Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Girls

‘সরস্বতীদের’ শাড়ি-প্রেম আজও অটুট

সরস্বতী পুজোয় শাড়ি নিয়ে সেই উন্মাদনা কি এখনও ছুঁয়ে যায় কিশোরীদের?

শাড়িতেই পুজোর আনন্দে শামিল মেয়েরা। ফাইল চিত্র

শাড়িতেই পুজোর আনন্দে শামিল মেয়েরা। ফাইল চিত্র

অন্বেষা দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:৪০
Share: Save:

প্রথম শাড়িবেলা!

বললে কি খুব ভুল হবে? তিন-চার বছরে পা দেওয়া খুদে শিশুকন্যাকে মা যখন বাসন্তী রঙা কাপড়ে জড়িয়ে দেন, তখন থেকেই যেন বাঙালি ঘরের অসংখ্য সরস্বতীর সাজ নির্ধারিত হয়ে যায়। তার পরে স্কুলের সরস্বতী পুজোর হাত ধরে একটু একটু করে বড় হতে হতে আসে মায়ের গন্ধ মাখা বারো হাতের সেই জাদু, সবে সাজগোজ করতে শেখা সলাজ চাহনি, আর হাসি মুখে পুজোর জন্য স্কুলে গিয়ে খাটাখাটনি। আগের দিন থেকেই।

শহরতলির ‘বালিকা বিদ্যালয়গুলির’ সে দিন আলাদা মহিমা! কারণ শুধুমাত্র এই দিনেই আমন্ত্রণ পেয়ে প্রতিমা দেখার আড়ালে জীবন্ত সরস্বতীদের চাক্ষুষ করার ছাড়পত্র পেয়ে যায় আশপাশের স্কুলের কিশোরেরা। এই দিনটি তো সেই কবে থেকেই বাঙালির না-বলা ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’।

তবে এ হল গিয়ে নব্বইয়ের দশকের স্কুলের ছেলেমেয়েদের কথা। সরস্বতী পুজোয় শাড়ি নিয়ে সেই উন্মাদনা কি এখনও ছুঁয়ে যায় কিশোরীদের? এমন ছাত্রীদের মাঝে থাকা হুগলির স্কুলশিক্ষিকা অপর্ণা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এখন হোয়াট্‌সঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের হাতছানিতে সাজগোজের ধরন পাল্টেছে ঠিকই। ওরা অনেক বেশি স্মার্ট। ঝকঝকে। তবে সরস্বতী পুজো মানেই শাড়ি, এই সরলীকরণ আজও একই ভাবে সত্যি। দরিদ্র বা সম্পন্ন, যেমন ঘরের মেয়েই হোক না কেন, শাড়িতে জড়সড় হয়েও এ দিন তারা এক্কেবারে অন্য রকম।’’

পুজোর দিনে শাড়িতে উজ্জ্বল কচিকাঁচারা। ফাইল চিত্র

সাজগোজের সূত্রে কথা হল ডিজ়াইনার পরমা ঘোষের সঙ্গে। বাংলার সংস্কৃতির ফেলে আসা বেশ কিছু উপকরণ তাঁর পোশাকে ফিরিয়ে এনে বছর পাঁচেক আগে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন পরমা। আজকের

সরস্বতীদের হাল হকিকত সম্পর্কে তাই ভালই খোঁজ রাখেন ৩৬ ছোঁয়া এই কন্যা। আলাদা করে সরস্বতী পুজোর জন্য শাড়ি-ব্লাউজ তৈরি না করলেও অনেকেই যে এই পুজোর কথা ভেবে তাঁর থেকে পোশাক নিয়েছেন, সে কথা জানালেন তিনি। পরমার কথায়, ‘‘কিছু জিনিস সত্যিই বদলায় না। যতই আধুনিকতা আসুক, ওই ঐতিহ্য নষ্ট হয় না। সরস্বতী পুজোয় শাড়িও তার মধ্যে একটা।’’

মেয়েদের পোশাক নিয়ে এখন তো এত ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এই এক দিন কি সে সব ভুলে থাকে সকলে? পরমার মন্তব্য, ‘‘এই উৎসবের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে উৎসাহী অল্পবয়সিরা। শাড়ি না পরে তারা বিদ্যার দেবীকে চটাবে কোন সাহসে! আর হলুদ রংটা খুব সুখী সুখী একটা রং। উৎসবের সঙ্গে বড় মানানসই।’’

আর শহর-মফস্সলের গণ্ডি পেরিয়ে রাজ্যের বাইরে রয়েছে যারা? বাগ্‌দেবীর আরাধনায় এখনও কি তাঁরা শাড়ির টানে ফিরে আসেন? সব সময়ে ফেরা না গেলেও নিজের পড়াশোনার জায়গা বা আবাসনে পুজো তাদের ঘিরে থাকে।

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-এ (আইআইএসসি)জীববিদ্যা নিয়ে পাঠরতা অলক্তা দাসের অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘পুজো হোক বা অন্য কিছু, কে কী পরবে সেটা তার সুবিধা অনুযায়ী হওয়া উচিত নয় কি?’’ আদতে কল্যাণীর মেয়েটি যদিও সরস্বতী পুজোর উৎসব-মুখরতা থেকে দূরে ছিলেন না। বিদেশের মতো তাঁদের সরস্বতী পুজো সারা হয়ে গিয়েছে গত রবিবারেই। ‘‘খাওয়াদাওয়া, হইচই সবই হয়েছে। এখানকার বাঙালি মেয়েরা শাড়িতে আর ছেলেরা পাঞ্জাবি-পাজামায় এসেছিল। গানবাজনাও পরে হবে, তোলা আছে।’’

তা হলে ভরসা আছে— সরস্বতী আছেন সরস্বতীতেই। প্রথম অপটু হাতের শাড়ি সামলানোর স্বস্তিতে!

অন্য বিষয়গুলি:

Girls Saree Saraswati Puja
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy