বাঙালি জমিদার বাড়ির ধাঁচে মাংস-ইলিশ, লখনউ ঘরানার বিরিয়ানি কিংবা এক্কেবারে চিনা মেজাজের ডিমসাম— শারদোৎসবের শহরে কিছুরই কদর কম নয়। এই শহরের উৎসব মরসুমে বছর বছর তাই নতুন কিসিমের পঞ্চব্যঞ্জনের আয়োজন করতে রীতিমতো গবেষণা চলে রেস্তরাঁ মহলে। মণ্ডপসজ্জার থিমের ভাবনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে পেটপুজোর থিম চর্চা। কারণ এ কথা প্রতিষ্ঠিত যে, ভোজন বিলাসী বাঙালির একটা ছুটির দিনও জমে না মনমতো খাবার ছাড়া। তাঁরা এমন মহোৎসব ভাবতেই পারেন না পেটপুজো বাদ দিয়ে!
উৎসব-পার্বণ মাথায় রেখেই তাই এ বছরও ফের তৈরি হয়েছে সেই গবেষণার ফলাফল। কোন শেফ মেনু সাজাবেন কোন থিমে, তা জানতে ইচ্ছুক কোনও কোনও ভোজনরসিক ইতিমধ্যে ঘুরেও এসেছেন পছন্দের রেস্তরাঁ চত্বরে। বিমানবন্দরের কাছের হোটেল হলিডে ইন-এর সোশ্যাল কিচেনে যেমন এ বছরের থিম সাবেক খাওয়াদাওয়াই। দুই বাংলায় উৎসবে যে সব ঘরোয়া রান্না বেশি হত, সে সবই রাখা হয়েছে সেখানে। ঠাকুরদালান পোলাও, রাজশাহি রুই পোস্ত থেকে মুরগি বড়া, ফুলকপি কড়াইশুঁটির টক— সবই থাকছে। হোটেল হিন্দুস্থান ইন্টারন্যাশনালের রেস্তরাঁ কলসেও পুজোর ভূরিভোজ হবে সাবেক থিমে। সর্ষেবাটা দিয়ে পাবদা মাছ, দই ইলিশ, কাঁকড়ার ঝালে জমতে পারে আড্ডা। তাজ বেঙ্গল এবং হোটেল গেটওয়েও সেই ঘরোয়া থিমের দলেই। পুজোর ক’টা দিন এই দুই জায়গাতে গিয়েই মন ভরে তোপসে, ইলিশ, দুধ রসগোল্লার আহারে আসতে পারে সাবেক আমেজ। সাবেকিয়ানার মাঝেই আটপৌরে থিম এনেছে দক্ষিণ কলকাতার সপ্তপদী। মরিচ লবঙ্গ মাংস, লেবু ভাপা ভেটকি, ডাব পোস্ত চিংড়ির মতো কম চেনা কিছু পদ চেখে দেখা যাবে সেখানে। রাজারহাটের ভেদিক ভিলেজে আবার সাবেক মেজাজের আমিষ-নিরামিষ রকমারি খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে থাকছে নিরিবিলিতে পুজো দেখার ব্যবস্থাও।
বালিগঞ্জের বোহেমিয়ানে এই সাবেকিয়ানার সঙ্গে আধুনিকতার ফিউশনই রয়েছে থিমে। তাই যেমন এক দিকে রয়েছে ঘাটশিলার হাঁড়ি মুরগি, কাঁচালঙ্কা মাংস, শঙ্করপুরী ইলিশ, অন্য দিকে আছে গন্ধরাজ লেবুর পাতা দিয়ে মটন, ড্রামস্টিক স্টু, মালপোয়া চিজ়কেকের মতো এক্কেবারে নতুন ধরনের ভাবনা। আধুনিক সময়ে যাতে কোনও ভাবেই পিছিয়ে না পড়ে সাবেক হেঁশেল, তার যথেষ্ট ব্যবস্থাই রয়েছে এখানে।
তবে সাবেক বাঙালি বাদেও যে সব ধরনের খাবার আসলে এ অঞ্চলের মানুষের অত্যন্ত কাছের তারাও থিমের আয়োজনের বাইরে নয়। যেমন ঔউধ ১৫৬০-এ এই পুজোর বিশেষ আয়োজনের অঙ্গ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে মেটিয়াবুরুজের বিরিয়ানি, জাফরানি কবাব, কলমি কবাব, মুর্গ ইরানি, গোস্ত ভুনা। জি টি রুটে আবার বিরিয়ানি-কবাবের সঙ্গে থাকছে বানারসি জিরাওয়ালি গোবি, ডাল পেশাওয়ারি থেকে লহোরি গোস্ত, ঔউধি নল্লি নেহারি। মাঙ্কি বার আবার এ কলকাতারই বিশিষ্ট কিছু পদ বেছে তৈরি করেছে পুজোর খাদ্য তালিকা। সেখানে পেটপুজো জমতে পারে বিডন ফিশ রোল, গিরিশ পার্কের শয়তান ডিম, এলগিন রোড পর্ক মোমো, চিৎপুর রোড চিকেন রেজালায়।
অতি আপন সাহেবি পার্ক স্ট্রিটের বিলুপ্ত স্বাদ পেতে পুজোয় এক দিন ঘুরে আসা যায় চ্যাপ্টার টু থেকে। কলকাতার অতি আপন স্পাইসড ল্যাম্ব উইথ চিলি বেসিল সস্, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান চিকেন লিভার ফ্রাই, প্রন ককটেল, ডেভিলড ক্র্যাব তৈরি থাকবে সেখানে। কেএফসি-তে এ বছর পুজোর কয়েক দিনের জন্য থাকছে বিশেষ ডেভিল চিকেন। শহরের যে কোনও প্রান্তেই ঠাকুর দেখার ফাঁকে চেখে দেখা যাবে পুজো স্পেশ্যাল এই ডেভিল রেসিপি। সঙ্গে থাকছে কলকাতাবাসীর অতি আপন টেরিটি বাজারের ডিমসাম। তবে তা টেরিটি বাজারে নয়। ঠান্ডা ঘরে, সাজানো-গোছানো চাউম্যান কিংবা মাস্টার ডিমসাম রেস্তরাঁয় বসেই সানন্দে খাওয়া যাবে ফিশ বল নুডল সুপ, মিট বল স্টিক ইন নুডল সুপের মতো রকমারি চিনা টুকিটাকি।
শেষ পাতে মিষ্টিমুখে মামা মিয়া আর রলিকের রকমারি তো আছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy