প্রথমে সব কিছুই ঝাপলা লাগবে। ধীরে ধীরে ক্ষীণ হতে থাকবে দৃষ্টি। পরে একেবারেই গ্রাস করবে অন্ধত্ব। নীরব ঘাতক গ্লকোমা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে ক্রমশই। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের সমীক্ষা জানাচ্ছে, দেশে গ্লকোমা আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। গত কয়েক বছরে রোগীর সংখ্যা কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে।
গ্লকোমায় হারানো দৃষ্টি চিকিৎসা করেও ফেরানো যায় না। কারণ, এই রোগে ক্ষতি হয় অপটিক স্নায়ুর। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে আট কোটি মানুষ গ্লকোমার শিকার। বর্তমানে সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ দেশে চল্লিশোর্ধ্বদের মধ্যে গ্লকোমায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ১২ লক্ষেরও বেশি। দৃষ্টি হারিয়ে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন বহু পরিবারের উপার্জনক্ষম সদস্যরাও।
গ্লকোমা কাদের হতে পারে?
চোখের যে অংশ দিয়ে ফ্লুইড বা তরল প্রবাহিত হয়, সেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেলে তা কোনও একটি স্থানে জমতে শুরু করে। এর ফলে চোখের অপটিক নার্ভে বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়। যাকে ‘ইন্ট্রাঅকুলার প্রেশার’ বলা হয়। চাপ বাড়তে থাকলে দৃষ্টিশক্তি ক্রমশ ক্ষীণ হতে থাকে। যা পরবর্তী কালে অন্ধত্বের কারণ হয়ে ওঠে। গ্লকোমায় আক্রান্ত হলে একেবারে শুরুর দিকে রোগীর ‘সাইড ভিশন’, অর্থাৎ পাশের জিনিস দেখার ক্ষমতা নষ্ট হতে থাকে। এটাই হল লক্ষণ। কারও যদি দু’পাশের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়, তা হলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
আরও পড়ুন:
চোখের পুরনো আঘাত, রেটিনার অস্ত্রোপচার, কর্নিয়া প্রতিস্থাপন, মায়োপিয়া বা ডায়াবিটিসের মতো কোনও রোগের কারণেও গ্লকোমা হতে পারে। দীর্ঘ সময়ে ধরে মোবাইলে দিকে তাকিয়ে থাকা। অন্ধকার ঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইল বা ল্যাপটপেরে নীল আলো চোখে ঢুকলে রেটিনার ক্ষতি হতে পারে। তার থেকেও বিপদ ঘনাতে পারে। স্টেরয়েড জাতীয় চোখের ড্রপ দিলে বা ত্বকের ক্রিম বা মলমে থাকা স্টেরয়েড যদি দিনের পর দিন চোখে ঢোকে, তা হলেও গ্লকোমার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
বাঁচার উপায় কী?
গ্লকোমা থেকে বাঁচতে হলে সাবধানে থাকতেই হবে। পরিবারে গ্লকোমার ইতিহাস থাকলে বাড়তি সতর্ক হতে হবে। চল্লিশের আগেই চোখের নিয়মিত পরীক্ষা করাতে হবে।
বছরে অন্তত দু’বার চক্ষু পরীক্ষা করানো ভাল। এতেও গ্লকোমার মতো রোগ বাসা বাঁধছে কি না, তা বোঝা যাবে। আগে স্ট্রোক হলে বা ডায়াবিটিস থাকলেও চোখের নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত।
যাঁরা নিয়মিত স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নেন, তাঁদেরও গ্লকোমায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। যাঁরা ইনহেলার ব্যবহার করেন, তাঁদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাই সে ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও রকম ওষুধ বা ইনহেলার নেওয়া ঠিক হবে না।