ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে রাস্তার ধারে কয়লার আঁচে পোড়া ভুট্টার গায়ে বিটনুন আর লেবু মাখিয়ে খাওয়ার তুলনা হয় না। অল্প খরচে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস এটি। শুধু পুড়িয়েই নয়, ভুট্টাকে নানা ভাবে রান্নায় ব্যবহার করা যায়। কখনও সুইট কর্ন হিসেবে, বেবি কর্ন হিসেবে, আবার কখনও কর্ন ফ্লাওয়ার বা কর্ন অয়েল হিসেবেও ভুট্টার গুণ কাজে লাগানো যায়।
ভুট্টার গুণ
ডায়াটিশিয়ান সুবর্ণা রায়চৌধুরী জানাচ্ছেন, ভুট্টার মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন আছে। যদিও এগুলি প্রথম শ্রেণির প্রোটিন নয়। অর্থাৎ মাছ, মাংসে যে পরিমাণ প্রোটিন পাওয়া যায়, সেটা এতে নেই। তবে ভাতের চেয়ে ভুট্টায় প্রোটিনের পরিমাণ বেশি। এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিডের মধ্যে লাইসিন আর ট্রিপটোফ্যান আছে। আর আছে বিটা ক্যারোটিন, অর্থাৎ ভিটামিন এ। চোখের জন্য ভিটামিন এ অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া থায়ামিন, অর্থাৎ ভিটামিন বি-ও এতে পাওয়া যায়। ভুট্টায় ভিটামিন সি আছে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ভুট্টায় ভিটামিন সি-র পাশাপাশি অ্যান্টি অক্সিড্যান্টও আছে। ফলে, রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় গুণ এই ফসলে অনেকটাই বেশি। এ ছাড়াও ভুট্টায় ফাইবার থাকে অনেকটাই। ফলে, যাঁরা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত বা কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন, তাঁদের জন্য ভুট্টা খুব উপকারী।
নানা রূপে ভুট্টা
• সুইট কর্ন
সুপের স্বাদ বাড়াতে সুইট কর্নের জুড়ি নেই। সুবর্ণা রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘ভুট্টায় দুটো জিনের মিউটেশন ঘটিয়ে বানানো হয় সুইট কর্ন। তবে নামেই বোঝা যায়, এতে চিনির পরিমাণ বেশি। তাই যাঁরা ডায়াবিটিসে আক্রান্ত বা ওজন কমাতে চাইছেন, তাঁদের সুইট কর্ন এড়িয়ে চলা ভাল। তবে যেহেতু মিউটেশন ঘটিয়ে তৈরি করা হয়, তাই এর বেশ কিছু উপকারিতাও আছে। এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরির সঙ্গে ভিটামিন আর মিনারেলস থাকে। ফলে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কোলেস্টেরলের সমস্যা থাকলে অল্প করে সুইট কর্ন খেতেই পারেন।’’ সুইট কর্ন বেশি পরিমাণে খেলে আবার চট করে হজম হওয়া কঠিন। সে ক্ষেত্রে পেটের গোলমাল, ডায়রিয়া হতে পারে। এ ছাড়া এতে পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট থাকে। কিন্তু যাঁরা কিডনির সমস্যায় ভুগছেন, বা হাই পটাশিয়ামের সমস্যা আছে, তাঁদের সুইট কর্ন না খাওয়াই ভাল।
• বেবি কর্ন
অত্যন্ত মুখরোচক খাবার এটি। চিলি বেবি কর্ন, মিক্সড ভেজিটেবলসে বেবি কর্ন বা স্যালাড উইথ বেবি কর্ন— অনেক হেঁশেলেই অন্য আনাজের পাশে বেবি কর্নও পাকাপাকি জায়গা করে নিয়েছে। অপরিণত ভুট্টাই হল বেবি কর্ন। তবে এটিও তেমন সহজপাচ্য নয় বলে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যেস না করাই ভাল। পরিমাণ অল্প হলে অবশ্য সমস্যা নেই। বেবি কর্নেও ভিটামিন এ, সি, বি, ই প্রচুর থাকে। সবচেয়ে বড় কথা, পরিণত হওয়ার আগেই যেহেতু এটি ব্যবহার করা হয়, সেই কারণে এতে কোনও ফ্যাট নেই। ক্যালরিও কম এবং লো-কার্ব। ফলে, ওজন কমাতে চাইলে সুইট কর্নের বদলে বেবি কর্ন খেতে পারেন।
• পপকর্ন
চিপস যখন এমন তেড়েফুঁড়ে ঢুকে পড়েনি বাঙালি বাড়িতে, তখন পুজো প্যান্ডালে, ট্রেনসফরে, সিনেমা হলে এটিই সকলের হাতে উঠে আসত। এবং এটি হেলদি স্ন্যাক্সও বটে। ভুট্টা দানা থেকে যখন পপকর্ন বানানো হচ্ছে, তখন তাতে তেলের কোনও ভূমিকা থাকে না। ফলে, ফ্যাটও নেই। তবে এতে সোডিয়াম থাকে। পপকর্নের স্বাদও ঈষৎ নোনতা। যাঁদের হার্টের অসুখ, তাঁরা এই কারণেই পপকর্ন বেশি খাবেন না। তবে এই নোনতা স্বাদ অন্য একটা কাজ করে। পাহাড়ি রাস্তায় বা অধিক উচ্চতায় যাঁদের বমি হয়, তাঁরা একটু করে পপকর্ন মুখে রাখলে উপকার পাবেন। নোনতা স্বাদ বমি ভাব কমিয়ে দেয়।
• ভুট্টার আটা, তেল
হোল গ্রেন পিষে কর্ন ফ্লাওয়ার বানানো হয়। সুপ জাতীয় কোনও পদ ঘন করার কাজে কর্ন ফ্লাওয়ার ব্যবহার করা হয়। এতে স্টার্চ থাকে। ফলে, ক্যালরি কম করার প্রয়োজন হলে এটি বেশি ব্যবহার না করাই ভাল। আবার, ভুট্টা পিষে তা থেকে যে আটার মতো জিনিস পাওয়া যায়, অনেকে তা দিয়ে রুটি তৈরি করেন। ভুট্টায় যে পুষ্টিগুণ থাকে, তা এই রুটিতেও পুরোমাত্রায় বজায় থাকে।
কর্ন অয়েলে লিনোলেনিক ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। তাই, হার্টের অসুখে এটি উপকারী। তবে এর প্রচলন খুব কম। সহজে পাওয়াও যায় না। অথচ রান্নার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত ভাল মানের ভেজিটেবল অয়েল।
সুস্বাদু স্যালাড বানাতেও ভুট্টার জুড়ি নেই। বাইরে বেরোতে হলে টিফিনে কর্ন স্যালাড নিয়ে যেতে পারেন। বেবি কর্ন সিদ্ধ করে, অল্প তেলে সতে করে সামান্য মাখন, নুন, লেবু, মরিচ ছড়িয়ে সঙ্গে নিতে পারেন। রুটি-তরকারির একঘেয়েমিও কাটবে, পুষ্টিগুণ ভরপুর মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy