বাচ্চাদের সঙ্গে শমিতা। নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকেই নানা রকম ব্যস্ততা থাকে শমিতা হালদারের। কখনও তিনি নেশাগ্রস্ত বাচ্চাদের নেশার ঠেক থেকে তুলে স্কুলে ফের ভর্তি করাচ্ছেন। কখনও তিনি বাচ্চাদের নিয়ে অনলাইন রান্নার ক্লাসে পিৎজা বানানো শেখাচ্ছেন। আবার কখনও নতুন নতুন রান্নার রেসিপি তৈরি করছেন। তবে দিনের শেষে তাঁর এক ফোঁটাও ক্লান্তি নেই।
হাবড়ার মেয়ে শমিতা ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। বিয়ের পর দেশের নানা জায়গায় থেকেছেন। নানা রকম লোকের সংস্পর্শে এসে নানা প্রদেশের রান্না শিখেছেন। শেষে গুরুগ্রামের বাসিন্দা যখন হলেন, তখন খ্যাতনামী রন্ধনশিল্পী সঞ্জীব কপূরের রান্নার একটি কোর্স করেছিলেন। ছাত্রী হিসাবে এতটাই ভাল ছিলেন যে, সেখান থেকেই তাঁকে প্রথম রান্নার ক্লাস শুরু করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক সংস্থার মানবসম্পদ বিভাগে তখন তিনি কর্মরত। বেশ চলছিল। জীবন অনেকটাই বদলে গেল কোভিডকালে। লকডাউনে তিনি যখন দেখলেন, কোভিড রোগীদের খাওয়ার দুরবস্থা, তখন নিজের উদ্যোগেই অনেকের জন্য রান্না করতেন। কিন্তু সেগুলি পৌঁছানোর আলাদা কোনও লোক ছিল না শমিতার কাছে। তাই নিজেই সারা দিন ঘুরে ঘুরে সেগুলি পৌঁছে দিতেন।
সে সময়ে অনেকেই অনলাইনে শমিতার কাছে রান্না শেখা শুরু করেন। অনেক মা-ই সে সময়ে আর্জি জানান, তাঁদের বাচ্চাদেরও রান্না শেখাতে। ঘরবন্দি বাচ্চারা সে সময়ে মহা উৎসাহে রান্না শেখা শুরু করে শমিতার কাছে। তার পর থেকেই অনলাইনে বহু বাচ্চাদের একসঙ্গে রান্না ক্লাস নেন শমিতা। অনেক স্কুল থেকেও তাঁকে সামার ক্যাম্পে রান্নার ক্লাস নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। বাচ্চাদের রান্না শেখাতে অসুবিধা হয় না? প্রশ্ন শুনেই শমিতা সটান জবাব, ‘‘একদমই নয়। বরং বড়দের তুলনায় ওরা অনেক বেশি বাধ্য। যা যা বলি, মন দিয়ে শোনে এবং অনেক ক্ষেত্রে বড়দের চেয়েও বেশি ভাল রান্না করে ওরা। ওদের তৈরি কাপকেক, পিৎজা, লাভা কেক দেখলে বুঝতেই পারবেন না, সেগুলো কোনও বাচ্চা বানিয়েছে।’’ পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সিদের ক্লাস নেন তিনি। তা ছাড়া শেখান ১১ বা ১২ শ্রেণির পড়ুয়াদেরও।
কলকাতায় মাঝেমাঝেই আসা হয় শমিতার। নানা সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করেন তিনি। তাদের উদ্যোগেই নানা অটিস্টিক বাচ্চাদেরও রান্না শেখানো। অনেক মা-ই তাঁকে অনুরোধ করেন, ‘দিদি আপনার কথা তো শোনে, আপনি একটু শিখিয়ে দিন’। অটিস্টিক বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আলাদা কোনও প্রশিক্ষণ নেননি শমিতা। কিন্তু কোনও অসুবিধা হয়নি কখনও। তিনি জানালেন, অন্যান্য বাচ্চাদের মতোই তারাও দিব্যি কথা শোনে শমিতার। অটিস্টিক বাচ্চাদের টোস্ট বানানো, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ব্যবহার করা, খাবার গরম করা, ম্যাগি বানানো, ধীরে ধীরে আত্মনির্ভর হওয়ার পথটা দেখিয়ে দেন শমিতা। তবে সেখানেই শেষ নয়। বহু অটিস্টিক বাচ্চাদের তিনি কেক, বিস্কুট, প্যাটি বানানোও শিখিয়েছেন। তাঁর শেখানো খাবার তৈরি করে বিভিন্ন সরকারি স্কুলে বিক্রি করার ব্যবস্থাও হয়েছে। সেখান থেকে কিছু অর্থ আয় করছে তারা।
অটিস্টিক বাচ্চাদের রান্না শেখানোর আগে তিনি কী ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? শমিতা বললেন, ‘‘যাঁরা ওদের নিয়ে কাজ করে, তাঁদের কাছেই পরামর্শ চেয়েছিলাম। জানতে পারি অটিজ্ম থাকলে বেশ কিছু খাবার খাওয়া ক্ষতিকর। যেমন কৃত্রিম রং বা প্যাকেটজাত খাবার। তাই সে সব বাদ দিয়েই আমি ওদের রান্না শেখাই।’’
শমিতা অবশ্য বাচ্চাদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদেরও নিয়মিত রান্না ক্লাস নেন। তবে বাচ্চাদের সঙ্গে কাজ করতেই তিনি আনন্দ পান। বিনা পারিশ্রমিকেই তিনি যাবতীয় কাজ করেন বাচ্চাদের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy