— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বয়স বাড়ার সঙ্গী শরীরের নানা অংশে ব্যথা-বেদনা। এ ছাড়া আচমকা কোনও আঘাত থেকে বা দীর্ঘ দিনের শারীরিক কোনও সমস্যা থেকে পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে, যন্ত্রণা হয়। এই মাসল পেন বা মাংসপেশির যন্ত্রণাকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় মায়ালজিয়া।
মায়ালজিয়া কেন হয়?
সারা শরীর জুড়েই রয়েছে অজস্র পেশি। শরীরের যে কোনও অঙ্গ মায়ালজিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। মায়ালজিয়ার পিছনে কোনও একটি নির্দিষ্ট কারণ থাকে না। বিভিন্ন কারণে ব্যথা হতে পারে। হঠাৎ আঘাতে শিরা ছিঁড়ে, হাড় ভেঙে গিয়ে, পেশিতে টান লেগে যেমন ব্যথা হতে পারে, আবার দীর্ঘ দিনের কোনও অসুখের জন্য বা অনেক দিন ধরে কোনও ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ার সময়ে পেশিতে ব্যথা হতে পারে। শরীরের কোথাও ফুলে গেলে বা প্রদাহ হলে পেশির উপরে তার প্রভাব পড়ে। গর্ভবতী অবস্থায় মহিলাদের কোমরে ব্যথা হয়। ডা. সুবীর মণ্ডল বললেন, “চোট, মচকানো, আঘাত বা অন্য কোনও অসুখের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শুধু নয়, শরীরে ভিটামিন ই, ডি, বি ১২, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়ামের ঘাটতির জন্যও মায়ালজিয়া হয়। ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গিয়ে ব্যথা হতে পারে। অনেকেই শরীর হাইড্রেটেড রাখতে প্রচুর জল খান। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত জলপানে শরীরে পটাশিয়াম কমতে থাকে। পটাশিয়ামের ঘাটতিতেও ব্যথা হয়। আবার এর উল্টোটাও হয়, ডিহাইড্রেশনের জন্য মাসল ক্র্যাম্প হয়, যা অসম্ভব যন্ত্রণার।’’ এ ছাড়া শারীরচর্চা করার সময়ে বেকায়দায় পেশিতে টান লেগে মাসল ক্র্যাম্প হতে পারে। বাত থেকে, অর্থোপেডিক অপারেশনের পরেও মাসল পেন হয়। শিরায় রক্ত জমাট বেঁধে ব্যথা হতে পারে। যেমন মস্তিষ্কে রক্ত জমে গেলেও যন্ত্রণা হয়। অনেক সময়ে ব্যথার সঙ্গে জ্বর আসে, র্যাশ
বেরোয়, এটা ডেঙ্গির লক্ষণ।” কোভিডেরও অন্যতম লক্ষণ ছিল মাসল পেন। এমন হাজারটা কারণ আছে মায়ালজিয়ার।
চিকিৎসা
চিকিৎসার জন্য ব্যথার ধরনের পাশাপাশি রোগীর মেডিক্যাল হিস্ট্রি জানা জরুরি। এই প্রসঙ্গে ডা. মণ্ডল বললেন, ‘‘ঠিক মতো চিকিৎসার জন্য ব্যথা কত দিন ধরে হচ্ছে, ধীরে ধীরে বাড়ছে, নাকি মাঝেমাঝে হচ্ছে সেটা জানা দরকার। এক টানা কাজের পর বা খুব বেশি হাঁটাচলা থেকে ব্যথা হতে পারে। ক্রনিক কোনও রোগ আছে কি না, যেমন ডায়াবিটিস, কিডনির সমস্যা, অটোইমিউন সমস্যা আছে কি না দেখতে হয়। আমরা ব্যথা অনুভব করি নার্ভ বা স্নায়ুর জন্য। ব্যথার উৎপত্তিস্থলের স্নায়ু মস্তিষ্কে সঙ্কেত দেয় বলে যন্ত্রণা অনুভব করি। পেশির সঙ্গে স্নায়ুও জড়িত। তাই যে স্থানে ব্যথা হয় তার চারপাশে খুঁটিয়ে কারণ খুঁজতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী এক্স-রে, এমআরআই ইত্যাদি করে দেখে
নেওয়া হয়।’’
পেশির ব্যথা অন্য রোগেরও লক্ষণ হতে পারে
শরীরে কোথাও এক-দু'দিন ব্যথা হয়ে বন্ধ হয়ে গেলে সেটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই বলে মনে করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ব্যথা যদি থেকে থেকেই ফিরে আসে, তা হলে সচেতন হতে হবে। দেখতে হবে তার সঙ্গে অন্য কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। যেমন জ্বর আসা বা র্যাশ বেরোনো ইত্যাদি।
ব্যথার ওষুধ
অল্পতেই ব্যথা কমানোর ওষুধ খাওয়া সমর্থন করেন না অধিকাংশ চিকিৎসক। দুর্ঘটনায় ব্যথা পাওয়া ছাড়াও যদি বারবার ব্যথা ঘুরেফিরে আসে, তার মানে শরীরে কোনও সমস্যা হয়েছে, চিকিৎসার প্রয়োজন। ‘‘আমি মনে করি ব্যথা ভাল! যেমন পায়ে যদি ব্যথা হয়, তা হলে সে হাঁটার সময়ে সচেতন হবে। ব্যথার ওষুধ খেয়ে ধামাচাপা দিলে শরীরের ভিতরে সমস্যার সমাধান হবে না, ফলে আরও ক্ষতি হবে। তা ছাড়া অনেক সময়ে ব্যথার ওষুধ বন্ধ করে দিলে ব্যথা প্রবল আকারে ফিরে আসে। একে রিবাউন্ড পেন বলে। ডাক্তাররা সাধারণত পেনকিলার দেন না। দেওয়া হয় মাসল, নার্ভ রিল্যাক্স করার ওষুধ। খুব প্রয়োজনে খেতে পারেন প্যারাসিটামল। আর ওষুধের বিকল্প RIPE পদ্ধতি,” বললেন ডা. মণ্ডল।
RIPE পদ্ধতি আসলে কী?
আর (R) মানে রেস্ট বা বিশ্রাম নেওয়া। আই (I) অর্থাৎ আইস কমপ্রেস বা ঠান্ডা সেঁক দিয়ে ব্যথা কমানো। যদি কোনও জায়গায় প্রদাহ হয়ে গরম হয়ে যায় তা হলে ঠান্ডা সেঁক দিতে হবে। পি (P) হল ফিজ়িয়োথেরাপি। ক্রনিক ব্যথা নিয়ে যাঁরা সমস্যায়, তাঁরা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ফিজ়িয়োথেরাপি করাতে পারেন। এ ছাড়া রোজ যদি হাত, পা, কোমরের কয়েকটি ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ় করা যায়, তা হলে স্পন্ডিলোসিস বা ফ্রোজ়েন শোল্ডারের মতো সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া যায়। যেমন রোজকার কাজে হাত উপরে তোলা বা পাশে ছড়ানো কমই হয়। তাই মনে করে এমন ফ্রিহ্যান্ড করতে হবে, এতে পেশি শক্ত হবে। ই (E) এলিভেটিং। প্রয়োজনে পা, হাত একটু উঁচু করে রাখতে হবে। এতে প্রদাহ কিছুটা কমে যেতে পারে।
পেশির ব্যথার কারণ ভিন্ন, তাই চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্ন। মনে রাখতে হবে, ব্যথা অনেক রোগের লক্ষণ। তাই ক্রনিক ব্যথা ফেলে না রেখে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy