আজকাল প্রি প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। গর্ভসঞ্চারের আগেই কী কী সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত, জানালেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ। ছবি: আইস্টক।
আজকাল কেরিয়ার গুছিয়ে অনেক ছেলেমেয়েরই বিয়ে হয় দেরিতে। গর্ভসঞ্চার হয় আরও দেরিতে ৷ তাই সময়ের চেয়ে বেশ কিছু পরে মা-বাবা হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নিতে হয় বলে কিছু জটিলতা অনেকের ক্ষেত্রেই আসে। সন্তান ও হবু মা-বাবার সুস্থতার কথা মাথায় রেখে তাই প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে।
পরিবার পরিকল্পনার ইচ্ছের ইচ্ছে হলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান ও তাঁর পরামর্শ মতো চলুন৷ যাকে বলে ‘প্রি প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিং’৷ চিকিৎসক যে ভাবে বলবেন, সে ভাবে চললে সমস্যা ধারেকাছে ঘেঁষতে পারে না অনেক সময়। কখনও আবার সমস্যা এলেও তাকে পাশ কাটিয়ে চলার সহজ রাস্তা বার হয়।
অনেক সময় বিয়ের আগেও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলেন অনেকেই। ‘প্রি ম্যারেজ কাউন্সেলিং’-এর জনুপ্রিয়তা বিদেশের মতো এ দেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে। বিয়ের আগে কিছু বিষয়ে জোরও দিতে হয় সুস্থ থাকতে। কেমন সে সব?
আরও পড়ুন: রোদে পুড়েছে ত্বক? রাসায়নিক মেশানো ফেসিয়ালে নয়, ট্যান সরান এ সব উপায়ে
হবু স্বামী–স্ত্রী থ্যালাসিমিয়ার স্ক্রিনিং টেস্ট করান৷ এক জন রোগের কেরিয়ার হলে সমস্যা নেই৷ কিন্তু দু’জনই কেরিয়ার হলে সন্তানের রোগ হতে পারে৷ এ সব ক্ষেত্রে জেনেটিক কাউন্সেলিং করে তবেই বিয়ে করা উচিত৷ এ ছাডা় মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত পিরিয়ডের সঙ্গে মেদবাহুল্য, অতিরিক্ত রোম ও ব্রণর সমস্যা থাকলে— অর্থাৎ বাড়াবাড়ি রকমের পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজ থাকলে ও ঘন ঘন প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে ভাল করে চিকিৎসা করে রোগ সারিয়ে ফেলুন৷ না হলে গর্ভসঞ্চারে অসুবিধে হতে পারে৷
সুস্থ সন্তান পেতে প্রথম থেকেই পরামর্শ নিন চিকিৎসকের।
হবু স্বামীর কোনও সমস্যা থাকলে চিকিৎসা করান৷ সম্ভাব্য ক্ষেত্রে শুক্রাণুর গুণমান যাচাই করে নিন৷ দু’জনকেই খেয়াল জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর ক্ষতি হতে পারে৷ কাজেই বন্ধ করুন সে সব৷ ওজন খুব বেশি হলে ওভারির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে৷ ক্ষতি হতে পারে শুক্রাণুরও৷ কাজেই কম ক্যালোরির সুষম খাবার খেয়ে, ব্যায়াম করে ওজন কমান৷ সুস্থ শরীরে বিএমআই যেন ৩০–এর নীচে থাকে৷
অতিরিক্ত মদ–সিগারেট খেলে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি৷ কাজেই এখন থেকেই নেশা ছাড়ার চেষ্টা করুন৷ শুধু ধূমপান নয়, সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে অতিরিক্ত টেনশনও। তাই তেমন কোনও সমস্যা বাড়াবাড়ি রকম জাঁকিয়ে বসছে দেখলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন প্রথম থেকেই।কোনও ওষুধ নিয়মিত খেলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন তাতে ডিম্বাণু বা শুক্রাণুর ক্ষতি হতে পারে কি না, হলে কী করণীয়৷
প্রি ম্যারেজের চেয়েও আজকাল প্রি প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। গর্ভসঞ্চারের আগেই কী কী সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত, জানালেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ মার্থা হাজরা।
আরও পড়ুন: দাঁতের বিভিন্ন সমস্যায় নাকাল? এ সব অভ্যাসেই মিটতে পারে সমস্যা
প্রি প্রেগন্যান্সি কাউন্সেলিং
ফার্টাইল পিরিয়ডে নিয়মিত সহবাস করার পরামর্শ দেন অনেক চিকিৎসকই। তবে শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী এই নিয়ম কিছুটা বদলায়। তাই সহবাসের উপযুক্ত সময় নিয়েও পরামর্শ নিতে পারেন চিকিৎসকের কাছ থেকে৷ তা সত্ত্বেও ৬ মাসের মধ্যে গর্ভসঞ্চার না হলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷ পিরিয়ড শেষ হওয়ার পর ১২–১৬ দিন হল ফার্টাইল পিরিয়ড৷ পিরিয়ড অনিয়মিত হলে রক্তের সিরাম এলএইচ মেপে বা আলট্রাসাউন্ড করে বুঝতে হয় কখন ডিম্বাণু বেরবে৷ তখন সহবাস করতে হবে৷ স্বামী–স্ত্রী ওজন কম রাখার চেষ্টা করুন, বিশেষ করে স্ত্রী৷ শরীরচর্চা করুন৷ মন শান্ত রাখুন৷ ঘরে বানানো কম ক্যালোরির সুষম খাবার খান৷ মদ্যপান ও ধূমপান করবেন না৷ সন্তানধারনের সময় জন্য এই দুটিই বেশ ক্ষতিকর, বিশেষ করে জটিলতা থাকলে তো এ সব আরও সমস্যা তৈরি করে। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে চিকিৎসায় তাকে নিয়ন্ত্রণে এনে গর্ভসঞ্চারের কথা ভাবুন৷ ডায়াবেটিস বা হাইপোথাইরয়েডিজ্ম থাকলেও এক ব্যাপার৷ যৌন রোগের আশঙ্কা থাকলে রক্ত পরীক্ষা করে, ভাল করে চিকিৎসা করান৷ কিছু যৌন রোগ ক্রনিক হয়ে গেলে বন্ধ্যাত্বও হতে পারে৷ কাজেই সাবধান৷
আরও পড়ুন: এই নিয়মে পুজোর আগে এক মাসেই কমবে মেদ, চেহারায় আসবে জেল্লা
গর্ভসঞ্চারের আগে হবু বাবা-মা পরামর্শ নিন চিকিৎসকের।
এইচআইভি টেস্ট করান৷ রিপোর্ট পজিটিভ এলে কী ভাবে কী করতে হবে তা বিশেষজ্ঞের কাছে জেনে সেই মতো এগোন৷ মহিলাদের যদি রুবেলার প্রতিষেধক না নেওয়া থাকে, স্ক্রিনিং টেস্ট করিয়ে প্রয়োজন হলে এমএমআর টিকা দিয়ে ৩ মাস অপেক্ষা করার পর গর্ভসঞ্চারের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে৷ মেয়েরা ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে ফোলিক অ্যাসিড খান৷ মাল্টিভিটামিনও খেতে হতে পারে৷ তবে অ্যানিমিয়া না থাকলে আয়রন সাপ্লিমেনন্টের দরকার নেই৷ ভেরিসেলা বা চিকেন পক্সের স্ক্রিনিং করান৷ রোগের প্রতিরোধ কম থাকলে প্রতিষেধক দেওয়ার পর তবেই আসবে গর্ভধারণের প্রশ্ন৷ না হলে গর্ভপাত, সময়ের আগে প্রসব ও সন্তানের জন্মগত ত্রুটি থাকার আশঙ্কা থাকে৷ তবে অধিকাংশ মহিলারই এই রোগের বিরুদ্ধে জোরদার প্রতিরোধ থাকে৷ পরিবারে কোনও জেনেটিক অসুখ থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো চলুন৷ প্রয়োজনে ক্রোমোজোমাল স্টাডি করে তবে এগোন৷
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy