Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Hair Style

তার মেঘবরণ কেশ

ঘন একঢাল চুলই আপনার সৌন্দর্যের চাবিকাঠি। চুলকে সুন্দর ও স্ট্রেট রাখতে কোন পদ্ধতি ঠিক, সেটা আগে জেনে নিন...চুল স্ট্রেট করানোর কিছু সুবিধে নিঃসন্দেহে রয়েছে। যেমন হাওয়ায় উড়লেও চুল এলোমেলো হয়ে যায় না।

তানিয়া রায়
শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২০ ০০:৪১
Share: Save:

হেয়ার স্ট্রেট করানো বেশ অনেক দিন ধরেই ‘ইন’। অনেকেই কোঁকড়া চুল বশে আনতে তা স্ট্রেট করিয়ে নেন। লম্বা হোক বা কাঁধ পর্যন্ত ছাঁটা চুল, স্ট্রেট করা থাকলে দেখতেও বেশ সুন্দর লাগবে। অনেকেই আবার স্ট্রেট চুল হাইলাইটও করিয়ে থাকেন। অথবা চুলের আসল রং ধরে রেখেই বদলে ফেলেন স্টাইল।

চুল স্ট্রেট করানোর কিছু সুবিধে নিঃসন্দেহে রয়েছে। যেমন হাওয়ায় উড়লেও চুল এলোমেলো হয়ে যায় না। তেমনই স্ট্রেট, নরম চুলের ছোঁয়ায় বদলে যায় স্টাইল স্টেটমেন্টও। তবে মনে রাখতে হবে স্ট্রেট চুলের প্রয়োজনীয় যত্ন না নিলে চুলের ক্ষতি হতে পারে। পাশাপাশি মাথায় রাখা জরুরি, বাড়িতে বা ভুল পদ্ধতিতে চুল স্ট্রেট করা একেবারেই ঠিক নয়। তাই কী কী পদ্ধতিতে চুল স্ট্রেট করানো যায়, সেটা আগে জানতে হবে।

রকমফের

হেয়ার স্ট্রেটনিংয়ের গোটা প্রক্রিয়াটি হয় হিট দেওয়ার মাধ্যমে। এর বিভিন্ন ভাগ রয়েছে। এর মধ্যে প্রধান কেরাটিন ট্রিটমেন্ট, জাপানি পদ্ধতিতে থার্মাল ট্রিটমেন্ট এবং নানা রকম কেমিক্যাল দিয়ে চুলকে স্ট্রেট করার প্রক্রিয়া।

কত দিন চুল স্ট্রেট থাকবে, তারও ফারাক হয়। অনেকে টেম্পোরারি চুল স্ট্রেট করান। অনেকে আবার দু’-তিন মাস যাতে স্থায়ী হয়, সেই অনুযায়ী চুল স্ট্রেট করান। একে কেরাটিন ট্রিটমেন্ট বলা হয়। জুন টমকিনসের ক্রিয়েটিভ হেড প্রিসিলা কর্নার যেমন বললেন, ‘‘চুল স্ট্রেট করতে যে প্রডাক্ট ব্যবহার করা হয়, তাতে কিছুটা হলেও কেমিক্যাল থাকবে। সে যত দামি প্রডাক্টই হোক না কেন। সেই কারণে চুল স্ট্রেট করানোর পরে চুলের অনেক বেশি যত্ন নিতে হয়। তবে লং টার্ম ট্রিটমেন্টের জন্য যে প্রডাক্ট ব্যবহার করা হয়, তাতে রাসায়নিক পদার্থ তুলনামূলক কম থাকে। আর সাময়িক স্ট্রেটনিংয়ের ক্ষেত্রে কেমিক্যালের ব্যবহার বেশি হয়।’’

যত্ন নেবেন কী ভাবে

চুল স্ট্রেট করালে বাড়িতে নিয়মিত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।

• স্ট্রেটনিংয়ের পরে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলা ভাল। যেখান থেকে হেয়ার স্ট্রেট করাবেন, সেখানকার বিশেষজ্ঞ যে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে বলছেন, সেগুলি ব্যবহার করুন। দাম একটু বেশি হলেও তা চুলের জন্য ভাল। কারণ যে সালঁ থেকে চুল স্ট্রেট করছেন, একমাত্র তারাই জানে আপনার চুলে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়েছে।

• স্ট্রেটনিংয়ের পরে চুলে অতিরিক্ত হিট দেবেন না। ফলে যখন মনে হল তখনই চুলে টং, পার্মিং বা ব্লো ড্রাই করতে পারবেন না। বেশি হিটের প্রভাবে চুলের নরম ভাবটা চলে যায়। চুল অনেক বেশি রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে।

• স্ট্রেটনিংয়ের পরে কিছু দিন তেল লাগানো যায় না ঠিকই, তবে তেল বর্জন করাও ঠিক নয়। বরং স্ট্রেট চুলে হট অয়েল মাসাজ নিঃসন্দেহে সেরা ন্যাচারাল ময়শ্চারাইজ়েশন।

• স্ট্রেটনিংয়ের পরে বিশেষজ্ঞই বলে দেবেন, আপনি কত দিন পর্যন্ত চুলে ক্লিপ বা অন্য কোনও অ্যাকসেসরিজ় লাগাতে পারবেন না। পরে চুলে যে অ্যাকসেসরিই ব্যবহার করুন না কেন, সেটা যেন ভাল কোয়ালিটির হয়, তা দেখে নিতে হবে। না হলে চুল ছিঁড়ে যেতে পারে।

• চুল স্ট্রেটনিংয়ের পরে ১৫ দিন অন্তর প্রফেশনাল ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। এই ট্রিটমেন্ট চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখবে ও ভলিউম বাড়াবে। চুলও নষ্ট হবে না।

খেয়াল করবেন

যে কোনও ভাল সালঁয় হেয়ার স্ট্রেটনিংয়ের খরচ এমনিতেই অনেকটা বেশি হয়। পাশাপাশি বারবার হেয়ার স্ট্রেটনিংয়ের ফলে চুল বেশ রুক্ষ ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। ফলে চুল পড়ার সমস্যা বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত চুল ময়শ্চারাইজ় করা অত্যন্ত জরুরি।

স্ট্রেটনিংয়ের সময়ে যে কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়, তাতে স্ক্যাল্পের ক্ষতি হতে পারে। স্ক্যাল্প বেশি রুক্ষ হয়ে গেলে খুসকির সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই ময়শ্চারাইজ়িং হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন।

হেয়ার স্মুদনিং

আপনার চুল যদি অতিরিক্ত রুক্ষ হয়, তবে চুলকে যে পদ্ধতিতে নরম করা হয়, সেটাকে স্মুদনিং বলে। হেয়ার স্ট্রেট করালে চুলের অনেক বেশি ক্ষতি হয়। স্মুদনিং করানোয় সেটা হয় না। হেয়ার স্মুদনিংয়ের মাধ্যমেও চুল স্ট্রেট করা যায়। আর তা অনেক বেশি স্বাভাবিক দেখতে লাগে। অন্য দিকে স্ট্রেটনিংয়ের মাধ্যমে চুল সোজা করালে বেশির ভাগ সময়েই তা কৃত্রিম দেখায়। তবে হেয়ার স্ট্রেটনিংয়ে যেমন স্থায়িত্ব বেশি, স্মুদনিংয়ের এফেক্ট আবার খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়। কোঁকড়া চুলে স্ট্রেটনিং ছাড়া গতি নেই। প্রিসিলা কর্নার বলছিলেন, ‘‘হেয়ার স্মুদনিং এবং স্ট্রেটনিংয়ের মধ্যে তফাত হল আয়রনিংয়ে। স্মুদনিংয়ের জন্য তাপমাত্রা একেবারে মিনিমাম হবে।’’ ফলে হেয়ার স্মুদনিংয়ে চুলের ক্ষতি কম হয়। কিন্তু তার স্থায়িত্বও কম।

হেয়ার পলিশিং

এই পদ্ধতিতে ক্রিমের মাধ্যমে মাসাজ করা হয় চুলে। এতে রুক্ষ চুলের জেল্লা ফিরে আসে। মূলত চুলের স্‌প্লিট এন্ড ঠিক করতে এই ট্রিটমেন্ট উপযোগী। চুল না কেটেও পলিশিংয়ের মাধ্যমে স্‌প্লিট এন্ড ঠিক করা যায়। চুলে রং করালে বা কোনও কেমিক্যাল ব্যবহারের পরে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। হেয়ার পলিশিংয়ের মাধ্যমে সেই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।

হেয়ার স্পা

এই পদ্ধতিতে থাকে রুট নারিশিং, অয়েল মাসাজ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনিংয়ের মতো পর্যায়। এতেও চুল নরম ও মসৃণ হয়। খু‌সকি কমে। জট কম পড়ে। চুলের ভলিউম বাড়ায়। তবে হেয়ার স্পা করানোর আগে জেনে নিতে হবে, আপনার চুল কী ধরনের বা স্ক্যাল্পে কোনও সমস্যা আছে কি না!

হেয়ার স্ট্রেট করানো ভাল না কি স্মুদনিং অথবা পলিশিং, সেটা নিজের চুলের ধরন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে প্রাথমিক শর্তই হল, চুলের যত্ন। না হলে সাধের চুল নষ্ট হয়ে গেলে কিছুই করার থাকবে না।

তথ্য সহায়তা: প্রিসিলা কর্নার, (ক্রিয়েটিভ হেড, জুন টমকিনস)

মডেল: তৃণা সাহা, সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়, অদ্রিজা ভট্টাচার্য

ছবি: জয়দীপ মণ্ডল; মেকআপ ও হেয়ার: অভিজিৎ পাল; লোকেশন: হেডটার্নারস, দ্য পার্ক হোটেল

অন্য বিষয়গুলি:

Hair Style Hair Straightening
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy