সঠিক বাসন সুস্থতার একটি মাপকাঠি।
স্বাস্থ্য ও পুষ্টির কথা মাথায় রাখলে, ঘরে রান্না করে খাওয়ার কোনও বিকল্প নেই, কিন্তু রান্না–খাওয়ার কাজে কোন বাসন ব্যবহার করছেন, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ ভুল বাসনে, ভুলভাবে রান্না করলে বাসন থেকে কিছু উপাদান এসে মিশে খাবারকে বিষাক্ত করে দিতে পারে৷ দেখা দিতে পারে বিভিন্ন অসুখ৷ কাজেই আসুন, দেখে নেওয়া যাক, আমরা সচরাচর যে সব পাত্রে রান্না করি বা খাই, তা কতটা নিরাপদ৷
কাটিং বোর্ড
ছুরি দিয়ে সবজি কাটতে হলে চাই কাটিং বোর্ড৷ পরিষ্কার রাখার সুবিধার জন্য আমরা সচরাচর প্লাস্টিকের বোর্ড ব্যবহার করি৷ কিন্তু সমস্যা হল, খুব ভাল করে পরিষ্কার না করলে কিছু দিন পরই এর খাঁজে খাঁজে ই–কোলি, সালমোনেলা জাতীয় জটিল জীবাণুর বাড়–বৃদ্ধি হয়৷ তা সবজিতে মেশে৷ রান্নার তাপে তারা সব সময় মরে না৷ ফলে খাবারের মাধ্যমে অন্ত্রে বাসা বাঁধলে জটিল পেটের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ কাজেই বিজ্ঞানীদের মত হল, কাঠের বা রবারের কাটিং বোর্ড ব্যবহার করা ভাল, যেখানে এ সব জীবাণু জন্মাতে পারে না৷
রান্না–খাওয়ার বাসন
অ্যালুমিনিয়াম , অক্সিডাইজ করা থাকে বলে এতে রান্না করলে বা গরম করলে খাবার দূষিত হয় না৷ অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ব্যবহার করলে কিন্তু ব্যাপারটা আর এত নিরাপদ থাকে না৷
অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে গরম খাবার রাখলে বা এতে জড়িয়ে রান্না করলে সে খাবার দূষিত হতে পারে৷ লেবু, টমেটো বা ভিনিগারের মতো টক কিছু মেশানো থাকলে তো এই আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
জার্নাল অফ অ্যালঝাইমার ডিজিজে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে জানা গেছে কম বয়সে অ্যালঝাইমার ও পার্কিনসন ডিজিজ দেখা দেওয়ার মূলে এই ধাতুটির ভূমিকা আছে৷ এছাড়া আমেরিকার স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে যে এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্ট্যান্স ও ডিজিজ রেজিস্ট্রি (এটিএসডিআর) বার করা হয়, তাতে ক্ষতিকর ২০০টি রাসায়নিকের তালিকায় অ্যালুমিনিয়ামের নামও আছে৷ কাজেই খাবার প্যাক করার কাজে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের বদলে পার্চমেন্ট কাগজ ব্যবহার করুন৷ আর রান্নায় ফয়েলের মতো সুবিধা পেতে কাচের পাত্রে তেল ব্রাশ করে নিন৷
নন–স্টিক প্যান : শৌখিন রান্নাঘরের অঙ্গ৷ কম তেলে রান্না করতে ও সহজে পরিষ্কার করতে এর জুড়ি মেলা ভার৷ ১৯৪৬ সালে টেফলন কোটিংয়ের হাত ধরে সে প্রথম আসে বাজারে৷ তারপর একে একে সিলভারস্টোন, টেফাল, অ্যানোলন, সার্কুলন, সেফালন ও আরও অনেকে আসতে থাকে৷ মূলত অ্যালুমিনিয়মের সঙ্গে বিভিন্ন উপায়ে এদের জুড়ে এ সব বাসন বানানো হয়৷ সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে জানা গেছে এই সব উপাদানের সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব, পড়াশোনার দক্ষতা কমে যাওয়া ও ওজন বাড়ার একটা যোগ আছে৷ যদিও তা সত্ত্বেও তার বাজার পড়ে যাওয়ার বদলে ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী৷
রান্নায় একটু বেশি তেল লাগলেও নিয়মিত নন–স্টিক প্যান ব্যবহার না করে নিরাপদ স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে রান্না করুন৷ লোহার পাত্রে করতে পারলে তা স্বাস্থ্যের জন্য আরও ভাল৷
স্টেইনলেস স্টিল : ভাল মানের স্টিল দেখতে ভাল, কাজেও ভাল৷ এই ধরনের বাসন থেকে কোনও ক্ষতিকর ধাতু খাবারে এসে মেশে না৷ যদিও আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ মিশলে বরং ভাল, কারণ আমাদের শরীরে এদের প্রয়োজনীয়তা আছে৷ নিকেল মিশলে ক্ষতি আছে৷ তবে মেশার আশঙ্কা নেই, যদি না তারজালি দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করার সময় পাত্রে প্রচুর কাটাছেঁড়ার দাগ হয়ে যায়৷
কিছু স্টিলের পাত্রে অ্যালুমিনিয়াম বা তামার প্রলেপ দেওয়া থাকে৷ কখনও আবার পাত্রের নীচে থাকে তামার প্রলেপ৷ অনেকক্ষণ তাপ ধরে রাখার জন্যই এ সব করা হয় সচরাচর৷ তবে স্টিলের দুটি স্তরের মাঝে স্যান্ডুইচের মতো করে দেওয়া থাকে বলে, প্রবল ঘষাঘষিতে উপরের স্তর উঠে না গেলে কোনও ক্ষতি হয় না৷
লোহার পাত্র : লোহার পাত্র দেখতে খুব একটা ভাল হয় না৷ তার উপর এতে রান্না করলে খাবার অনেক সময় কালো হয়ে যায়৷ টমেটো, লেবুর রস বা ভিনিগার দিয়ে করলে তো বিশেষ করে৷ কিন্তু এ সব না ভেবে যদি লোহার কড়াই ব্যবহার করেন, কড়াই থেকে লোহা খাবারে মিশে পুষ্টি বাড়িয়ে দেবে৷ তবে হ্যাঁ, পলিসাইথিমিয়া নামে বেশি রক্ত থাকার অসুখ বা থ্যালাসেমিয়া রোগ থাকলে নিয়মিত ব্যবহারে সমস্যা হতে পারে৷
তামা: এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্ট্যান্স ও ডিজিজ রেজিস্ট্রি (এটিএসডিআর)–এর প্রায়োরিটি টক্সিন তালিকার বেশ উঁচুতেই রয়েছে তামার নাম৷ অর্থাৎ শরীরে এর পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে, সমস্যা আছে৷ উল্টো দিকে আবার সুস্বাস্থ্যের জন্য এর প্রয়োজন। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্স–এর ডায়াটারি রেফারেন্স ইনটেক্স–এর মতে পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের দিনে ৯০০ মাইক্রোগ্রামের মতো তামা দরকার৷ আর তার পরিমাণ ১০,০০০ মাইক্রোগ্রাম বা ১০ মিলিগ্রামের থেকে বেড়ে না গেলে কোনও ক্ষতি নেই৷ কাজেই এই সব বাসনপত্রে রান্না করলে কি খেলে ভাল ছাড়া মন্দ হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই৷
প্লাস্টিক : প্লাস্টিক পাত্রে জল ও খাবার রাখলে এমনিতেই বিপিএ নামের ক্ষতিকর রাসায়নিক তাতে মিশে যায়৷ আর গরম করলে তো কথাই নেই৷
মেলামাইন: প্লাস্টিকের চেয়ে অনেক ভাল অবশ্যই৷ তবে এতে খাবার গরম করা বা রান্না না করাই ভাল৷ কারণ গলে না গেলেও এ থেকে সামান্য পরিমাণে বিষাক্ত পদার্থ বেরিয়ে খাবারে মিশতে পারে৷ মাইক্রোওয়েভ আভেন বা ডিশ ওয়াশারের তাপেও একই ব্যাপার ঘটতে পারে, যতই তা মাইক্রোওভেন-টেকসই বলা হোক না কেন৷
সিরামিক: যেভাবে খুশি ব্যবহার করা যায়৷ আগুন–গরম খাবার যেমন খাওয়া যায়, এতে রান্না করলেও ক্ষতি নেই৷ মাইক্রোওভেন, ডিশ ওয়াশার বা ব্রয়লারের তাপেও সে ঠিকঠাক থাকে৷ দেখতেও সুন্দর৷ তবে মেলামাইনের তুলনায় দাম একটু বেশি৷
বোন চায়না : হালকা ওজন৷ দেখতে অসাধারণ৷ ডিনার সেট হিসেবে অনবদ্য৷ মাইক্রোওভেনে খাবার গরম করতেও ব্যবহার করতে পারেন৷
পোর্সেলিন : দেখতে ভাল, টেকসই, নিরাপদ৷ মাইক্রোওভেন, সাধারণ আভেন বা ডিশ ওয়াশারে ব্যবহার করতে পারেন স্বচ্ছন্দে৷ ভাঙাভাঙির ব্যাপার নেই৷ তবে অনেক পোর্সেলিনের বাসনে সৌন্দর্যের খাতিরে বিভিন্ন ধাতু দিয়ে একটু ডিজাইন করা থাকে৷ সেক্ষেত্রে কিন্তু তা আর মাইক্রোওভেনে ব্যবহার করা যাবে না৷
মাটি বা পাথরের বাসন : আগেকার দিনে মাটির হাঁড়িতে ভাত রান্না করার চল ছিল৷ জল রাখা হত মাটির কলসি বা কুঁজোতে৷ গরমকালে সেই জল খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা৷ পাথরের বাসনে খেতেন কেউ কেউ৷ ঠাকুরের নৈবেদ্য দেওয়া হত পাথরের বাসনেই৷ আজকাল অনেকে শখ করে এ সব ব্যবহার করেন৷ ক্ষতি কিছু নেই৷ তবে মাটির পাত্র একদিকে যেমন ভঙ্গুর, উচ্চতাপও সে বিশেষ সহ্য করতে পারে না৷ কাজেই বাসনের রূপ–গুণ অক্ষুণ্ণ রাখতে চাইলে তাকে মাইক্রোওভেন থেকে দূরে রাখবেন৷ পাথরের বাসন অত ভঙ্গুর না হলেও তাপমাত্রার অনেকটা পরিবর্তন সে মেনে নিতে পারে না৷ কাজেই এই ফ্রিজে ঢোকালাম তো এই মাইক্রোওভেনে, এ সব চলবে না৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy