আভিরাম রোজিন ও ইওরিট রোজিন ১৯৯৮ সালে প্রথম বার ইজ়রায়েল থেকে ভারতে আসেন। তার পরেই ভারতের প্রেমে পড়ে যান। ইজ়রায়েলের বাসিন্দা হলেও আভিরাম এখন নিজেকে ভারতীয় বলেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘প্রথম বার তামিলনাড়ুতে আসার পর আমাদের মনে হয়নি যে, দেশের বাইরে আছি। ভারতের সব জিনিসই আমাদের মনে ধরেছিল। বিশেষত এখানকার মানুষজন আমাদের ভীষণ ভাবে আপন করে নিয়েছিলেন।’’

বড় ব্যবসা ছিল আভিরামের। তবে ২০০০ সালের প্রথম দিকে তিনি জীবনে নতুন কিছু শুরু করার পরিকল্পনা করেন। কাজ ও টাকাপয়সার চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে সেবামূলক কিছু করার জন্য উদ্যোগী হন। ২০০৩ সালে তামিলনাড়ুতে তিনি ৭০ একক জমি কিনে সেখানে বৃক্ষরোপণ ও জল সংরক্ষণেকর কাজ শুরু করেন। সঙ্গে অবশ্যই ছিলেন স্ত্রী ইওরিট ও মেয়ে অরোভিলে।

বিদেশি হয়েও ভারতের জন্য তাঁদের এই কাজ প্রশংসনীয় বলে মনে করছেন অনেকেই। আভিরাম বলেন, ‘‘আমরা আমাদের মতো করে বাঁচতে চেয়েছিলাম। এই পরিকল্পনাকে ব়ড় কিছুতে পরিণত করা বা একটি সংস্থা শুরু করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। আমরা সেই জমিতে থাকতে শুরু করি, পাশাপাশি চলতে থাকে চারা লাগানোর কাজ। এক মাসের মধ্যে প্রায় ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক আমাদের সঙ্গে এই অস্থায়ী আবাসনে থাকার ও কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। আমাদের সঙ্গে কাজ করার শর্ত ছিল কিছু। এখানে থাকতে হলে ভেগান খাবার খেতে হবে, ধূমপান ও মদ্যপান করা চলবে না।’’

দম্পতির ধারণা ছিল, এই সব নিয়মকানুন শুনে অনেকেই এই কাজের প্রতি আকৃষ্ট হবেন না, তবে ঠিক উল্টোটাই হল। অনেকেই তাঁদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ প্রজন্মের। আভিরাম বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যাঁরাই আসেন, তাঁদের আমরা জঙ্গলটা ঘুরে দেখাই। তাঁরা কোন সময়ে আসছেন, সেই অনুযায়ী একেবারে বিনামূল্যে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও থাকে।’’

৭০ একরের জঙ্গলটির নাম সাধনা। সেখানে গেলে নানা প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদের সান্নিধ্য উপভোগ করার সুযোগ মেলে। মানুষের অত্যধিক আনাগোনায় যেন পশুপাখিদের ক্ষতি না হয়, সেই বিষয় যথেষ্ট সচেতন থাকেন আভিরাম ও ইওরিট। ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারি মাসে জঙ্গলেই তাঁরা ভেগান খাদ্য উৎসব করবেন বলে জানিয়েছেন। সেটিও হবে একেবারেই বিনামূল্যে। এই পন্থায় আরও সেচ্ছাসেবক তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হবেন বলে মনে করছেন তাঁরা।