যত বেশি আরাম করে কাজ করছেন তত চাপ পড়ছে শরীরের প্রতিটি পেশী, সন্ধি, চোখে। ছবি: পিক্সাবে।
ঘরে বসে কাজ করাটা বেশ আরামের হবে বলে ভেবেছিলেন অনেকে৷ যাতায়াতের ধকল কমবে, বাড়িতে সময় দেওয়া যাবে, ঘরের খাবার খাওয়া যাবে, বিশ্রাম হবে ইত্যাদি ইত্যাদি৷ সবগুলিই হয়েছে কম-বেশি৷ তবে তার সঙ্গে এসে জুটেছে বেশ কিছু ঝামেলাও৷
৮ ঘণ্টা কাজের সময় বাড়তে বাড়তে ঘণ্টা দশেক হয়ে গিয়েছে অনেকেরই৷ বন্ধ হয়েছে এ টেবিল সে টেবিলের আড্ডা ও সেই সুবাদে অঢেল রিল্যাক্সেশন৷ ফলে ক’দিন যেতে না যেতেই একঘেয়ে লাগতে শুরু করেছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’৷ সঙ্গে যোগ হয়েছে ঘাড়ে-কোমরে ব্যথা, কখনও আবার ব্যথা সারা শরীরে৷ গা ম্যাজম্যাজ, মাথা টিপটিপ, বিরক্তি৷ শুয়ে-বসে-গড়িয়ে রিল্যাক্স করে কাজ করেও যা কমছে না একচুল৷ বরং বেড়েই চলেছে৷
ব্যথা বাড়বে
আগে কাজ করতেন নির্দিষ্ট চেয়ার-টেবিলে বসে৷ বেশির ভাগ সময় ডেস্কটপে৷ মাঝে মাঝে উঠতেন৷ এ দিক সে দিক যেতেন৷ ঘাড়-কোমরের আড় ভেঙে নেওয়ার সুযোগ ছিল৷ তার পর ছিল অফিস ও এখানে সেখানে যাতায়াত, সিঁড়ি ভাঙা৷ ফলে সারা শরীর সচল থাকত৷ এখন যত বেশি আরাম করে কাজ করছেন তত চাপ পড়ছে শরীরের প্রতিটি পেশী, সন্ধি, এমনকি চোখেও। সব মিলিয়ে সমস্যা বাড়ছে৷ এ ব্যথা আসলে ভুল ভাবে রিল্যাক্স করার ফল৷
আরও পড়ুন: বাইরে সংক্রমণের ভয়, ছাদে হাঁটলে কতটা কাজ হবে?
রিল্যাক্সেশনের ব্যথা
অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ কুণাল সেনগুপ্তর ব্যাখ্যা, “শুয়ে-বসে-গড়িয়ে যদি কাজ করেন, তা হলে আর ব্যথার দোষ কী!” যেখানে নির্দিষ্ট দূরত্বে কম্পিউটার রেখে সঠিক চেয়ারে সোজা হয়ে বসে, ঘাড় সোজা রেখে কাজ করার কথা, সেখানে এমন ভাবে কাজ করছেন যে শরীরের প্রতিটি পেশী, সন্ধি ভুল ভাবে থেকে যাচ্ছে বেশ খানিকটা সময়৷ আবার যখন অন্য ভাবে বসলেন বা শুলেন, তখনও সেই এক ব্যাপার৷ শরীরের কোনও পেশী বা সন্ধিই যে ভাবে তার থাকার কথা, সে ভাবে থাকতে পারছে না৷ তার ফলই ব্যথা৷ যত এ জিনিস চালিয়ে যাবেন, তত বাড়বে ব্যথা৷ এবং যত দিনে লকডাউন খুলবে বা আপনার বাড়ি বসে কাজ করার পর্ব চুকবে, ব্যথার ধাতই হয়তো হয়ে যাবে৷ তখন তাকে সারানো এক বিরাট ঝকমারি ব্যাপার হবে৷”
কম্পিউটারে ঘণ্টা খানেক কাজ করার পর মিনিট দশেক চোখের কাজ বন্ধ রাখুন৷ ছবি: পিক্সাবে।
আরও পড়ুন: স্বাদ মিলবে, পাওয়া যাবে পুষ্টিগুণও, বিকেলের জলখাবারে রাখুন এ সব পদ
তার উপর কাজ করছেন ঘরে বসে। দিনের বেশির ভাগ সময় রোদ গায়ে লাগছেই না সে ভাবে। কাজেই ভিটামিন ডি-র ভাঁড়ার যদি আগে থেকে টইটুম্বুর না থেকে থাকে, যার সম্ভাবনা খুব কম, সে বাবদও ব্যথা বাড়তে পারে৷ কাজেই সতর্ক হোন৷
সতর্ক হোন
• অফিসে যেমন চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করতেন, এখনও সে ভাবে করুন৷ মাঝেমধ্যে এক-আধ বার বিছানা বা সোফায় বসে কাজ করলেও খেয়াল রাখুন ঘাড় ও কোমর যেন সোজা থাকে৷
• চেয়ার টেবিলের উচ্চতা এমন রাখুন যাতে ঘাড় সোজা রেখে কাজ করতে পারেন৷
আরও পড়ুন: চনমনে থাকতে চান? চেয়ারে বসেই অভ্যাস করুন এই ব্যায়াম
• কাজের মাঝে ফোন এলে কাঁধ আর ঘাড়ের মাঝে ফোন ধরে কাজ চালিয়ে যাবেন না৷ হয় স্পিকার চালু করুন, না হলে ইয়ার ফোনে কথা বলুন, নয়তো কাজ বন্ধ রাখুন সেই সময়টুকু।
• সাধারণ চেয়ারে বসে কাজ করলে কোমরের কাছে কুশনের সাপোর্ট দিন৷
• কম্পিউটারে ঘণ্টা খানেক কাজ করার পর মিনিট দশেক চোখের কাজ বন্ধ রাখুন৷ ফাঁকা পেয়েছেন বলে একটু টিভি দেখে নিলেন বা মোবাইল চেক করলেন, তা কিন্তু হবে না৷ একটু চলাফেরা কি স্ট্রেচিং করলে বা চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে চোখ, ঘাড়, কোমর সবই বিশ্রাম পাবে৷
• ৮-১০ ঘণ্টা কাজের মাঝে কম করে দু’বার খোলা হাওয়ায় ১০-১৫ মিনিট ঘুরে আসুন৷ বাইরে যাওয়া তো এখন সম্ভব নয়, তাই ছাদেই একটু পায়চারি করে নিন৷
• দিনে অন্তত এক বার কয়েকটি ব্যায়াম করুন৷
ব্যায়াম
ঘাড়-কোমরের পেশী সবল করার ব্যায়াম করতে হবে৷ ছবি: পিক্সাবে।
সচল থাকতে হবে যথাসম্ভব৷ তার পাশাপাশি কয়েকটি স্ট্রেচিং ও ঘাড়-কোমরের পেশী সবল করার ব্যায়াম করতে হবে৷ যেমন—
• দিনে এক বার কী দু’বার ১৫-২০ মিনিট একটু জোরে হাঁটুন৷
• রোটেশনাল নেক এক্সারসাইজ করুন৷ ব্যাপারটা আর কিছুই না, প্রথমে সোজা দাঁড়িয়ে বা বসে ঘাড় পিছনে নিয়ে ছাদের দিকে তাকান৷ এ বার ঘাড় ঝুঁকিয়ে তাকান মেঝের দিকে। এর পর পর্যায়ক্রমে ডান দিকে ও বাঁ দিকে তাকাবেন৷ এই ব্যায়াম ঘাড়কে সচল রাখে৷
• এ বার করুন স্ট্যাটিক নেক এক্সারসাইজ। বাঁ হাত দিয়ে মাথা ডানদিকে ঠেলুন, মাথা সোজা থাকবে৷ এ বার ডান হাতের চাপে মাথাকে বাঁ দিকে ঠেলার চেষ্টা করুন। এ ক্ষেত্রেও মাথা সোজা থাকবে৷ মাথার পিছনে দুই হাত জড়ো করে মাথা সামনে ঠেলুন৷ মাথা সোজা থাকে যেন৷ কপালে দুই হাত রেখে মাথা পিছনে ঠেলবেন৷ এ বারও মাথা সোজাই থাকবে৷ তিনটে করে সেট করবেন৷
• কোমরের ব্যথা কম রাখতে করবেন ভুজঙ্গাসন ও শলভাসন৷
• কাজের মাঝে উঠে একটু আড়মোড়া ভাঙার মতো করবেন৷
আরও পড়ুন: রেমডেসিভির কী? আর কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে এই ওষুধ
খাওয়া-দাওয়া
বাড়ির খাবার যেমন খাচ্ছেন খান, সঙ্গে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার একটু খেতে হবে৷ কাজেই ডিম, দুধ, দই খাওয়ার চেষ্টা করুন নিয়মিত৷ জল খাবেন পর্যাপ্ত৷ চা-কফি-কোল্ডড্রিঙ্কে-মদ-সিগারে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy