জীবাণুনাশক স্প্রে।—ছবি : শাটারস্টক
করোনা পরিস্থিতিতে ভাল থাকতে আর সুরক্ষিত থাকতে জীবাণুনাশক স্প্রে-র ব্যবহার বেড়েছে মাত্রাছাড়া ভাবে। কিন্তু, আমাদের ভাল রাখতে গিয়ে কি দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে ফেলছে এই জীবাণুনাশক স্প্রে?
করোনা থেকে বাঁচতে টিকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনও পর্যন্ত করোনার ভয় রয়েছে পুরোমাত্রায়। অফিস কাছারি খুলেছে। কিন্তু সেখানেও একরকম আতঙ্কে কাঁটা হয়েই কাটাতে হচ্ছে দিনের একটা বড় সময়। আশপাশে বসা কেউ হাঁচলে বা কাশলে ভয় লাগছে। কেউ আবার অতি সচেতন হয়ে নিজেই হাঁচি বা কাশির পর চারপাশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন জীবাণুনাশক স্প্রে। যাকে আমরা বলি সারফেস স্যানিটাইজার। এটা ঠিকই যে, এই ধরনের স্প্রে যেকোনও জিনিসের উপরে ব্যবহার করা চলে। কিন্তু, এর কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা ক্ষতিকারক দিক আছে কি? আনন্দবাজার ডিজিটাল কথা বলেছিল জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামীর সঙ্গে।
প্রশ্ন : নির্বিচারে এই ধরনের স্প্রে ব্যবহার করায় তা আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকে কোনও ক্ষতি করছে না তো?
সুবর্ণ গোস্বামী : ক্ষতি করতে পারে। এমনকি শ্বাসনালীতে নিয়মিতভাবে এই ধরণের স্প্রে-র উপাদান প্রবেশ করলে, তা আমাদের সহজে সংক্রমিত হওয়ার প্রবণতাকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই যতদূর সম্ভব সাবধান হয়েই ব্যবহার করা উচিত ডিজইনফেক্ট্যান্ট বা জীবাণুনাশক স্প্রে।
হাত জীবাণুমুক্ত করতেও আমরা স্যানিটাইজার স্প্রে ব্যবহার করি, সেটাও কি সুরক্ষিত?
সুরক্ষিত। তবে ওই স্যানিটাইজার কিন্তু শুধুমাত্র হাতে ব্যবহার করার জন্যই। যে কারণে নাম, হ্যান্ড স্যানিটাইজার। তবে যদি অতিরিক্ত মাত্রায় হাতেও ব্যবহার করা হয়, তবে তা হাতের ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। সেক্ষেত্রে হাতে স্যানিটাইজার ব্যবহারের পর ময়শ্চারাইজার বা কোনও ক্রিম ব্যবহার করলে ক্ষতি কম হবে।
গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ
অনেক সময়ে সাধারণ হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়েই অনেককে ঘরের বাতাস বা কোনও জিনিসকে জীবাণুমুক্ত করতে দেখা যায়, এতে কি আদৌ জীবাণুনাশ হয়?
৭০ শতাংশ আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল থাকে এমন স্যানিটাইজার হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু, জড় পদার্থ মানে যেকোনও ধাতু, প্লাস্টিক কাঠ বা কাপরের মতো জিনিসকে জীবাণুমুক্ত করতে হলে শুধু আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহলে হবে না। তাতে থাকতে হবে ১ শতাংশ হাইড্রো ক্লোরাইড সলিউশনও। তবেই জীবাণু পুরোপুরি যেতে পারে।
তাহলে অফিসে বা বাড়িতে কম্পিউটার কি বোর্ড, মাউস, টেবল-চেয়ারের মতো জিনিসকে জীবাণুমুক্ত করব কী ভাবে?
সেটা জীবাণুনাশক স্প্রে কেনার সময় লেবেলে দেখে নিতে হবে। হাইড্রো ক্লোরাইড সলিউশন আছে এমন যেকোনও জীবাণুনাশক স্প্রে এই ধরণের জিনিসকে জীবাণুমুক্ত করতে পারে। কিন্তু, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ১ শতাংশ হাইড্রোক্লোরাইড সলিউশনের বদলে এই ধরণের জীবাণুনাশক স্প্রে-তে ব্লিচ বা কোয়াট জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা হয়। এগুলো হল এক ধরনের ইরিট্যান্ট। যা শরীরে ঢুকলে ক্ষতি করতে পারে।
ব্লিচ বা কোয়াট কী? কীভাবে ক্ষতি করবে?
প্রাথমিকভাবে হাঁচি, কাশি , নিঃশ্বাস নেওয়ার কষ্ট হতে পারে। তবে নিয়মিতভাবে ব্লিচ বা কোয়াট হাতে লেগে বা বাতাসের মাধ্যমে জিভ, মুখ বা শ্বাসনালীতে প্রবেশ করলে তাতে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতিও হতে পারে। মূলত এতে ক্ষতি হবে আমাদের মিউকাস মেমব্রেনের।এই মিউকাস মেমব্রেন হল আামাদের জিভ বা শ্বাসনালীতে থাকা একটা সুরক্ষা আস্তরণ। যা যেকোনও ধরনের রোগ থেকে আমাদের অনেকটা আগলে রাখে। জীবাণুনাশক স্প্রে তে থাকা ব্লিচ বা কোয়াট যদি নিয়মিত ভাবে এই সুরক্ষা আস্তরণের গায়ে লাগতে শুরু করে, তাহলে আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর এই আস্তরণের ক্ষতি হলে বাড়বে আমাদের রোগ সংক্রমণের প্রবণতাও।
সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে কী করা যেতে পারে?
যখন বাতাসে ছড়ানো হবে, তখন মুখ নাক মাস্কে ঢেকে নেওয়া। যাতে তা শ্বাসনালীর মাধ্যমে শরীরের ভিতরে ঢুকতে না পারে। হাতে গ্লাভস পরে নেওয়াও উচিত। তাতে ক্ষতিকর উপাদান সরাসরি হাতে লাগবে না। হাতের মাধ্যমে শরীরেও প্রবেশ করবে না । আর সতর্ক থাকতে হবে শিশুদের ব্যাপারে। কোনওভাবেই ঘরে কমবয়সি বা শিশু থাকলে এই স্প্রে ব্যবহার করা যাবে না।
ডিসইনফ্যাকট্যান্ট কি বাতাসকে ভাইরাসমুক্ত করতে পারে?
জীবাণুনাশকারী স্প্রে বাতাসে যখন আমরা বাতাসে ছড়িয়ে দিই, তখন সেই স্প্রে-র উপাদান বাতাসের ধূলি কণা বা এয়ারোসলে লেগে যায়। এখন সেই ধূলিকনা কোনও জীবাণুযুক্ত ধূলিকণার সংস্পর্শে এলে তাকেও জীবাণু মুক্ত করবে, এই সম্ভাবনা কম। আর যেহেতু এখনও করোনা ভাইরাস বাতাসে ঘুরে বেড়ায় বলে কোনও প্রমাণ মেলেনি, তাই এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াও এখনই সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন : পুরনো চাদর নতুন রূপে
আরও পড়ুন : শীতের র্যাপার নকশা কাটা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy