ভেষজ চা নানা রকমভাবে পান করতে পারেন। ছবি: শাটারস্টক
নানা রকম ভেষজ চা বাজারে পাওয়া যায়। তবে সে সবের চেয়ে ঘরোয়া টাটকা উপাদান দিয়ে নিজে বানিয়ে নিলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। সব চা কী সবাই খেতে পারেন? কোন চা কখন খাবেন? কীভাবে পান করা উচিত ভেষজ চা? কয়েকটা উদাহরণ রইল।
তুলসি চা
একবাটি জলে একমুঠো তুলসি পাতা ফুটতে দিন। টগবগ করে ফুটলে আঁচ কমিয়ে ১০ মিনিট ফোটান। এরপর এতে মেশান এক চামচ মধু আর দু-চামচ লেবুর রস। মধু দেবে এনার্জি, লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগবে। আর তুলসির প্রভাবে জ্বর-সর্দি-কাশির প্রকোপ কম থাকবে। নিয়মিত খেলে প্রদাহের প্রবণতা কমবে, বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
শুকনো কাশির প্রকোপ কমাতে চাইলে এতে ধনে ও আদা মিশিয়ে নিন। প্রদাহের প্রবণতাও কমবে তাতে। কীভাবে বানাবেন, দেখুন।
এক লিটার জলে দু-চামচ আদা কুচি, চার চামচ ধনে ও একমুঠো তুলসি পাতা দিয়ে কম আঁচে ভাল করে ফোটান, যতক্ষণ না জল অর্ধেক হয়ে যায়। এবার ছেঁকে নিয়ে মধু ও লেবু মিশিয়ে খান।
আরও পড়ুন: নাগাড়ে কাশি, স্বরে বদল ফুসফুস ক্যানসারের উপসর্গ হতে পারে
কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে এই চা না খাওয়াই ভাল। যেমন-
• গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খাবেন না। কারণ তুলসিতে আছে এস্ট্রাজল যা জরায়ুর সংকোচন বাড়াতে পারে।
• ডায়াবিটিসের ওষুধ খেলে বা ইনসুলিন নিলে নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে নেবেন। কারণ তুলসি রক্তে সুগারের মাত্রা কমায় বলে জানা গেছে।
• রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ খেলেও সাবধান। কারণ তুলসিও রক্ত পাতলা রাখে।
• বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সম্প্রতি জানানো হয়েছে, যাঁদের নিয়মিত অ্যাসিটামিনোফেন জাতীয় ব্যথার ওষুধ খেতে হয়, তাঁরা তুলসি খাওয়ার আগে দু-বার ভাববেন। কারণ দুইয়ের মিলিত প্রভাবে লিভারের কিছু ক্ষতি হতে পারে।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে পালস অক্সিমিটার ঘরে রাখা জরুরি? কী মত চিকিৎসকদের
দারুচিনি চা
দারুচিনি, গোলমরিচ, লেবুর রস ও মধু দিয়ে বানাতে পারেন ভেষজ চা। এক চামচ দারুচিনির গুড়ো, সিকি চামচ গোলমরিচ গুড়ো, এক চামচ লেবুর রস ও এক চামচ মধু-র মধ্যে এক কাপ ফুটন্ত জল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ছেঁকে নিন। দারুচিনির কুমারিন, গোলমরিচের পিপারিন প্রদাহের প্রবণতা কমাবে, বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। লেবুর ভিটামিন সি-এর কাজও তাই। সঙ্গে যুক্ত হবে মধুর এনার্জি। বেশ খানিকক্ষণ চাঙ্গা থাকার অব্যর্থ পানীয়। তবে কুমারিন বেশি খাওয়া ঠিক না। লিভারের ক্ষতি হতে পারে। আবার সুগার কমাতে পারে বলে যাঁর ডায়াবিটিসের ওষুধ চলছে, তিনি বুঝেশুনে খাবেন।
তুলসি চায়ে লেবুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাজে লাগবে। ফাইল ছবি
অশ্বগন্ধা চা
রোজ সকালে বা বিকেলে এক কাপ অশ্বগন্ধার চা খেতে পারেন। এক কাপ ফুটন্ত জলে এক চা-চামচ অশ্বগন্ধা মূলের গুড়ো দিয়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন মিনিট ১০-১৫। ছেঁকে লেবুর রস ও মধু দিয়ে খান। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি প্রদাহের প্রবণতা কমবে। অশ্বগন্ধার জীবাণুনাশক গুণও আছে। কমবে মানসিক চাপ-অবসাদ ও বয়সজনিত ক্ষয়-ক্ষতির হার। ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সাইকলোজিকাল মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই চা খেলে খুব সহজে সতেজ ও ফুরফুরে হওয়া যায়।
আরও পড়ুন: কখন প্রয়োজন ভেন্টিলেটর? কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার এটির?
দুধ চা-এর ভক্ত হলে জলের বদলে ফুটন্ত দুধে অশ্বগন্ধার গুঁড়ো মিশিয়েও চা বানাতে পারেন। তাতে এলাচ বা আদা মেশালেও কোনও বাধা নেই। তবে চিনির বদলে মধু মেশালে উপকার মিলবে বেশি।
দেড় চামচ মধু মিশিয়ে খান আদা চা। ফাইল ছবি।
আদা চা
এক চা-চামচ আদা কুচি, দুটো লবঙ্গ, এক ইঞ্চি দারুচিনি থেঁতো করে দু-কাপ জল দিয়ে ফোটান। তাতে দিন ৩ ইঞ্চি কমলালেবুর খোসা। কম আঁচে ফোটান ১৫ মিনিট। দেড় চামচ মধু মিশিয়ে খান। জ্বর-সর্দি-গলা ব্যথা, সবের আরাম হবে।
হলুদ চা
আধ চামচ কাঁচা হলুদ বাটা ও সিকি চামচ গোলমরিচের গুঁড়োতে ফুটন্ত জল মেশান। এতে মেশান একটা গোটা লেবুর রস আর দেড় চামচ মধু। সকাল-বিকেল খেলে ইমিউনিটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
পুদিনা চা
ফুটন্ত জলে মেশান রোজমেরি। তাতে দিন ১০-১২টা পুদিনা পাতা। দেওয়ার আগে একটু কুচি কুচি নেবেন যাতে গন্ধটা পুরোপুরি বেরোয়। ১৫ মিনিট ঢাকা দিয়ে রাখুন। তৈরি পুদিনা চা।
চায়ের সঙ্গে ‘টা’
সাধারণ চায়ে ক্যাফেইন, ট্যানিন ইত্যাদি থাকে বলে খালি পেটে খেলে কারও কারও অম্বলের সমস্যা বাড়ে। ভেষজ চায়ে সে ভয় নেই। কাজেই ‘টা’ না খেলে কোনও ক্ষতি নেই। বিস্কুট জাতীয় কিছুও খুব একটা না খাওয়াই ভাল। কিন্তু অভ্যাস বলে কথা। কিছু একটা না খেলে অস্বস্তি হয়। কাজেই স্বাস্থ্যকর কিছু খান। কল বেরনো ছোলা বা মুগ খেতে পারেন। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের দৌলতে পুষ্টির পাশাপাশি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। লেবুর রস মিশিয়ে নিলে স্বাদ বাড়বে, বাড়বে পুষ্টিও। সব রকম বাদাম খেতে পারেন। চিনে বাদাম খেলেও উপকার হবে। পেট ভরা থাকবে অনেকক্ষণ।তবে সেটিও পরিমাপমতো। সবমিলিয়ে পুষ্টিকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy