ইউরিক অ্যাসিডের ব্যথায় কষ্ট পাচ্ছেন সারা পৃথিবীর প্রায় ৪ কোটি মানুষ।
কেউ টম্যাটো বর্জন করেছেন, কেউ ঢ্যাঁড়শ পাতে নেন না, অনেকে আবার পিকনিকে গিয়ে শুকনো মুড়ি চিবিয়ে কাটান। জিজ্ঞাসা করলে একটাই উত্তর— ইউরিক অ্যাসিড আছে! বিশ্বের প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মানুষ এই কারণে কষ্ট পাচ্ছেন। প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ ইউরিক অ্যাসিডে গাঁটের ব্যথায় শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আমেরিকান কলেজ অফ রিউম্যাটোলজির এক গবেষণাপত্র এই তথ্য জানিয়েছে।
সত্যিই কি ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কড়া নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক? এই প্রশ্নের উত্তরে ইন্টারন্যাল মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার জানালেন খাওয়া কমালেই ইউরিক অ্যাসিড কমে না। খাবার হজমের সময় ইউরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এটা মূত্রের স্বাভাবিক উপাদান। মাত্রাতিরিক্ত প্রোটিন খেলে বা ওজন বাড়লে কখনও কখনও ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। ‘‘বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড শরীরের অস্থিসন্ধি ও মূত্রনালীতে থিতিয়ে পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করে,’’ বললেন দীপঙ্কর সরকার। থিতিয়ে পড়া ইউরিক অ্যাসিড ক্রিস্টালের আকার নেয়। এটি গাঁটে ব্যথা ও প্রস্রাবের সংক্রমণ ডেকে আনে। এ ছাড়া কিডনিতে পাথরও জমতে পারে। খাবার বন্ধ করে দিলেই যে এই সমস্যা মিটে যাবে, সেকথা ঠিক নয়, বলছেন দীপঙ্কর।
বেশ কয়েক বছর আগেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে নানা খাবারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু এখন নির্দিষ্ট কিছু খাবার ছাড়া, নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে সবই খাওয়া যায়। এমনই জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ সুবর্ণা রায়চৌধুরী। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এমন খাবার খাওয়া চলবে না, যাতে ওজন বেড়ে যায়। ইউরিক অ্যাসিড বাড়লে পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খেতে হবে। দিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার জল খেলে, ইউরিক অ্যাসিড কমে যায়।
একাধিক কারণে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়তে পারে।
যাঁরা প্রত্যেকদিন প্রচুর পরিমাণে মাছ-মাংস খান, তাঁদের ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাবার ঝুঁকি বেশি। মদ্যপান ও কার্বোনেটেড কোলা জাতীয় ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ম করে খেলেও ইউরিক অ্যাসিড বাড়ে। স্বাভাবিকের থেকে বেশি ওজন হলেও ঝুঁকি থাকে। অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা কিছুটা বংশগত। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার ঝুঁকি বেশি। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, কিডনির অসুখ থাকলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যেতে পারে।
কী কী খাবার বন্ধ করতে হবে
কৃত্রিম রং, চিনি বা কর্ন সিরাপ দেওয়া খাবার একেবারে বন্ধ করা উচিত। কোলা জাতীয় পানীয়, রং দেওয়া জেলি, জ্যাম, সিরাপ, কৌট বন্দি ফ্রুট জ্যুস খাওয়া চলবে না। বলছেন দীপঙ্কর সরকার। স্মোকড ও ক্যানড ফুড খাওয়া চলবে না। আচার, চানাচুর, নোনা মাছ খাওয়া বন্ধ রাখতে হবে। পালং শাক, বিনস, বরবটি, রাজমা খেলে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যায়। তবে রান্না করা শিম, কড়াইশুঁটি, ঢ্যাঁড়স বা টোম্যাটো খেলে কোনও সমস্যা হয় না, মত সুবর্ণা রায়চৌধুরীর। পালং শাক, পুঁই শাক, মুসুর ডাল, বিউলি ডাল, মাটন, সমুদ্রের মাছ খাওয়া মানা। মাছ, চিকেন বা ডিম খাওয়া যায়। তবে সব মিলিয়ে দিনে ৫০ গ্রামের বেশি নয়। সুবর্ণা বলছেন, মাছ বা চিকেন নিয়মিত খাওয়া গেলেও, মাছের মুড়ো, চিকেন বা মাটনের মেটে বাদ দিন। রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেলে মূত্রনালীতে ইউরিক অ্যাসিড জমে স্টোন তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই দিনে সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার জল খান। ওজন স্বাভাবিক রাখতে সপ্তাহে ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করুন।
আরও পড়ুন: কখন ব্যায়াম করলে ওজন কমবে সবচেয়ে বেশি
আরও পড়ুন: বেশি করে জল খান, ওজন দ্রুত কমতে পারে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy