Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Harry and Meghan

বড় ঘরের ছোট কথা: রাজা, রানি আর বর্ণ

এক যে ছিলেন রানি। তাঁর রূপকথার মতো বিয়ে। চার ছেলেমেয়ে। ঘরভরা নাতিনাতনি। আর সেখানেই শুরু সমস্যা।

নেটফ্লিক্সে রাজপরিবার নিয়ে একটা সিরিয়াল হয়েছিল। তা বছর পাঁচেক ধরে চলে। নেটফ্লিক্সের রমরমার অনেকটা কিন্তু সেই ‘দ্য ক্রাউন’ সিরিজ়ের জন্য। তবে নেটফ্লিক্সের পৌষ মাস হলেও সেটা রাজপরিবারের সর্বনাশ।

নেটফ্লিক্সে রাজপরিবার নিয়ে একটা সিরিয়াল হয়েছিল। তা বছর পাঁচেক ধরে চলে। নেটফ্লিক্সের রমরমার অনেকটা কিন্তু সেই ‘দ্য ক্রাউন’ সিরিজ়ের জন্য। তবে নেটফ্লিক্সের পৌষ মাস হলেও সেটা রাজপরিবারের সর্বনাশ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:০৬
Share: Save:

এক যে ছিলেন রানি। তাঁর ঘোড়াশালে ঘো়ড়া, গাড়িশালে গাড়ি। দেশময় জমি আর প্রাসাদ। তাঁর রূপকথার মতো বিয়ে। চার ছেলেমেয়ে। সেখানেই শুরু সমস্যা।

রাজপাট বা রানিপাট ১৯৫২ সাল থেকে। ৭০ বছরের রাজত্ব। তার মধ্যে অনেক জল প্রবাহিত হয়েছে টেমস নদীতে। ছেলেমেয়েদের নিজস্ব জগৎ হয় সময়ের অমোঘ সূত্র ধরে। প্রতিটি ছেলেমেয়েকে নিয়েই তৈরি হয় বিতর্ক।

বড় ছেলে চার্লস বড় মাথাব্যথা। চার্লস বাঁচেন সার নিয়ে। জৈবিক সারের বদলে রাসায়নিক সার ব্যবহারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন। সে সব কিছু দিন চলার পর আবার উঠেপড়ে লাগেন স্থপতিদের বিরুদ্ধে। আধুনিক স্থাপত্য তাঁর অপছন্দ। ২০০ বছরের পুরনো রীতি ফিরিয়ে আনতে চাইলেন তিনি। তবে দেশটা ইংল্যান্ড। তাঁর প্রলাপে তাই কেউ বিচলিত হলেন না।

চার্লস বিয়ে করলেন সুদর্শনা এক তরুণীকে। তবে প্রাক্তন বান্ধবীদের সঙ্গ পরিহার করলেন না। যুবরানি আজকালকার মেয়ে। এ সব মেনে নেবেন কেন! তাঁর বিখ্যাত উক্তি, ‘‘আমাদের বিয়েতে তিন ব্যক্তি ছিলেন।’’ সম্পর্কে চিড় ধরলে তার নানা রকম প্রতিক্রিয়াও হয়। এ কথা রাজ চক্রবর্তীর ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য, ইংল্যান্ডের যুবরানির ক্ষেত্রেও ততটাই সত্যি।

 রানির রূপকথার মতো বিয়ে। চার ছেলেমেয়ে। সেখানেই শুরু সমস্যা।

রানির রূপকথার মতো বিয়ে। চার ছেলেমেয়ে। সেখানেই শুরু সমস্যা। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

শেষ পর্যন্ত বিয়েটি ভাঙল। তার আগে পরিবারের সুকথা-কুকথা ইংল্যান্ডের কাগজগুলি সোৎসাহে প্রচার করল। কাগজগুলি রাজপরিবারের সদস্যদের ব্যক্তিগত টেলিফোন ‘ট্যাপ’ করত। এবং কথোপকথনের বিবরণ প্রকাশ করত। সেখানে এই পর্যন্ত শোনা গিয়েছে যে, যুবরাজ চার্লস নাকি বান্ধবী ক্যামিলাকে বলেছেন, ‘‘আমি যেন পরের জন্মে তোমার ট্যাম্পান হয়ে জন্মাতে পারি।’’ বোঝা গেল, রাজাই হোক বা প্রজা, সম্পর্কের অমোঘ নিয়মের ব্যতিক্রম কেউ নন। সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতো স্বার্থপর ও তুচ্ছ চর্চা নিয়েই তাঁদের বসবাস।

এ ভাবেই চলে যেত হয়তো। কিন্তু ইংল্যান্ডের বড়় ঘরের বড় কথা নিয়ে অধিবাসীদের উৎসাহের অন্ত নেই। কৌতুহল যেখানে আছে, সেখানে সংবাদপত্রও আছে। বিলেতের সাংবাদিকরা আগ্রাসী। হিংস্র নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েন নতুন কোনও কেচ্ছার গন্ধ পেলেই। কৌতূহলের উৎস বার করতে যে হবেই! যুবরানি ডায়ানা এক বার মজা করে সে দেশের সম্পাদকদের বলেছিলেন, ‘‘এ কথা অস্বীকার করতে পারবেন না, যে আমি আপনাদের সমৃদ্ধির একটা উৎস।’’

সমৃদ্ধির উৎস হওয়ার অবশ্য নানা রকম ফ্যাচাং আছে। নেটফ্লিক্সে রাজপরিবার নিয়ে একটা সিরিয়াল হয়েছিল। তা বছর পাঁচেক ধরে চলে। অনেকটা ‘রানি রাসমণি’র মতো। তবে তাতে ভক্তিরস নেই। আছে সত্যকথা। এবং অকপট। নেটফ্লিক্সের রমরমার অনেকটা কিন্তু সেই ‘দ্য ক্রাউন’ সিরিজ়ের জন্য। তবে নেটফ্লিক্সের পৌষ মাস হলেও সেটা রাজপরিবারের সর্বনাশ। কারণ, ডায়ানা এবং চার্লসের দ্বিতীয় ছেলে হ্যারি খুব শীঘ্রই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন।

১৯৮১ সালে চার্লসের বিয়ে হয় ডায়ানার সঙ্গে।

১৯৮১ সালে চার্লসের বিয়ে হয় ডায়ানার সঙ্গে। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

‘দ্য ক্রাউন’ সিরিজ় দেখায় যুবরানি ডায়ানার সঙ্গে পরিবারের দূরত্ব তৈরি হওয়া। বিচ্ছেদের পর অনেক ক্ষেত্রেই যেমন হয়। রাজপরিবারও সে সবের ঊর্ধ্বে নয়। ১৯৮১ সালে চার্লসের বিয়ে হয় ডায়ানার সঙ্গে। ১৯৮২ সালে জন্ম হয় চার্লস-ডায়ানার প্রথম সন্তান উইলিয়ামের। দু’বছর পর ১৯৮৪ সালে উইলিয়ামের ভাই হয়। নাম দেওয়া হয় হ্যারি। সেই হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগানই এখন চর্চার কেন্দ্রে। রাজপরিবারের কেচ্ছার মূলস্রোতে এখন তাঁরাই। খবরের কাগজ থেকে ওটিটি-র পর্দা, সর্বত্রই তাঁদের মুখ।

তৎকালীন আইন অনুযায়ী শুধু রাজপরিবার নয়, যে কোনও সামন্ততান্ত্রিক পরিবারেই প্রতি প্রজন্মে বড় ছেলেই হন উত্তরাধিকারী। আর কারও কোনও অধিকার থাকে না। বিভিন্ন দেশে এই ‘ল অফ প্রাইমোজেনিচার’ স্বীকৃতিও পেয়েছে। সেই নিয়মে ব়ড় সন্তান ও তাঁর পরিবারকেই রাজপরিবারের তরফে নানা কর্তব্য পালন করতে বেশি দেখা যায়। গোটা দুনিয়া সেই পরিবারকেই চেনে রাজপরিবারের ‘প্রতিনিধি’ হিসাবে। পত্রপত্রিকায় তাঁদের ছবিই বেশি দেখা যায়। রাজা বা রানির বাকি পুত্র-কন্যারা ততটা প্রচারের আলোয় থাকেন না।

১৯৮২ সালে জন্ম হয় চার্লস-ডায়ানার প্রথম সন্তান উইলিয়ামের। দু’বছর পর ১৯৮৪ সালে উইলিয়ামের ভাই হয়। নাম দেওয়া হয় হ্যারি।

১৯৮২ সালে জন্ম হয় চার্লস-ডায়ানার প্রথম সন্তান উইলিয়ামের। দু’বছর পর ১৯৮৪ সালে উইলিয়ামের ভাই হয়। নাম দেওয়া হয় হ্যারি। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

আমাদের দেশের জোধপুর-জয়পুরের ক্ষেত্রে যেমন হয়, সে দেশেও তেমনই। যেমন এক কালে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন উইলিয়াম ও হ্যারি। রাজপরিবারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলেন তাঁরা। ভবিষ্যতের রাজার দুই পুত্র। এখন হিসাব একটু বদলে গিয়েছে। রাজার ছেলে বটে হ্যারি। কিন্তু গুরুত্বে উইলিয়ামের পরিবার এগিয়ে গিয়েছে। কারণ, ভবিষ্যতের রাজা যে তিনিই! তাই ঠাকুরমার মৃত্যুর পর বাবা রাজা হলে উইলিয়াম হয়েছেন ‘প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স’। তাঁর স্ত্রী কেট এখন ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স’। তিনি ভবিষ্যতের রানি। হ্যারি ও তাঁর স্ত্রী মেগান রয়ে গেলেন সেই সাসেক্সের ডিউক এবং ডাচেস হয়েই।

‘প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স’ উপাধি হয় তাঁদেরই, যাঁরা পরে রাজা হবেন। প্রিন্স অফ ওয়েল্‌সের স্ত্রী পান ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স’-এর উপাধি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু পর্যন্ত তৃতীয় চার্লস ছিলেন প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স। এলিজাবেথের পর রাজপাট পাওয়ার কথা ছিল তৃতীয় চার্লসের। সেই মতোই ১৯৫২ সালে মা রানি হওয়ার পরে ১৯৫৮ সালে তাঁকে ‘প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স’ ঘোষণা করা হয়। ১৯৮১ সালে চার্লসের সঙ্গে বিয়ের পর ডায়ানা হন ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স’।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু পর্যন্ত তৃতীয় চার্লস ছিলেন প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু পর্যন্ত তৃতীয় চার্লস ছিলেন প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

রানির মৃত্যুর পর ব্রিটেনের রাজা হন তৃতীয় চার্লস। তার কিছু দিন পরেই প্রিন্স এবং প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স হিসাবে উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেটের নাম ঘোষণা করা হয়। রাজা হওয়ার দৌড়ে হ্যারির জায়গা উইলিয়ামের পিছনেই ছিল। কিন্তু প্রিন্স অফ ওয়েলসের এক পুত্র পরবর্তী সময়ে ‘প্রিন্স’ হলেন। আর অন্য জন থেকে গেলেন সেই ডিউক হয়েই! উন্নতি হল না পদে। উল্টে দাদার তিন সন্তানের জন্মের পর রাজপরিবারে তাঁর অবস্থান আরও পিছিয়ে গেল। এক কালে ছিলেন সিংহাসনের দৌড়ে তৃতীয় স্থানে, এখন তাঁর স্থান পঞ্চমে। কারণ, এ ক্ষেত্রে রাজার বড় সন্তানের পরিবারই অগ্রাধিকার পায়। ফলে বড় সন্তান উইলিয়াম যদি কোনও কারণে ব্রিটেনের রাজা না-ও হন, তখন সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ভাই হ্যারির নম্বর আসবে না। উইলিয়ামের তিন সন্তান রাজপুত্র জর্জ, রাজকন্যা শার্লট এবং রাজপুত্র লুইস তাদের কাকার আগে সুযোগ পাবে।

কালের নিয়মে খবরের বাইরে চলে যাওয়ার কথা ছিল হ্যারির। তা হয়নি। এখন ভবিষ্যতের রাজা জর্জের কাকা এগিয়ে। সিংহাসনের দৌড়ে না থাকলেও রাজবাড়ির সবচেয়ে চর্চিত সদস্য হয়ে উঠেছেন তিনিই। সঙ্গে কাকিমা মেগান। মাঝেমাঝে চিত্রনাট্যের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসাবে ঢুকে পড়ছে কাকা-কাকিমার বড় ছেলে আর্চিও।

তৃতীয় চার্লস রাজা হওয়ার কিছু দিন পরেই প্রিন্স এবং প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স হিসাবে উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেটের নাম ঘোষণা করা হয়। রাজা হওয়ার দৌড়ে হ্যারির জায়গা উইলিয়ামের পিছনেই ছিল। উইলিয়াম যদি কোনও কারণে ব্রিটেনের রাজা না-ও হন, এ বার আর সঙ্গে সঙ্গে ভাই হ্যারির নম্বর আসবে না। সুযোগ পাবে উইলিয়ামের সন্তানরা।

তৃতীয় চার্লস রাজা হওয়ার কিছু দিন পরেই প্রিন্স এবং প্রিন্সেস অফ ওয়েল্‌স হিসাবে উইলিয়াম ও তাঁর স্ত্রী কেটের নাম ঘোষণা করা হয়। রাজা হওয়ার দৌড়ে হ্যারির জায়গা উইলিয়ামের পিছনেই ছিল। উইলিয়াম যদি কোনও কারণে ব্রিটেনের রাজা না-ও হন, এ বার আর সঙ্গে সঙ্গে ভাই হ্যারির নম্বর আসবে না। সুযোগ পাবে উইলিয়ামের সন্তানরা। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

ডিসেম্বরের ৮ তারিখে ‘হ্যারি অ্যান্ড মেগান: বিকামিং রয়্যাল’ শীর্ষক ওয়েব সিরিজ় নেটফ্লিক্সে দেখানো শুরু হতেই ব্রিটেনের রাজপরিবারের এই শাখাকে নিয়ে চর্চা বেড়েছে। ব্রিটেনের সাসেক্স শাখাই আপাতত দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে।

সাসেক্সের এই ডিউকের মা ডায়ানা রানি হওয়ার আগেই ছিলেন রানির মতো জনপ্রিয়। তবে রানি হওয়া হয়নি ডায়ানার। ১৯৯৬ সালে হয় বিবাহবিচ্ছেদ। ১৯৯৭ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু। ২০০৫ সালে চার্লসের বিয়ে হয় বহু কালের বান্ধবী ক্যামিলার সঙ্গে।

নানা সময়ে ধাপে ধাপে রাজ পরিবার থেকে নানা কেচ্ছার কথা বেরিয়ে এসেছে। তার অনেকগুলির কেন্দ্রেই ছিল ডায়ানার সংসার। ক্যামিলার (চার্লসের দ্বিতীয় স্ত্রী। ব্রিটেনের বর্তমান রানি) সঙ্গে ডায়ানার স্বামী চার্লসের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জর্জরিত থেকেছে রাজকুমারী ডায়ানার জীবনের অনেকটা সময়। দ্বিতীয় এলিজাবেথের জীবন নিয়ে তৈরি হওয়া ওয়েব সিরিজ় ‘দ্য ক্রাউন’ সে সব ঘটনার অনেকটাই দেখিয়েছে। তা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্কও। হ্যারি-মেগানকে নিয়ে তৈরি ওয়েব সিরিজ় ঘিরে যখন থেকে হইচই শুরু হয়, তার কিছু দিন আগেই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে ‘দ্য ক্রাউন’-এর পঞ্চম সিজ়ন। ওই সিজ়নে ‘দ্য ক্রাউন’ ভরে রয়েছে ডায়ানা-চার্লসের বিচ্ছেদের সময়ের কাহিনি। ক্যামিলিয়ার সঙ্গে চার্লসের সম্পর্ক, ডায়ানার অবসাদ, রাজপরিবারের কারও সাহায্য না পাওয়া— সবই ফিরে ফিরে আসে ‘দ্য ক্রাউন’-এ। তাই সেই সিরিজ় বিতর্কিত। শোনা যায়, নতুন সিজ়নের মুক্তির আগে রীতিমতো চাপ এসেছিল রাজপরিবারের তরফে। হয়তো বা কিছু কিছু কাটছাঁটও করা হয়ে থাকবে।

‘দ্য ক্রাউন’-এর পঞ্চম সিজ়ন আসে নভেম্বরের ১৫ তারিখ। তিন সপ্তাহের মাথায় আসে হ্যারি-মেগানের শো।

‘দ্য ক্রাউন’-এর পঞ্চম সিজ়ন আসে নভেম্বরের ১৫ তারিখ। তিন সপ্তাহের মাথায় আসে হ্যারি-মেগানের শো। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

তবে হ্যারি- মেগানের সিরিজ় সে বিতর্ককে নিয়ে গেল আরও বহু দূর। ‘দ্য ক্রাউন’-এর দর্শককেই যেন হ্যারি বলে দিলেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে যা হয়েছিল, স্ত্রীর সঙ্গে তা হতে দেব না।’’ নেটফ্লিক্সে সিরিজ় দু’টি মুক্তিও পায় খুব কম সময়ের ব্যবধানে। ‘দ্য ক্রাউন’-এর পঞ্চম সিজ়ন আসে নভেম্বরের ১৫ তারিখ। তিন সপ্তাহের মাথায় আসে হ্যারি-মেগানের শো। যেন একটি সিরিজ় আর একটির পরিপূরক। ক্রাউনে ডায়ানার সঙ্গে যা হয়েছে, সে সব অন্যায়ই কি আবার হচ্ছে? পরপর দু’টি সিরিজ দেখলে দর্শকের মনে এ প্রশ্ন আসবেই। আর তখনই হ্যারি পর্দায় উত্তর দেবেন, ‘‘ব্রিটেনের রাজপরিবারে এমনই হয়। বার বার হচ্ছে।’’ স্ত্রী মেগান পাশ থেকে দুঃখ করে বলবেন, ‘‘আমি চেষ্টা করেছিলাম। অনেক চেষ্টা করেছিলাম।’’ মানিয়ে নিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবু কাউকে পাশে পাননি যেন। ঠিক যেমনটা ডায়ানার সঙ্গে হয়েছিল। তা-ই যেন আবার হল। পর্দায় ভেসে উঠবে ডায়ানার ছবি। নানা মুহূর্ত ফিরে আসবে।

অতিমারি আসার আগেই ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে হ্যারি এবং মেগান ঘোষণা করেছিলেন, রাজপরিবারের কোনও কর্তব্য পালনে আর দেখা যাবে না তাঁদের। সে বার্তা চারদিকে ছড়ানো হয়েছিল ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে। তখনও হ্যারির ঠাকুরমা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনের অধিকারী। হ্যারিরা জানিয়ে দেন, তাঁর প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। রানির পাশে থাকবেন তাঁরা। পিতা চার্লস তখন প্রিন্স অফ ওয়েল্‌স। তাঁর সঙ্গেও হ্যারি-মেগান বোঝাপড়া রেখেই চলবেন বলে জানানো হয়। এমনকি, বলা হয়, তৎকালীন ডিউক অ্যান্ড ডাচেস অফ কেমব্রিজ উইলিয়াম আর কেটের সঙ্গেও সম্পর্ক থাকবে অটুট।

এত কিছু বলার মানে কী হতে পারে, তা বুঝতে সময় লাগেনি রাজপরিবার বা বাকি দুনিয়ার। যাঁদের নাম নিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেই যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, তা রটে যায় খবরটি সমাজমাধ্যমের কানে যাওয়া মাত্র। তার পরেই শুরু হয় হইহই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দফায় দফায় বসে বৈঠক। হাওয়ায় ঘুরতে থাকে বর্ণবৈষম্যের অভিযোগ। শুধু মেগান হলে এক কথা ছিল। শোনা যায়, তাঁদের প্রথম সন্তান আর্চিও নাকি রাজ পরিবারের রক্তচক্ষুর শিকার!

ডায়ানার ঘটনার পুনরাবৃত্তিই যেন। ‘দ্য ক্রাউন’-এর সদ্য মুক্তি পাওয়া সিজ়ন ডায়ানাকে ঘিরে বহু ঘটনা দেখিয়েছে। রাজ পরিবারের তরফে রাজকন্যার প্রতি ‘তাচ্ছিল্য’। তাঁর পাশে না থাকার অভিযোগ যে একেবারে ভিত্তিহীন ছিল না, ঘটনা প্রবাহ যেন তা-ই তুলে ধরেছে। তার পরেই ডায়ানার ছোট পুত্র হ্যারি সটান বলে দিলেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছিল, তা স্ত্রীর সঙ্গে হতে দেব না... নিজে পরিবারকে বাঁচাতেই হবে।’’ এ তো না হয় নেটফ্লিক্সে বললেন। তার আগে গত বছরই হ্যারি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘পরিবারকে পাশে পেলাম না। একই জিনিস বার বার ঘটছে। যখন আপনি জানেন কী ঘটবে, কী ভাবে ঘটবে, তখন চুপ করে বসে থাকা যায় না। এই পদক্ষেপ আমাকে করতেই হত।’’

পরিবারকে পাশে না পেয়েই একটি বড় আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠলেন হ্যারিরা। বর্ণবৈষম্য বা ‘রেসিজ়ম’-এর অন্যায়ের কালি কঠিন ভাবে লেগে রয়েছে ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের গায়ে। ঔপনিবেশিকতার ইতিহাসে ইংরেজরা শ্রেষ্ঠ আসনে আছেন এখনও। সুযোগ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ বধূকে সামনে রেখে নিজেদের সামাজিক ভাবমূর্তিতে খানিকটা বদল আনার। কিন্তু রাজতন্ত্র যতটা প্রাগৈতিহাসিক, রাজপরিবারও নিজেদের ততটাই প্রাগৈতিহাসিক প্রমাণ করলেন যেন। সিরিজ়ের শুরুতেই মেগান জানিয়ে দেন, বৈষম্য পরে শুরু হয়নি। প্রথম থেকেই ছিল। পরিবারের হিসাবের খাতার চারপাশে যে রুল টানা রয়েছে, তার বাইরে পা রাখলেই আর নিজেদের তেমন সামলাতে পারেন না সে দেশের রাজা-রানিরা। যেমন ডায়ানার ঘটনায় পারেননি। ফিরে এসেছে জালিয়ানওয়ালা বাগের মতো মনোবৃত্তি। ১০০ বছর আগে যে ভাবে গুলি চালিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ‘রঙিন’ চামড়ার লোকেদের তেমনই। সে তো ছিল অন্য দেশের কিছু অতি সাধারণ মানুষের প্রতিবাদী মুখ বন্ধ করার চেষ্টা। এ ক্ষেত্রে আবার বাড়ির বৌ। বৌমা যাতে বেশি না বাড়তে পারেন, তাই বিয়ে হওয়ার আগেই দূরসম্পর্কের এক শাশুড়িমা বড়দিনের নৈশভোজে পরে আসেন এক কৃষ্ণাঙ্গের মুখ আঁকা ব্রোচ। ‘নিগ্রো’-দের সহ্য করার যে দায় নেই তাঁদের, তা-ই যেন বলে দিয়েছিলেন তিনি। সেই ব্রোচ নিয়ে তখন সংবাদমাধ্যমে কম হইচইও হয়নি। তবে শ্বেতাঙ্গ রাজপরিবার সতর্ক হয়নি।

হবেই বা কেন! ব্রিটিশদের এমন আচরণ নিয়ে আন্দোলন তো কম হয়নি। ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা— কোথায় কোথায় না হয়েছে ইংরেজদের বর্ণবিদ্বেষ নিয়ে হইচই। রাজা-রানিদের রক্তে সে সব ‘তুচ্ছ’ জিনিস তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যে সময়ে কলকাতা-সহ এ দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন ক্লাব-রেস্তরাঁ, গুরুত্বপূর্ণ দফতরের বাইরেও লেখা হত ‘ডগ্‌স অ্যান্ড ইন্ডিয়ান্‌স’-দের প্রবেশ নিষিদ্ধ, সে সময়েই আবার সিপাই বিদ্রোহ হয়েছে। সাহেবরা সগৌরবে তা সামলেছেন। আর বাড়ির বৌকে সামলাতে পারবেন না!

একে সাধারণ বাড়ির মেয়ে। তার উপর কৃষ্ণাঙ্গ মা। মেগানের তো মাথা নিচু করে সব মেনে নিয়ে চলার কথা। তাঁকে যে ঢুকতে দিয়েছে রাজবাড়িতে, সকলের সঙ্গে বসে খাচ্ছেন— এই তো অনেক! এর পরে আবার সম্মানও চাই! শ্বেতাঙ্গ রাজপরিবারের এ মনোভাব বিশেষ অপরিচিত হওয়ার কথা নয় বিশ্বের কাছে। কিন্তু রাজা-রানিরা খেয়াল করেননি, ইতিমধ্যে বহুদিকে জল গড়িয়ে গিয়েছে। একে একে নিজেদের বহু উপনিবেশ খুইয়েছে শ্বেতাঙ্গরা। উত্তর ঔপনিবেশিক বিশ্বে শ্বেতাঙ্গ সমাজের অগ্রাধিকার পাওয়ার অভ্যাস আর মান্যতা পায় না। পৃথিবী অনেক বদলে গিয়েছে। ঠিক যেমন নারীর সম্মানের জন্য উত্তাল হয়েছে ‘#মিটু’ আন্দোলন, তেমনই ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ নিয়েও গলার স্বর চড়েছে দিকে দিকে। বৃহৎ অর্থে হ্যারির বিদ্রোহ হল সেই আন্দোলনেরই অংশ। রাজবাড়ির মোটা দেওয়াল ভেদ করে বাকিদের কানে হয়তো পৌঁছয়নি সে সব চিৎকার। আর তাই সকলের অজান্তে সে বাড়ির ছেলে-বৌমা হয়ে উঠল শ্বেতাঙ্গ সুবিধাভোগীদের বিপরীত গোষ্ঠীর মুখ। কিন্তু যে সাহেব রক্ত মহাত্মা গাঁধীকে আফ্রিকায় ট্রেনের কামড়া থেকে ফেলে দিয়েছিল, সেই ঔদ্ধত্য থেকে রাজপরিবারকে মুক্ত করতে পারলেন না একা হ্যারি।

এক দিনে হ্যারির এমন ভাবমূর্তি তৈরি হয়নি। ২০২১ সালের ৭ মার্চ সাসেক্সের ডিউক ও ডাচেস দেখা দেন বিশ্বের সবচেয়ে চর্চিত টক শো-র একটিতে। বিয়ে, পরিবার নিয়ে কথা বলতে বলতে ঘোষণা করে দেন, নিজেরাই এ বার থেকে আয় করবেন। তার জন্য কাজ করবেন হ্যারি আর মেগান। সরকারের দেওয়া অনুদান আর পারিবারিক সম্পত্তির দিকে চেয়ে চেয়ে দিন কাটাবেন না। সেই মুহূর্ত থেকেই তিনি দুনিয়ার সব সংগ্রামী, খেটে-খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি হয়ে যান।

রাজবাড়ি সে মুহূর্তেই নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিতে পারত গোটা চিত্রনাট্য। হ্যারি আর মেগানকে শুভেচ্ছা জানালেই চর্চার স্রোত অন্য রং পেত। হ্যারির সঙ্গে তৈরি হত রাজপরিবারেরও সহমর্মী ভাবমূর্তি। কিন্তু রাজপরিবার থেকে গেল সেইখানেই। শ্বেতাঙ্গদের যে আচরণ নিয়ে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী, ঠিক সে রকমই যেন রয়ে গিয়েছে হ্যারির পরিবার। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন ছিল, এ যদি ভিয়েতনামের জায়গায় শ্বেতাঙ্গদের কোনও দেশ হত, তবে কি এত সহজে এত মানুষকে খুন করা যেত! ঠিক সে প্রশ্ন এখন উঠছে রাজপরিবারের অন্দরমহলের কেচ্ছার ভিত্তিতে। মেগান যদি কৃষ্ণাঙ্গ বৌমা না হয়ে কেটের মতো শ্বেতাঙ্গ কেউ হতেন, এত সহজে কি মুখ ফেরাত রাজপরিবার?

অথচ সে দেশেই এখন কৃষ্ণাঙ্গদের উপর যুগ যুগ ধরে চলা নির্যাতনের প্রতিবাদ হচ্ছে। ক্রীতদাস প্রথা, কৃষ্ণাঙ্গ-বিদ্বেষ নিয়ে বার বার প্রতিবাদ হচ্ছে ইংল্যান্ডের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্যামিলা যখন রানি হলেন, সে দেশের সংবাদপত্রেও বেরিয়েছিল বিতর্কিত কোহিনুর হিরের কথা। বিভিন্ন উপনিবেশ থেকে লুট করা জিনিসপত্র ফেরানোর কথা নানা ভাবে চলে আসছে যে আলোচনার কেন্দ্রে। তবে সমস্যা হল, দ্বিতীয় এলিজাবেথের মুকুটের হিরে ক্যামিলার মাথায় এখনও রাখার চেষ্টা চলছে। কৃষ্ণাঙ্গ বৌমার পাশে সে মুকুটের ঔজ্জ্বল্য যদি কম হয়ে যায়? সে কথাও হয়তো মনে আসছে। তার মধ্যেই রাজপরিবারের একটি শাখা যুগের সঙ্গে মিশছে। অন্যটি রয়ে যাচ্ছে ঔপনিবেশিক বিশ্বে।

২০২২ সালেও যে টানাপড়েন চলছে, তা স্পষ্ট হয় রানির মৃত্যুর সময়ে। দ্বিতীয় এলিজাবেথের অসুস্থতার কথা ছড়িয়ে পড়তেই শোনা যায় পরিবারের সঙ্গে থাকবেন বলে আমেরিকা থেকে রওনা দিয়েছেন হ্যারি। তখনই ফের প্রশ্ন ওঠে মেগানের ভূমিকা নিয়ে। মেগান কি যাবেন ‘কুইন’-এর সঙ্গে দেখা করতে? শোনা গেল, স্কটল্যান্ডে যাচ্ছেন না মেগান। পরিবারের বাকি সকলে গেলেও রানি যেখানে রয়েছেন, সেই রাজপ্রাসাদে সে সময়ে যাবেন না ছোট নাতবৌ! শোকযাপনের সময়ে যুবরাজ উইলিয়াম ও যুবরানি কেটের পাশে পাশেই দেখা গেল হ্যারি ও মেগানকে। কিন্তু পরিবারের দু’টি শাখা দু’দিকে বইছে তখন।

ক্যামিলা যখন রানি হলেন, সে দেশের সংবাদপত্রেও বেরিয়েছিল বিতর্কিত কোহিনুর হিরের কথা।

ক্যামিলা যখন রানি হলেন, সে দেশের সংবাদপত্রেও বেরিয়েছিল বিতর্কিত কোহিনুর হিরের কথা। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ‘হ্যারি অ্যান্ড মেগান’-এর ওয়েব সিরিজ়ের খবর। তা মুক্তিও পেয়ে গেল রানির মৃত্যুর ঠিক তিন মাসের মাথায়। সোচ্চার প্রতিবাদের সেই সিরিজ়ে কখনও পরিবারের ভূমিকা নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করলেন হ্যারি, তো কখনও রাজা-রানিদের রোজের চলাফেরায় নিয়ম-নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মজা করলেন মেগান। হতাশা সব কথার ফাঁকে ফাঁকে। আর এই দম্পতির ‘গাথা’ই দিন কয়েকে হয়ে উঠল দিনবদলের দলিল।

ডিউক অফ সাসেক্সের রাজকাজে মন দেওয়ার ইচ্ছা যে নেই, সে ইঙ্গিত তিনি বার বার দিয়েছেন। এ বার নেটফ্লিক্সে তা আরও স্পষ্ট করলেন। মা ডায়ানার পর বোধ হয় সে কারণেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছেন হ্যারি। সাধারণের মতো বাঁচতে পারেন, ভাবতে পারেন এই রাজপুত্র। মায়ের মতো বার বার গোটা বিশ্বকে দেখিয়েছেন তিনি। শ্বেতাঙ্গ সমাজের ভাবমূর্তি আগলে রাখে যে রাজপরিবার, তার অন্যতম সদস্য হয়েও ঘরে এনেছেন কৃষ্ণাঙ্গ স্ত্রীকে। ভেঙেছেন একের পর এক পারিবারিক নিয়ম। মায়ের মতো সমাজসেবায় মন দিয়েছেন। আর সে সবের মধ্যেই ডায়ানাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। স্বামী চার্লসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর যে পরিবারের বিরুদ্ধে এক অর্থে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন ডায়ানা, তা-ই এগিয়ে নিয়ে গেলেন হ্যারি এবং মেগান। সে সময়ে নেটফ্লিক্স ছিল না। ছিল বিবিসি, প্যানোরামা। ১৯৯২ সালে লেখা হয়েছিল ‘ডায়ানা: হার ট্রু স্টোরি’। অ্যান্ড্রু মর্টনের লেখা রাজকন্যার সেই জীবনী রাতারাতি নাড়া দিয়েছিল ব্রিটেনের রাজপরিবারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের দম্ভে। মায়ের সেই অস্ত্রই যেন শান দিয়েছে হ্যারির নবতম পদক্ষেপ। ‘মিডিয়া’-র অত্যাচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন ‘মিডিয়া’র হাত ধরেই। আগামী বছর আসবে গোটা যাত্রার লিখিত দলিল। পড়া যাবে হ্যারির আত্মজীবনী ‘স্পেয়ার’।

 ব্রিটেনে ৭০ বছর টানা রাজত্ব করার পর রানির জীবনাবসান— সব ফিকে হয়ে গেল হ্যারিকে ঘিরে চলা কেচ্ছায়।

ব্রিটেনে ৭০ বছর টানা রাজত্ব করার পর রানির জীবনাবসান— সব ফিকে হয়ে গেল হ্যারিকে ঘিরে চলা কেচ্ছায়। ছবি: এএফপি, রয়টার্স।

যেমন বর্তমান রানি ক্যামিলার চেয়ে না-হওয়া রানি ডায়ানা বেশি চর্চিত থেকে গেলেন, যেন তাঁর পুত্রও সে দিকেই এগোচ্ছেন। বাবা চার্লসের রাজা হওয়া, দাদা উইলিয়ামের ডিউক অফ কেমব্রিজ থেকে প্রিন্স অফ ওয়েল্স হয়ে সিংহাসনের কাছে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া, সর্বোপরি ব্রিটেনে ৭০ বছর টানা রাজত্ব করার পর রানির জীবনাবসান— সব ফিকে হয়ে গেল হ্যারিকে ঘিরে চলা কেচ্ছায়। কেলেঙ্কারির ফাঁসে নতুন ব্র্যান্ড তৈরি করলেন সাসেক্সের ডিউক আর ডাচেস।

চর্চিত হতে চাইলে সিংহাসন সব সময়ে লাগে না। কখনও সিংহাসনও কম পড়ে যায়, উত্তর ঔপনিবেশিক সময়ে সে বার্তাই যেন বল বাড়াচ্ছে ডায়ানার ছোট পুত্রের।

আসলে ইংল্যান্ডের রাজপরিবার এ যুগে খানিকটা বেমানান। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। ব্রিটেনের মতো সভ্যতা, যা সাহিত্য থেকে দর্শন, বিজ্ঞান— সবেতে এগিয়ে, সেখানেই এমন অবাক করা ব্যবস্থা। যে সমাজ শেক্সপিয়র, নিউটন, ডিকেন্স দিয়েছে, সে সমাজে এখনও রাজার ছেলে রাজা হয়! এ যেন বলে দেওয়া যে, ধনখড়ের ছেলে এর পর পশ্চিমবঙ্গের পরের রাজ্যপাল হবেন আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্যাই হবেন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আর এই আজব রীতি সাহেবরা মেনেও চলেছেন। রাজপরিবারের অন্দরের সব সমস্যার মূলে যেন সেই ব্যবস্থাই!

অন্য বিষয়গুলি:

Harry Meghan King Charles queen elizabeth Diana Prince William Kate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy