Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পরশ হোক নিরাপদ

করোনাকালে স্পর্শের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিপদের ভয়। তবে ‘টাচ’ বাঁচিয়ে আর যাই হোক বিউটি থেরাপি কি সম্ভব? ইদানীং কিন্তু সে পথও খুলে গিয়েছে। কী ভাবে তা সম্ভব হচ্ছে, জেনে নিন বিশদে ফেসিয়াল, স্পা, পেডিকিয়োর, ম্যানিকিয়োর, থ্রেডিং করতে গেলে বিউটিশিয়ানের সংস্পর্শে আসতেই হয়।

ঈপ্সিতা বসু
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

বাড়িতে যতই ফেসিয়াল, বডি স্পা করি না কেন, পেশাদার বিউটিশিয়ানের ‘টাচ’টা-র জন্য মন কেমন করে। আর সত্যিই কিছু কিছু যত্ন আর ফিনিশিং পার্লারে যেমনটা হয়, বাড়িতে ঠিক তেমনটা সম্ভব হয় না। কিন্তু এই স্পর্শের সুযোগটি ভাইরাস যাতে নিতে না পারে, তার জন্য অনেক পার্লারই নিয়ে এসেছে পারসোনালাইজ়ড অ্যান্ড কনট্যাক্টলেস বিউটি ট্রিটমেন্ট। বিউটিশিয়ান ও ক্লায়েন্টের স্পর্শের মধ্যে সেতু গড়ে দিচ্ছে ছোট ছোট ইকুইপমেন্টস।

ফেসিয়াল, স্পা, পেডিকিয়োর, ম্যানিকিয়োর, থ্রেডিং করতে গেলে বিউটিশিয়ানের সংস্পর্শে আসতেই হয়। এখান থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রিটমেন্টের পদ্ধতিতে খানিকটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়েছে কলকাতার বেশ কয়েকটি সালঁয়। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লায়েন্টদের জন্যও কিছু নিয়ম রাখা হয়েছে বলেই জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ জলি চন্দ্র। তাঁর মতে, ‘‘রূপচর্চার প্রতিটি বিভাগে হয়তো পুরোপুরি ‘নো-টাচ রুল’ প্রয়োগ করা সম্ভব নয়। তবে ধীরে ধীরে কয়েকটি সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে কনট্যাক্টলেস সার্ভিস।’’

পারসোনালাইজ়ড পরিষেবা

• সালঁয় ঢোকার মুখে দরজা খুলে দিচ্ছেন কর্মীরাই। শরীরের তাপমাত্রা মাপা, স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করা হচ্ছে।

• ক্লায়েন্টকে তৈরি করার আগে সালঁ কর্মীরা ডিসপোজ়েবল গ্লাভস, মাস্ক ও ফেসশিল্ড পরছেন। প্রত্যেক ক্লায়েন্টকে দেওয়া হচ্ছে ডিসপোজ়েবল হেড ব্যান্ড, ব্রাশ, তোয়ালে, শু কভার।

• শ্যাম্পু, ক্রিম, লোশন ক্লায়েন্টের প্রয়োজনমতো আলাদা করে তুলে রাখা হয়।

• ছুরি, কাঁচি, চিরুনি ইত্যাদি স্টিম স্যানিটাইজ় করার পরই ব্যবহার হয়।

থ্রেডিংয়ের পালাবদল

পার্লারে যাওয়ার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পড়ে থ্রেডিংয়ের জন্য। এখানে ক্লায়েন্ট ও বিউটিশিয়ান খুব কাছাকাছি চলে আসেন বলে বিউটিশিয়ান মাস্ক, গ্লাভস ও ফেস শিল্ড পরছেন। থ্রেডিং করার অংশে পাউডার হাতের বদলে তুলোয় করে লাগিয়ে দেওয়াটা নয়া নিয়ম। থ্রেডিংয়ে ব্যবহৃত সুতো মুখ দিয়ে ধরলে তার মাধ্যমে স্যালাইভা ট্রান্সফার হতে পারে। তাই সালঁ কর্মীরা গলায় সুতো বেঁধে নিচ্ছেন। কোনও কোনও জায়গায় থ্রেডিং ব্যান্ডও ব্যবহার করা হচ্ছে। এই ব্যান্ডে সুতো আটকানোর সুবিধে রয়েছে।

কনট্যাক্টলেস ফেসিয়ালে...

কলকাতার হাতে গোনা সালঁতে শুরু হয়েছে কনট্যাক্টলেস ফেসিয়াল। ফেসিয়াল মানেই টাচ থেরাপি। এর প্রধান উদ্দেশ্য রিল্যাকসেশন। আঙুলের নিবিড় ছোঁয়ায় নির্জীব ত্বক পায় নতুন প্রাণ। কিন্তু করোনা আবহে বিউটি থেরাপিতে আঙুলের স্পর্শের জায়গা নিয়েছে নানা ভাইব্রেটর। ফেসিয়ালের পুরো পদ্ধতিই স্পর্শবিহীন করতে ক্লেনজ়িং থেকে ফেসপ্যাক— অন্তত চার-পাঁচটি মেশিনের প্রয়োজন। সঙ্গে ত্বকের সমস্যা থাকলে আরও ইকুইপমেন্ট লাগে। প্রতিটি যন্ত্রের ভূমিকা আলাদা। ত্বক পরিষ্কার রাখতে, আর্দ্রতা বাড়াতে, বলিরেখা দূর করতে, ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি পেতে... এই সমস্ত ছোট-ছোট বৈদ্যুতিন যন্ত্রই হয়ে উঠেছে সৌন্দর্য চর্চার আশ্চর্য প্রদীপ, যার সলতে পাকানো শুরু স্কিন ক্লিনারে। ফেসিয়ালের প্রথম ধাপ ক্লেনজ়িং। ডিসপোজ়েবল স্প্যাচুলা দিয়ে ক্লেনজ়িং লোশন লাগানোর পরে ক্লিনিং, স্ক্রাবিং ও স্কিন লিফটিংয়ে সাহায্য করে যন্ত্র। এমনকি টোনারের কাজটিও করে দেয় সে। আলট্রাসোনিক যন্ত্রের কম্পনে মাসাজ ক্রিম ত্বকের গভীরে পৌঁছয়। ত্বকের দাগছোপ দূর করতে, বলিরেখা কমাতে, ত্বকের আর্দ্রতা ফেরাতে... এই মেশিন খুবই কার্যকর। আছে গ্যালভানিক মেশিন, যা ত্বকের দাগছোপ মিলিয়ে দেয়, ব্রণর সমস্যায় কাজ করে। শেষে কোল্ড অ্যান্ড হট হ্যামার মেশিন ত্বকের স্নায়ু শান্ত করে। এতগুলো মেশিন চালানোর ফলে ত্বকের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এই যন্ত্রটির সাহায্য দরকার। পোরস খুলে গিয়ে ত্বকের আর্দ্রতায় সমতা ফিরিয়ে টেক্সচার নরম করতে এর জুড়ি নেই।

নরম হাতের ওম জুড়িয়ে দেয় শরীর-মন। কিন্তু যন্ত্র কি আনতে পারে একই অনুভূতি? বিউটিশিয়ান মৌসুমি মিত্রের মতে, ‘‘ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেস মাসাজে যে প্রডাক্ট ব্যবহার করা হয়, তা যেন ত্বকের গভীরে ভাল ভাবে পৌঁছতে পারে, সেটাই মাসাজের উদ্দেশ্য। যন্ত্রের প্রেশার কন্ট্রোল করা যায় বলে, পারসোনালাইজ় হয় বেশি।’’ ত্বকে বেশি ব্রণ থাকলে হাতের তুলনায় মেশিন ভাল কাজ করে। আঙুল দিয়ে প্রেশার পয়েন্টস জাগিয়ে রক্তসঞ্চালনের মাত্রা বাড়ানোয় মেশিন ম্যাজিকের মতো কাজ করে। এ ছাড়া ত্বকের হাইড্রেশনের জন্য, সাইনাস টিসু উদ্দীপ্ত করতেও ফেস মাসাজার অনেক বেশি কাজের।

পায়ের পরিচর্চায়

বাবলিং মেশিন আর ছোট-ছোট ইকুইপমেন্টের সাহায্যে স্পর্শ ছাড়াই পেডিকিয়োরও সম্ভব। সালঁতে নেল কাটিং, ফাইলিং ও বাফার অংশটুকু ছাড়া পুরো প্রক্রিয়াটাই স্পর্শ ছাড়া করে ফেলা যায়। পেডিকিয়োর টাবে উষ্ণ জলে আরাম নিতে বসে পড়ুন। মেশিনের কম্পনে পায়ের সঙ্গে শরীরের পেশিসন্ধিও ‘রিল্যাক্সড’ হবে। এর ফলে পায়ের মৃত কোষ উঠে ত্বক ঝকঝকে হয়ে উঠবে। ফাটা গোড়ালির পরিচর্যার জন্য রয়েছে রুটস পেডিট্রিক্স ইলেকট্রিক ফিট ফাইল। ইচ্ছে হলে লেগ বা ফিট মাসাজারে ব্যথার জায়গাগুলো আলতো মাসাজ করা যেতে পারে।

বডি মাসাজে মেশিনের জাদু

শরীরে ব্যথার সমস্যা তো কমবেশি সকলেরই। তাই কয়েকটি স্পা-এ শুরু হয়েছে স্পর্শবিহীন মাসাজ। ঘাড় ও কোমরে ব্যথা হলে জাকুজ়ি পেডিকিয়োর স্পা চেয়ারের সঙ্গী হন। একটু সময় দিন, ব্যথা অনেকটাই কমবে। ঈষদুষ্ণ জলে এক চামচ বাথ সল্ট দিয়ে পা ডুবিয়ে বসে থাকুন মিনিট ১০-১৫। সারা দিন দাঁড়িয়ে, বসে, ঝুঁকে হাজারো কাজ করে পায়ে যে ব্যথা হয়েছে, তাতে আরাম পাবেন।

বিউটি থেরাপিতে নতুন সংযোজন আঙুলের মাসাজ। হাতের আঙুলের জন্য ফিঙ্গার মাসাজের ১৫ মিনিটের পারসোনালাইজ়ড পরিষেবা মিলছে অনেক সালঁতে। হেড মাসাজে টাচবিহীন স্পায়ের আরাম মেলে বৈদ্যুতিন রুট অ্যাক্টিভেটিং মাসাজারে। তার একটানা কম্পনশক্তি আনতে পারে হাতের ওম। ব্যথা বেশি হলে মেশিনই জাদুমন্ত্র। রূপবিশেষজ্ঞদের মতে, হাতের ব্যবহার কমিয়ে মেশিনের সাহায্যে সুন্দর স্পা করাটাই এখন রূপচর্চায় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

হেয়ার কাট, ম্যানিকিয়োরের মতো কিছু ক্ষেত্রে পুরোপুরি স্পর্শবিহীন পরিষেবা দেওয়া সম্ভব না হলেও, কনট্যাক্টলেস বিউটি ট্রিটমেন্ট হতে চলেছে আগামী দিনের সৌন্দর্য চর্চার নতুন পরিভাষা।

মডেল: সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, শুভশ্রী কর, অনন্যা দাস

ছবি: দেবর্ষি সরকার, লৌকিক দাস

মেকআপ: সুবীর মণ্ডল

লোকেশন: বিবনি, কসবা নিউ মার্কেট এবং ইকোহাব, ইউটোপিয়া

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Beauty Therapy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy