ডিজিটাল মাধ্যমে সাইবার প্রতারণা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মহিলারা এর শিকার হয়ে চলেছেন অহরহ। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি)-র তথ্য বলছে, মহিলাদের উপর ঘটে চলা সাইবার অপরাধের ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের হিসাবে দেশে সাইবার অপরাধের ঘটনা ঘটেছে ৭৪ লক্ষের বেশি। যার মধ্যে আর্থিক প্রতারণার ঘটনাই ৮৫ শতাংশ। মহিলাদের ছবি বিকৃত করে বা তার সঙ্গে আপত্তিকর ছবি জুড়ে দিয়ে প্রতারণা করার ঘটনাও নেহাত কম নয়। এর থেকে বাঁচতে কী ভাবে সতর্ক থাকতে হবে? রইল টিপ্স।
অনলাইন ডেটিং সাইটে সাবধান
সাইবার অপরাধীরা ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করে নিজেদের ভুয়ো ছবি ও পরিচয় লিখে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে। তার পর আলাপ জমিয়ে বিশ্বাস জিতে মানসিক ভাবে হেনস্থা তো করেই, পাশাপাশি, আর্থিক প্রতারণাও করে। একে বলে ‘ক্যাটফিশিং’। বিন্দুমাত্র অসতর্কতায় আইনি জটিলতাতেও ফেঁসে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ডেটিং অ্যাপকে কাজে লাগিয়ে ভুয়ো লিঙ্ক পাঠিয়ে আপনার ডিভাইসে ম্যালঅয়্যার ইনস্টল করে দিতে পারে অপরাধী। আপনাকে হয়তো ভালবাসার বিভিন্ন মেসেজ বা ছবি পাঠিয়ে তাতে ক্লিক করতে বলা হবে। আপনি ক্লিক করামাত্রই আপনার ডিভাইসে এমন ‘স্পাইঅয়্যার’ ইনস্টল্ড হয়ে যাবে, যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, ই-ব্যাঙ্কিং বা আপনার ডিভাইসে থাকা বিভিন্ন অ্যাপের তথ্য চুরি করে নেবে। তাই সাবধান থাকতেই হবে। সঙ্গীর সম্পূর্ণ পরিচয় না জেনে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য কখনওই দেবেন না।
চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা
অনলাইনে মোটা বেতনের চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা বাড়ছে। বিদেশে চাকরির অফার দিয়েও ব্যাঙ্কের তথ্য, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের তথ্য জেনে নিয়ে আর্থিক প্রতারণা করা হচ্ছে। তাই অনলাইনে চাকরির খোঁজ করতে হলে, কোনও ভাবেই আগে থেকে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্কের তথ্য দেবেন না।
আরও পড়ুন:
সমাজমাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না
সমাজমাধ্যম থেকে ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে তার থেকেও প্রতারণা করা হচ্ছে নানা ভাবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ছবি বিকৃত করে বা আপত্তিকর ছবি জুড়ে দিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থার পরামর্শ, সমাজমাধ্যমে অনবরত নিজের ছবি পোস্ট করা বা গুগ্ল ম্যাপ দিয়ে লোকেশন জানানো থেকে বিরত থাকুন।
‘মাইক্রো ওয়েবপেজ’ থেকে সাবধান
ছোট ছোট ওয়েবপেজ খুলে সেখানে নানা রকম বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়। বিশেষ করে মহিলাদের পোশাক, গয়না, প্রসাধনীর নানা জিনিস কম দামে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আর্থিক প্রতারণা করা হচ্ছে নানা ভাবে। ছোটখাটো ওই সব মাইক্রো পেজের বেশির ভাগই প্রতারণার ফাঁদ। সেই সব ওয়েবপেজে কিউআর কোড স্ক্যান করতে বললেও তা করবেন না। একবার নিজের মোবাইল বা ডিভাইস থেকে কোড স্ক্যান করলে নিমেষে আপনার অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিতে পারে জালিয়াতেরা।
একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করবেন না
ডিজিটাল মাধ্যমে ঘটে চলা প্রতারণার থেকে বাঁচতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার শক্তিশালী পাসওয়ার্ড। কিন্তু জানেন কি, অসচেতনতার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দুর্বল থেকে যায় এই পাসওয়ার্ড? আর এক বার পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে গেলে, টাকা থেকে ব্যক্তিগত ছবি বা তথ্য, সবই হয়ে যেতে পারে বেহাত। সাধারণত মনে রাখার সুবিধার জন্য অনেকেই নিজের বা প্রিয় জনের নাম, ফোন নম্বর কিংবা জন্ম তারিখ দিয়েই পাসওয়ার্ড তৈরি করে থাকেন। এই ধরনের পাসওয়ার্ড সহজেই চুরি হয়ে যেতে পারে। আবার একই পাসওয়ার্ড একাধিক জায়গায় দেওয়ার প্রবণতাও বিরল নয়। এটিও খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ একটি পাসওয়ার্ড চুরি হয়ে গেলেই অন্য অ্যাকাউন্টগুলিও অসুরক্ষিত হয়ে যায়। তাই পাসওয়ার্ডে নাম, ফোন নম্বর, জন্মতারিখের মতো ব্যাক্তিগত তথ্যের ব্যবহার নৈব নৈব চ। অক্ষর, সংখ্যা কিংবা বিশেষ ধরনের চিহ্নের মিশ্রণে তৈরি করতে হবে পাসওয়ার্ড এবং নিয়মিত তা বদলও করতে হবে।