একটা বয়সের পর হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়। সে কারণেই দরকার ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম। হাড়ের ক্ষয় এড়াতে অনেকেই নির্দিষ্ট বয়সের পর থেকে ক্যালশিয়াম ট্যাবলেট খেতে শুরু করেন। কেউ কেউ শরীর দুর্বল লাগছে বলে ওষুধের দোকান থেকে মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট খান চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই। কিন্তু ভিটামিনের অভাব আদৌ ঘটেছে কি না, কতটা ভিটামিনই বা শরীরের প্রয়োজন, তা কী করে বুঝবেন?
ভিটামিন এ: দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে দরকার হয় ভিটামিন এ। ত্বকের লাবণ্য বজায় রাখতে, রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য করে ভিটামিন এ। গাজরে প্রচুর পরিমাণে এই ভিটামিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া, দুধ, তৈলাক্ত মাছ, বিভিন্ন সব্জিতে বিটা-ক্যারোটিনেয়ড মেলে। তা থেকেই শরীর ভিটামিন এ পায়।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ পুরুষের দৈনন্দিন ভিটামিন এ প্রয়োজন হয় ৯০০ মাইক্রোগ্রাম, মহিলাদের দরকার ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। অনেকেই খাবারের পাশাপাশি ওষুধও খান ভিটামিনের অভাব দূর করতে। তবে গবেষণা বলছে, দৈনিক যদি বাড়তি ভিটামিন এ যায়, একটা সময়ের পরে তার প্রভাব পড়তে পারে শরীরে। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ’-এর জার্নালে প্রকাশিত ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনয়েডস সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিটামিন এ শরীরে গেলে বমি ভাব, অস্বস্তি, মাথাব্যথা— এমন অনেক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। হাড় ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত ভিটামিন এ অন্তঃসত্ত্বাদের স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়াম: হাড় ও দাঁত মজবুত রাখতে ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়ামের প্রয়োজন। শরীরের বেশির ভাগ ক্যালশিয়াম জমা হয় হাড় এবং দাঁতে। শুধু হাড় মজবুত রাখতেই নয়, মন, স্নায়ুর উপরেও প্রভাব থাকে ভিটামিন ডি-র। সাধারণত সূর্যালোকের সংস্পর্শে ত্বক ভিটামিন ডি তৈরি করে। তবে বয়স হলে, ভিটামিন ডি শোষণের ক্ষমতা কমে আসে। অনেকে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ না করেই ক্যালশিয়াম বা ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট খান। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ডি-এর প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন:
‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এর জার্নালে প্রকাশিত ২০২৩ সালের একটি গবেষণাপত্র বলছে, কখনও কখনও অতিরিক্ত ভিটামিন ডি শরীরে গেলে ক্ষতিও হতে পারে। এর জেরে হাইপারভিটামিনোসিস হতে পারে। অতিরিক্ত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট শরীরে গেলে হাড়ের গঠন, বিপাকক্রিয়ার উপর প্রভাব তার পড়তে পারে। যার প্রভাব আবার সামগ্রিক স্বাস্থ্যে পড়বে।
আয়রন: আয়রন কমে গেলে দুর্বলতা, রক্তাল্পতা-সহ একাধিক সমস্যা হতে পারে। থোড়, মোচা, কাঁচকলা, পালংশাক-সহ বিভিন্ন সব্জিতে আয়রন পাওয়া যায়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ১৭ মিলিগ্রাম আয়রন যথেষ্ট। আবার, দিনে ২০ মিলিগ্রামের বেশি আয়রন শরীরে গেলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’-এ ২০২৪ সালে প্রকাশিত আয়রনের প্রভাব সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র জানাচ্ছে, অতিরিক্ত আয়রন লিভার, হার্ট-সহ একাধিক অঙ্গে জমতে থাকলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত আয়রন নিয়মিত শরীরে গেলে তার প্রভাব পড়তে পারে সামগ্রিক স্বাস্থ্যে।