—প্রতীকী চিত্র।
লাল চোখ অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্বাভাবিক জীবনে, ভাঁজ পড়ছে কপালে। চোখ ফোলা, লাল হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে জল পড়া, পিচুটির জন্য চোখ খুলতে না পারা এবং সঙ্গে জ্বর, এই সমস্যাগুলো নিয়ে চক্ষু চিকিৎসকদের কাছে উপচে পড়ছে ভিড়। আক্রান্তদের মধ্যে সিংহভাগ স্কুলপড়ুয়া। ছোটদের থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন অভিভাবকেরাও। ছড়িয়ে পড়ছে পরিবারের অন্যান্য ছোটবড় সদস্যদের মধ্যে।
চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. সুমিত চৌধুরী বললেন, ‘‘দিন পনেরো-কুড়ির মধ্যে প্রায় পঞ্চাশজন এই সমস্যা নিয়ে এসেছেন! অসুখটি কনজাংটিভাইটিস। নামটা কম-বেশি সকলের কাছে পরিচিত। কখনও ভাইরাসের কারণে, কখনও অ্যালার্জির কারণে হয়। এ বারে হচ্ছে মূলত ভাইরাসের (অ্যাডিনো ভাইরাস) কারণে। তবে হঠাৎ করে এর বাড়বাড়ন্ত ভাবাচ্ছে। যদিও গত বছর দুর্গাপুজোর পর থেকে ছোটদের মধ্যে শুরু হয়েছে এই সমস্যা। বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে আসছিলেন জ্বর-সহ এবং চোখে ছোট ছোট হেমারেজ স্পট হচ্ছিল। অ্যান্টিবায়োটিক ও লুব্রিক্যান্ট ড্রপ দিলে ৭-১০ দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাচ্ছিল। বাড়বাড়ন্ত শুরু হল সম্প্রতি প্রচণ্ড প্রচণ্ড গরমের পরে বর্ষা শুরু হতেই।’’ এই ছোঁয়াচে অসুখ ছড়াচ্ছে দ্রুত। অন্ধত্বের ভয় নেই বটে, কিন্তু সচেতন হতে হবে সংক্রমণ আটকাতে। মারাত্মক ছোঁয়াচে হওয়ায় স্কুলে একটি বাচ্চার হলে তার থেকে গোটা ক্লাসের বাচ্চাদের সংক্রামিত হতে সময় নেয় না।
রোগের লক্ষণ
সংক্রমণ আটকাতে
কনজাংটিভাইটিস দ্রুত ছড়ায়। লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই শ্রেয়। চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. শান্তনু মণ্ডল বললেন, ‘‘এই সময় বারবার চোখ জল দিয়ে ধুয়ে নিলে ভাইরাল লোড কমবে। এই সময়ে চোখ চুলকাবেই। কিন্তু হাত ধুয়ে চোখে হাত দেবেন। তা হলে ক্ষতি নেই। না হলেই সংক্রমণ হবে। আমরা তো লক্ষ লক্ষ রোগী দেখি, কিন্তু আমাদের হয় না কেন? কারণ চোখে হাত দিই না। এ কথা বড়রা বুঝলে বা মেনে চললেও, ছোটদের সামলানো কঠিন। তাই তাদের দিকে অভিভাবকদের নজর রাখা জরুরি। ডাক্তার না দেখিয়ে কোনও স্টেরয়েডজাতীয় আইড্রপ দিতে যাবেন না। আর এই সময়ে ছোটদের স্কুলে বা সুইমিং পুলে পাঠাবেন না। এই দুটো জায়গা থেকেই এই রোগ ছড়ায় বেশি।’’ বয়স যা-ই হোক না কেন, আক্রান্তকে আলাদা করে রাখতেই হবে।
সাধারণত কনজাংটিভাইটিস হলে ছোটরা থাকতে না পেরে বারবার চোখে হাত দিয়ে ফেলে। সেই হাত দিয়ে বইখাতা ধরবে, ডেস্কে হাত দেবে, বন্ধুর হাত ধরবে। বন্ধু আবার তার হাত চোখে দেবে। এই ভাবেই রোগ ছড়িয়ে যায়। এই ভাবেই বেশ কিছু স্কুল, গোটা ক্লাস এই রোগে সংক্রামিত হচ্ছে। ‘‘বাড়িতে যদি কারও কনজাংটিভাইটিস হয়, সে ছোটই হোক বা বড়, তার তোয়ালে, গামছা অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। তার বিছানার চাদর, বালিশ যাবতীয় জিনিস আলাদা করে দিতে হবে। সেরে না ওঠা পর্যন্ত বাড়ির ভিতরেই রাখুন সন্তানকে। এই সময়ে চোখের পাতা আটকে যায়, ফুলে যায় বলে চোখ খুলতে অসুবিধে হয়। আলো পড়লেই চোখ বন্ধ হয়ে যায়, যা বেশ যন্ত্রণাদায়ক। এর জন্য গরম জলে তুলো ভিজিয়ে চোখ মুছে দিতে পারেন। এতে চোখ খুলতে সুবিধে হবে। পরীক্ষা দেওয়া, প্রজেক্ট জমা ইত্যাদি যা-ই থাকুক না কেন বাচ্চাদের এই সময়ে স্কুলে পাঠাবেন না,’’ বললেন ডা. চৌধুরী। কনজিংটিভাইটিস থেকে চোখের কর্নিয়ার ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এই বিষয়ে ডা. মণ্ডল বললেন ‘‘কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তার জন্য মাইল্ড স্টেরয়েড দেওয়া হয়। যদিও ইতিমধ্যে আমি যতজন রোগী দেখেছি, কারওরই কনজাংটিভাইটিস হওয়ার জন্য কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।’’ একই আশ্বাস দিলেন ডা. চৌধুরীও। তবে চোখ পুরোপুরি স্বচ্ছ পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত স্কুলে পাঠাবেন না। বরং পর্যাপ্ত বিশ্রাম দিলে সন্তান সারবেও তাড়াতাড়ি।
সাধারণত সিজন চেঞ্জের সময়ে এই অসুখটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদিও সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। তবে এই ক’টা দিন বন্ধু, খেলা, মোবাইল, কম্পিউটার সব ফেলে একরাশ অস্বস্তি ও যন্ত্রণা নিয়ে ঘরবন্দি থাকতে হচ্ছে ওদের। তাই সময়মতো ওষুধ খাওয়ানো বা আইড্রপ দেওয়ার পাশাপাশি অভিভাবকদের মানসিক ভাবে ছোটদের পাশে থাকতে হবে। বোঝাতে হবে কয়েক দিনের বিরতির পরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy