধ্যমে ঠান্ডা আবেশ এনে ত্বক তরুণ ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল করে তোলা হয়। বাড়িতে আইস প্যাক ছাড়াও জেড রোলার, আইসি শিট মাস্ক, অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ কুলিং জেল প্রয়োগ করতে পারেন। ফ্রুট ফেসিয়ালের ক্ষেত্রেও ঠান্ডা ফলের টুকরো দিয়ে ত্বকের দীপ্তি ফেরানো হয়।

গোলাপ, ক্যামোমাইলের পাপড়ি জলে ভিজিয়ে ফ্রিজে রাখুন। ফেসিয়াল রোলারে ওই জল ভরে মুখে মাসাজ করলে আরাম পাবেন, ত্বক সজীব ও তরুণ হয়ে উঠবে।

ত্বক পরিচর্যার প্রডাক্টগুলির সেরা ফল পেতে অনেকেই সেগুলি ‘বিউটি ফ্রিজ’-এ রেখে দেন। সাধারণ ফ্রিজে আনাজ, মাছ-মাংস বা রান্না করা খাবারের পাশে ত্বকে ব্যবহারের উপকরণ রাখা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। খাবারের গন্ধের রেশ লাগতে পারে। ফেস মাস্ক ও যাবতীয় রূপচর্চার উপাদান গুছিয়ে রাখার আলাদা ‘বিউটি ফ্রিজ’ রাখুন। সুদৃশ্য, অল্প জায়গায় রাখা যায়, দাম নাগালের মধ্যেই। বেড়াতে গেলে সঙ্গেও নিয়ে যাওয়া যায়। ত্বক রুটিনের প্রডাক্টগুলির বেশির ভাগই কি কম তাপমাত্রায় সংরক্ষিত থাকলে ভাল থাকবে? তা হলে, মিনি বিউটি ফ্রিজ কিনে নিলে সুবিধে প্রচুর।

কর্মক্ষেত্রে সেরাটা বার করতে চাইলে মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার। সে রকম সৌন্দর্যশাস্ত্রেও অল্প একটু হিমেল উপটানের জয়জয়কার।

মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, সৃজলা গুহ; মেকআপ: সৈকত নন্দী (সুস্মিতা), চয়ন রায় (সৃজলা)
ছবি: শুভদীপ সামন্ত

অন্য বিষয়গুলি:

Lifestyle Tips Skincare Aloe Vera
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy