প্রতীকী ছবি।
আঠারো বছর বয়সে তাঁর ধরা পড়েছিল টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস। খাবারের একটা বাঁধা তালিকা হাতে তুলে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। মিষ্টি কোনও দিনই বিশেষ পছন্দ ছিল না উমঙ্গ কানোরিয়ার। তাই মিষ্টি বন্ধ করতে কষ্ট হয়নি। কিন্তু আলু, ভাত, পাস্তা, ভাজাভুজি ছাড়তে প্রায় কাঁদতে হয়েছিল তাঁকে। সেই উমঙ্গই আজ ৬১-র কোঠায়। এই অটো-ইমিউন রোগের (শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন বিদ্রোহ করে শরীরের সঙ্গেই) ক্ষেত্রে যা উল্লেখের দাবি রাখে।
একটা সময়ে বয়স ৩০ পেরোনোর আগেই টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসে মৃত্যু হত রোগীর। যে কারণে আমেরিকার বস্টনের জসলিন ডায়াবিটিস সেন্টার থেকে কেউ ২৫ বছর বাঁচলেই তাঁকে জসলিন মেডেল দেওয়া হয়ে থাকে।
কিন্তু এই অসুখের ক্ষেত্রেও রোগী যে বেশি দিন বাঁচতে পারেন, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে সেই তথ্য। তবে ওষুধ নয়, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই পারে রোগীর আয়ু বাড়াতে। এমনটাই বলছেন গবেষণায় অংশ নেওয়া চিকিৎসকেরা। তাঁদের এই গবেষণাপত্রটি ‘ডায়াবিটিস টেকনোলজি অ্যান্ড থেরাপিউটিক’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
দক্ষিণ ভারতের একটি ডায়াবিটিস সেন্টার আয়োজিত, গবেষণামূলক এই সমীক্ষার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছিল সারা দেশের এন্ডোক্রিনোলজিস্টদের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কলকাতার এসএসকেএমের এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের প্রধান সতীনাথ মুখোপাধ্যায় ও এক বেসরকারি হাসপাতালের ডায়াবিটিস বিভাগের প্রধান সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, ভারতে টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস নিয়ে বেঁচে থাকা পুরুষের সর্বাধিক বয়স ৬৭। মহিলার ক্ষেত্রে তা ৬৯। এ শহরেও রয়েছেন এমন রোগী।
টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস কী? চিকিৎসকেরা জানান, প্যাংক্রিয়াসের বিটা সেল থেকে ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয় না এ ক্ষেত্রে। ইনসুলিনের কাজ হল রক্তের শর্করাকে পেশি, লিভার-সহ নানা জায়গায় জমা করে ভারসাম্য বজায় রাখা। কিন্তু টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসে সেই কাজ হয় না।
ছোটদের ক্ষেত্রে ৫ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে এই রোগ সামনে আসে। ইনসুলিন আবিষ্কার হয়েছিল ১০০ বছর আগে। তার পরেও চিকিৎসকদের অনভিজ্ঞতার কারণে কখনও কম, কখনও বেশি ডোজ় দেওয়ায় বা এই হরমোনের জোগানের ঘাটতির জন্য মৃত্যু হত রোগীর। এখন ডোজ় এবং ব্যবহার নিয়ে চিকিৎসকেরা অনেক বেশি সতর্ক। তবুও টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস নিয়ে প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছনো সহজ নয়। এ শহরেরই বাসিন্দা উমঙ্গ বলছেন, “যা যা বারণ ছিল, সব তখন খেতাম। রোগ ধরা পড়তেই শুরু হল কঠোর নিয়ন্ত্রণ। অত কম বয়সে সে সব মেনে নেওয়া এবং পালন করা খুব কষ্টকর ছিল। তবে ইনসুলিন নেওয়া, ব্যায়াম করা নিয়ে আমি খুব সচেতন। কাজের সূত্রে প্রচুর ঘুরতে হয়। সর্বত্র সতর্ক থাকি।”
এই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টাইপ ওয়ান রোগী যাঁরা দীর্ঘদিন বেঁচে আছেন, তাঁরা ধূমপান করেন না। পাশাপাশি তাঁদের ওজন কম, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি কারণ— জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক মানসিকতা।
সতীনাথবাবু বলছেন, “এমন রোগী এবং তাঁর পরিজনদের ইতিবাচক মানসিকতা থাকা খুব জরুরি। অল্প বয়স থেকে দিনে একাধিক বার ইনসুলিন নেওয়া, রক্ত পরীক্ষা করা, খাবার নিয়ন্ত্রণ কষ্টসাধ্য। অবসাদগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য চিকিৎসকেরা কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও করেন। মানসিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে রোগ নিয়ন্ত্রণে তা বড় ভূমিকা নেয়।’’ রোগীর দীর্ঘায়ুর জন্য সুদীপবাবুও ওঁদের ভূমিকার কথাই বলছেন। তিনি বলেন, “এক জন রোগীকে দেখতে গড়ে ১৫ মিনিট লাগে চিকিৎসকের। কিন্তু ৩৬৫ দিন ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হয় রোগীকে। সেটা যিনি ঠিক মতো করতে পারেন, তিনি তত সুস্থ থাকেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy