বয়সের চাকা একটু না ঘুরতেই সিঁথির চারপাশের চুলগুলি যেন হালকা। খুশকির সমস্যাও বাগ মানে না কিছুতেই। শীত এলে রুক্ষতা এতটা পাকাপাকি জায়গা করে নেয় যে, ক্যামেরাও লজ্জা পায়। অ্যাকনে ও কালচে ছোপগুলো অনেক কষ্টেও লুকিয়ে রাখা যায় না ছবিতে। এমন সমস্যাগুলো দেখা দিতে পারে চল্লিশের কাছেপিঠে বয়স থেকে। কিছু ক্ষেত্রে কুড়ির আশপাশেও এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। ফলে আত্মবিশ্বাসের পারদ কিছুটা হলেও ধাক্কা খায় যেন।
ত্বক-চুল ভাল রাখার জন্য ভরসা রাখতে পারেন হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওজ়োন থেরাপির উপরে। রূপ বিশেষজ্ঞ মৌসুমী মিত্র বলছেন, ‘‘ত্বক-চুলের অনেক সমস্যার মোকাবিলায় হাই ফ্রিকোয়েন্সি ট্রিটমেন্ট বেছে নেওয়া হয়। এটিই ওজ়োন থেরাপি নামে বেশি পরিচিত। কাচের মতো দেখতে লম্বা যন্ত্রটির নানা আকারই (মাশরুম, ভি শেপ, চিরুনি) প্রয়োজন মতো হয়ে ওঠে লাবণ্যের চাবিকাঠি। অন্যান্য ট্রিটমেন্টের তুলনায় পুরনো হলেও এটি অনেক সহজ আর প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতেও সময় কম লাগে। সাফল্যের হারও বেশি।’’
চুলের অক্সিজেন...
চুল পড়া বা পাতলা হওয়ার সমস্যায় এই ট্রিটমেন্ট ম্যাজিকের মতো কাজ করে। বয়স বাড়া, বংশ বা পরিবেশের প্রভাবে চুল পড়ার সমস্যায় ভুগলে স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচল বাড়িয়ে নতুন চুল গজানোর সম্ভাবনা আছে বলেই মনে করেন রূপবিশেষজ্ঞরা। সেটা কী ভাবে সম্ভব? প্রতিটি চুলের গোড়ায় রক্তসঞ্চালন বাড়ানো গেলেই নতুন চুল জন্মানোর সম্ভাবনাও বাড়তে পারে। আবার ভাইব্রেশন বা কম্পনের মধ্য দিয়ে হেয়ার ফলিকলকে উদ্দীপিত করেও চুল গজানো সম্ভব। যেখানে চুলের ফলিকল জীবিত আছে (স্ক্যাল্পের যে অংশে খোঁচা খোঁচা চুল বেরিয়ে থাকে) সেখানে করা যেতে পারে এই হাই ফ্রিকোয়েন্সি ট্রিটমেন্ট। কিন্তু যে অংশগুলি সমতল অর্থাৎ ফলিকল জীবিত নেই, সেখানে থেরাপি কাজ করবে না। তবে মৌসুমী মিত্রের অভিজ্ঞতা, মৃত মনে হলেও অনেক ফলিকল সুপ্ত অবস্থায় থাকে। কিছু ক্ষেত্রে অনুমানের উপরে চলে ট্রিটমেন্ট।
স্ক্যাল্পের অনেক সংক্রমণও এই ট্রিটমেন্ট সারিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে খুশকির সমস্যায় খুবই উপকারী। চুলের গোড়ায় অক্সিজেন চলাচল বাড়ায়, রুক্ষতা দূর হয়। চুলের গোড়া শক্ত করে। ট্রিটমেন্টের সময়ে মেশিন থেকে যে ইনফ্রা রে বার হয়, তা কিন্তু চুলের স্বাস্থ্যরক্ষাও করে।
কী ভাবে হয় ওজ়োন থেরাপি
ট্রিটমেন্ট করানোর আগে রূপবিশেষজ্ঞের সঙ্গে সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
• প্রথম ধাপ: চুলের গঠন ও ধরন বুঝে বিশেষ শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করার পর কন্ডিশনার লাগানো হয়। খুশকির সমস্যায় শ্যাম্পুর বদলে অ্যান্টি-ড্যানড্রফ ক্রিম লাগিয়ে চুল পরিষ্কার করে ধোয়া হয়।
• দ্বিতীয় ধাপ: হালকা ব্লো ড্রাই করে চুল শুকিয়ে নিয়ে, সমস্যা বুঝে অ্যান্টি হেয়ার ফল বা অ্যান্টি-ড্যানড্রফ সেরাম লাগানো হয়।
• তৃতীয় ধাপ: ওজ়োন মেশিনের চিরুনি অংশ দিয়ে পাঁচ-দশ মিনিট স্ক্যাল্পে চক্রাকারে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ভাইব্রেশন দিয়ে মাসাজ করা হয়। স্ক্যাল্পের যে অংশ থেকে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, সেখানে ট্রিটমেন্টে জোর দেওয়া হয়।
ত্বকে রশ্মি-কম্পনের জাদুস্পর্শ...
ওজ়োনের তড়িৎবাহিত শক্তি ত্বকের ব্যাকটিরিয়া মেরে অ্যাকনে-ব্রণর মতো সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। ত্বকের লালচে ভাব, বলিরেখার মতো সমস্যায় ওজ়োন বেশ কার্যকর। এনলার্জড পোরসের মোকাবিলায় এর ভূমিকা রয়েছে। ত্বকের রক্তসঞ্চালন ভাল হওয়ায় ফলে লাবণ্য থাকে অমলিন।
অ্যাকনে বিদায়ের পদ্ধতি...
• প্রথম ধাপ: ক্লেনজ়ার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে।
• দ্বিতীয় ধাপ: অ্যান্টি অ্যাকনে লোশন লাগিয়ে, মেশিনের মাশরুম অংশটি অ্যাকনের উপরে ধরা হয় মিনিট পাঁচেক মতো। এতে হালকা কম্পন অনুভূত হয়।
• তৃতীয় ধাপ: অয়েল-ফ্রি ময়শ্চারাইজ়ার বা সানস্ক্রিনের প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
শুষ্ক ত্বকে বসন্ত...
শীত শুরুতেই শুষ্ক বা অনুভূতিপ্রবণ ত্বকের সমস্যায় হাই ফ্রিকোয়েন্সি ট্রিটমেন্ট ভাল কাজ করে। সঙ্গে মাসাজ করা ও প্যাক লাগানোও জরুরি।
• প্রথম ধাপ: ক্লেনজ়ার দিয়ে মুখ পরিষ্কারের পর স্ক্রাবার ও টোনার ব্যবহার করা হয়।
• দ্বিতীয় ধাপ: সমস্যা বুঝে অক্সিজেন, রেজুভিনেটিং বা হাইড্রেটিং জেল বা সেরাম লাগিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাসাজ করা হয়। মিনিট পাঁচেক এ ভাবে চলার পরে অনুভূতিপ্রবণ ত্বকের উপযুক্ত ক্রিম দিয়ে মাসাজ।
• তৃতীয় ধাপ: ত্বকের সমস্যা বুঝে প্যাক লাগানো হয়।
চোখের বাহিরে...
চোখের নীচের ফোলা ভাব বয়স যেন অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়। সঙ্গে দোসর কালো ছোপ ও বলিরেখা। ওজ়োনের জাদুস্পর্শে সমস্যার সুরাহা সম্ভব।
• প্রথম ধাপ: চোখের চারপাশে ক্লেনজ়ার দিয়ে পরিষ্কার করে ডি-ট্যান প্যাক লাগানো হয়।
• দ্বিতীয় ধাপ: আন্ডার আই জেল দিয়ে মেশিনের সাহায্যে মাসাজের পরে আই ক্রিম লাগিয়ে চোখের চারপাশে মাসাজ করা হয়। শেষে সমস্যা বুঝে প্যাক লাগানো হয়।
পরোক্ষ কম্পন
ইনডিরেক্ট হাই ফ্রিকোয়েন্সি ওজ়োন থেরাপিতে যখন ফেসিয়াল মাসাজ হয়, তখন হাতে ওজ়োন মেশিন ধরে চালু রাখা হয়। এতে যিনি মাসাজ করাচ্ছেন, তাঁর ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং তা পরোক্ষ ভাবে ফেসিয়াল মাসাজে সহায়তা করে।
কত দিন চলে এই থেরাপি?
ওজ়োন থেরাপি টানা সাত দিন ধরে চলে। তার পরে কিছু দিন এই ট্রিটমেন্ট বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু যদি দেখা যায়, এতে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না, তখন পুনরায় ট্রিটমেন্ট চালু করতে হবে। ওজ়োন দুর্দান্ত স্ট্রেসবাস্টারও বটে। চিরুনি বা মাশরুমের মতো যন্ত্রটি স্ক্যাল্পের রক্তসঞ্চালন বাড়ানোর সঙ্গে-সঙ্গেই মনও ফুরফুরে করে তোলে। মনের প্রশান্তি বাড়ে, চুল-ত্বক ভিতর থেকে লাবণ্যময় হয়ে ওঠে।
সাবধানতার সঙ্গে...
সতর্ক থাকা জরুরি। ব্যবহারবিধি না জানলে কোনও অংশে প্রয়োজনের বেশি মেশিন চললে জায়গাটি পুড়েও যেতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা ও মাথাব্যথার সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই এগোবেন।
ত্বক ও চুলের প্রয়োজন একটু যত্ন আর ভালবাসা। ঠিক পদ্ধতিতে যদি যত্ন নেওয়া হয়, তা হলে ত্বকের বয়স কমে যায়, চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যাতেও রাশ টানা যায়। আর তখন চেহারার জৌলুসে কেড়ে নিন লাইমলাইট।
মডেল: ঊষসী রায়, শ্রীমা ভট্টাচার্য, তৃষিতা ঘোষাল
ছবি: শুভদীপ সামন্ত,
জয়দীপ মণ্ডল
মেকআপ: সুমন গঙ্গোপাধ্যায়
লোকেশন: বিবনি, কসবা নিউমার্কেট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy