Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Bengali Home Chefs in Foreign Countries

বিদেশে মায়ের হাতের রান্না চাই? রসনাতৃপ্তির জন্য হাতা-খুন্তি নিয়ে তৈরি সিঙ্গাপুর থেকে আমেরিকা

আমেরিকা হোক বা কানাডা, লন্ডন হোক বা অস্ট্রেলিয়া, সব দেশেই খোঁজ করলে বাঙালি রেস্তরাঁর হদিস মিলবেই মিলবে। তবে সেই সব বাঙালি রেস্তরাঁর খাবারে মায়ের হাতের স্বাদ কোথায়?

Home chefs who make Bengali dishes more accessible abroad

বিদেশেও এখন মায়ের হাতের বাঙালি রান্না। ছবি: সংগৃহীত।

সুদীপা দাশগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ০৯:২৬
Share: Save:

বছরখানেক আগে পড়াশোনার জন্য আমেরিকার ফ্লরিডাতে গিয়েছেন কলকাতার মেয়ে পূর্বা দে চৌধুরী। আমেরিকায় যাওয়ার পর পরই তাঁর রোজের রুটিনে একটি কাজ একেবারে নিশ্চিত ছিল। সেটা হল ভাল বাঙালি রেস্তরাঁর খোঁজ করা। সন্ধ্যা হলেই যে দেশের রোল, চাউমিন, ফিশ ফ্রাই, চপ- কাটলেটের কথা ভীষণ মনে পড়ে পূর্বার। নিজে খুব একটা রান্না পারেন না তিনি, তাই রোজ হিমায়িত খাবারগুলি গরম করে খেতেও যেন বিরক্তি আসে। মায়ের হাতের ডাল-ভাতও এখন অমৃত মনে হচ্ছে পূর্বার। আর সেই অমৃতের খোঁজেই রোজ সময় চলে যাচ্ছে। রেস্তরাঁ তো আছে, তবে সেই চেনা স্বাদ কোথায়? বাঙালির পাশাপাশি বাংলার খাবারও কিন্তু পৌঁছে গিয়েছে দেশ ছেড়ে দেশান্তরে। আমেরিকা হোক বা কানাডা, লন্ডন হোক বা অস্ট্রেলিয়া, বহু দেশেই খোঁজ করলে বাঙালি রেস্তরাঁর হদিস মিলবেই মিলবে। তবে সেই সব বাঙালি রেস্তরাঁর খাবারের স্বাদ কেমন, তা নিয়ে অবশ্য তর্ক করার জায়গা থেকেই যায়।

Home chefs who make Bengali dishes more accessible abroad

সিঙ্গাপুরে মাটিতে ঘরোয়া খাবারের স্বাদ পেতে হলে আপনার মুশকিল আসান করতে পারে হোমশেফ অর্চনা চন্দকের ‘বাংলা-বন্ধু’। —নিজস্ব চিত্র।

আচ্ছা ভাবুন তো, যদি আপনি সিঙ্গাপুরে বসে মায়ের হাতের বাঙালি খাবারের স্বাদ পান, তা হলে কেমন হয়? সিঙ্গাপুরে মাটিতে ঘরোয়া খাবারের স্বাদ পেতে হলে আপনার মুশকিল আসান করতে পারে ‘বাংলা-বন্ধু’। হোমশেফ অর্চনা চন্দকের হোম কিচেনের নাম ‘বাংলা-বন্ধু’। যেখানে অর্চনা নিজের হাতে খাবার বানিয়ে আপনার দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। কলকাতার লেক গার্ডেন্সে জন্ম অর্চনার, বেড়ে ওঠাও এই শহরে। অবাঙালি হলেও ছোট থেকেই বাঙালি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশার কারণে বাঙালি খাবারের প্রতি আলাদা ভালবাসা তাঁর। বিয়ের পর প্রায় তিনি প্রায় দুই দশক ধরে বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘুরে বেরিয়েছেন। এখন তাঁর ঠিকানা সিঙ্গাপুর। তবে সিঙ্গাপুরে দু’-একটি বাঙালি রেস্তরাঁ থাকলেও সেখানকার স্বাদ একেবারেই তাঁর চেনা স্বাদের সঙ্গে মেলে না। তাই বাড়িতেই তিনি বাঙালি খাবার রাঁধতে শুরু করেন। তাঁর হাতের রান্না বাড়ির লোকেরা তো একেবারে চেটেপুটে খেয়ে ফেলেন। হঠাৎ অর্চনার মাথায় এল, বাড়িতেই ‘হোম কিচেন’ তৈরি করলে কেমন হয়! অর্চনার স্বামী সুশান্ত মন্ত্রীর সহযোগিতায় শুরু হল ‘বাংলা-বন্ধু’র যাত্রা। কী কী রয়েছে মেনুতে? অর্চনার হোম কিচেনে পাওয়া যাবে একেবারে খাঁটি কলকাতা ধাঁচের কাঠি রোল। সঙ্গে পাওয়া যাবে খিচুড়ি-লাবড়া, শুক্তো, এঁচোড়ের তরকারি, বাসন্তী পোলাও, মাছের ঝোল, মোচার চপ, কষা মাংস, ছানার ডালনা, আমের চাটনি। পাবেন কলকাতা স্টাইল বিরিয়ানিও। শেষপাতে মিষ্টিমুখ করতে হলে পেয়ে যাবেন রসগোল্লা, কালাকাঁদও। পাবেন ঝালমুড়ি, ফিশ ফ্রাই, চপ। অর্চনা বলেন, ‘‘সিঙ্গাপুরের বেশ কিছু বাঙালি রেস্তরাঁ থাকলেও সেখানকার খাবারের স্বাদ মনের মতো হয় না। আমি লক্ষ করেছি, আমার মতো অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা সিঙ্গাপুরে বসে ভাল বাঙালি খাবারের খোঁজ করেন। বাঙালি রান্নার প্রতি আমার আগ্রহ ছোট থেকেই, তাই তো ‘বাংলা-বন্ধু’ পথ চলা শুরু করল বছর দুয়েক আগে। বাঙালি রান্না করলেই হল না, এমন কিছু ছোট ছোট বিষয় আছে, যা মাথায় না রাখলে কিন্তু রান্নার স্বাদ আসে না। যেমন ধরুন শুক্তোতে যদি বড়ি না পড়ে কিংবা ঝালমুড়িতে যদি ঝাল চানাচুর না পড়ে, তা হলে তা খেতে মোটেও ভাল লাগে না। এখানে কিন্তু বড়ি কিংবা চানাচুর কোনওটিই পাওয়া যায় না। আমি কিন্তু কলকাতা থেকে ঘি, চানাচুর, বড়ির মতো জিনিসগুলি আনাই। বাড়িতে কোনও পুজো হলে নিরামিষ ভোগ থেকে জন্মদিনের পার্টিতে বিরিয়ানির আয়োজন— সবটাই আমি করি। অনেকের বাড়িতেই যখন কলকাতা থেকে বাবা-মা আসেন, তখন বয়স্কদের সিঙ্গাপুরের আঞ্চলিক খাবারগুলি খেতে সমস্যা হয়। ‘বাংলা-বন্ধু’র খাবার খেয়ে তাঁরা যেন চেনা স্বাদ ফিরে পেতে পারেন, সেই চেষ্টাই করে চলেছি অনবরত। রান্নাটা আমি নিজের হাতে করলেও আমার একটা দল রয়েছে। তাঁরা বাকি কাজে সাহায্য করেন। অল্প রান্নার ক্ষেত্রে ঘণ্টাখানেক আগে অর্ডার দিলেও আমরা বাড়িতে পৌঁছে দিই। তবে বড় অর্ডারের ক্ষেত্রে প্রিবুক করতে হয়।’’

Home chefs who make Bengali dishes more accessible abroad

আমেরিকার নর্থ ক্যালোরিনাতে বসে এমনই একটি হোম কিচেন চালাচ্ছেন অদিতি সেন। —নিজস্ব চিত্র।

আমেরিকার নর্থ ক্যালোরিনাতে বসে এমনই একটি হোম কিচেন চালাচ্ছেন অদিতি সেন। হোম কিচেনটির নাম ‘পাঁচ ফোড়ন’। বছর ছয়েক হল তিনি আমেরিকায় রয়েছেন। সেখানকার স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি একটি বুটিকও রয়েছে তাঁর। এত সব করেও রান্নার শখ এতটাই যে, রোজ বাড়িতে কিছু না কিছু বানান তিনি। কখনও ডিমের ডেভিল, কখনও আবার কড়াইশুঁটির কচুরি, আলুরদম। বিদেশে থেকেও বাঙালি খাবারের স্বাদ পেতে হলেই অদিতির বাড়িতেই চলে আসতেন তাঁর বন্ধুরা। তাঁদেরই অনুরোধে ‘পাঁচ ফোড়ন’ শুরু করেন অদিতি। কর্মব্যস্ত জীবন সামলেও ছুটির দিনটা তিনি বরাদ্দ রাখেন তাঁর শখের জন্য। রান্না করে সকলকে খাওয়াতে যে তিনি বড় ভালবাসেন। শনি ও রবিবার অদিতির হেঁশেলে চলে মহাযজ্ঞ। কখনও ৫০ জনের জন্য ফিশ ফ্রাই, কখনও আবার ঘি-গরমমশলা দিয়ে ধোঁকার ডালনা, কখনও মটন কষা, কখনও আবার বাসন্তী পোলাও— ছুটির দিনেও অদিতি ব্যস্ত থাকেন এলাহি আয়োজনে। অদিতি বলেন, ‘‘পরিবার-পরিজন ছাড়া বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে দেশের খাবারের কথা। কলকাতার চপ-কাটলেট, রোল থেকে মায়ের হাতের রান্না— বিদেশে এর স্বাদ পাওয়া মুশকিল। বন্ধুদের অনুরোধে যে কাজটা শুরু করেছিলাম, এখন সেটাই আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। রান্না করতে বরাবর আমার ভাল লাগে। বিদেশের মাটিতে যাঁরা বাঙালি খাবারের খোঁজ করেন, তাঁদের রসনাতৃপ্তির জন্যই রয়েছে ‘পাঁচ ফোড়ন’। আমার কোনও ওয়েবসাইট নেই। যাঁরা আমার কাছে খাবার অর্ডার করেন তাঁরা মূলত সপ্তাহান্তের আগেই আমাকে জানিয়ে দেন তাঁদের কোন পদ কতটা লাগবে। আমি তা বুঝে নিজেই বাজার করে সবটা আয়োজন করি। সব্জি কাটা থেকে মশলা বাটা, রান্না করা থেকে প্যাকিং— সবটা একা হাতেই করি।’’

রান্নার প্রতি শখ আর বিদেশের মাটিতেও বাঙালিকে মায়ের হাতের রান্নার স্বাদ মনে করাতে হোম কিচেন চালু করেছেন অর্চনা, অদিতিরা। এই কাজ কেবল তাঁদের কাছে পেশা নয়, নেশাও বটে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy