যন্ত্রমানব শিল্পী ‘এআই-ডিএ’। ছবি : সংগৃহীত।
রোবট হল যন্ত্র। তার ভাবনাচিন্তা সবই অঙ্কে বাঁধা। কিন্তু শিল্প তো অঙ্ক নয়। রং-তুলি-ক্যানভাসে ছাড়াও তার নেপথ্য থাকে ভাবনা, কিছু আবেগ, অভিজ্ঞতা, আর কিছু মনন। তবেই গিয়ে রং-তুলি মিলেমিশে ছবি ফোটায় ক্যানভাসে। শিল্পে তাই এত দিন আবেগ আর ভাবনাপ্রবণ মানুষেরই আধিপত্য ছিল। কিন্তু সেই ধারণায় সম্প্রতি ধাক্কা দিয়েছে এক যন্ত্রমানব শিল্পী। নাম ‘এআই-ডিএ’। রং-তুলির টানে সে ক্যানভাসে এঁকে ফেলেছে একটি সম্পূর্ণ ছবি। সেই ছবি নিলামে বিক্রিও হয়েছে ১৩ লক্ষ ২০ হাজার মার্কিন ডলারে। যা ভারতীয় মুদ্রায় ১১ কোটি ১৩ লক্ষ টাকার সমান।
এই প্রথম কোনও মানুষের মতো দেখতে রোবট বা হিউম্যানয়েড ছবি আঁকল। তবে সে ছবি কেউ অত দাম দিয়ে কিনতে পারে, তা আন্দাজও করতে পারেনি লন্ডনের নিলামঘর সদবি। সাড়ে ৭ ফুটের লম্বাটে ক্যানভাসে আঁকা ছবিটি তারা রেখেছিল সদবির ডিজিটাল আর্ট সেলে। কর্তৃপক্ষ ভেবেছিলেন, ওই ছবির দাম ২ লক্ষ ডলারও ছুঁতে পারবে না। খুব বেশি হলে দাম উঠতে পারে ১ লক্ষ ৮০ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা দেড় কোটি টাকার আশপাশে। কিন্তু নিলাম শুরু হওয়ার পরে দেখা যায় রোবটের শিল্পীর আঁকা ছবি রেকর্ড ভেঙে ১১ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। দেখে চমকে গিয়েছেন সদবি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কী এমন ছিল সেই ছবিতে? ক্যানভাসে কী এঁকেছিল শিল্পী রোবট?
সদবি কর্তৃপক্ষ সেই ছবি প্রকাশ করেছেন। গাঢ় খয়েরি রঙের ক্যানভাসে ফুটে উঠেছে একটি মুখাবয়ব। তবে সেই মুখাবয়ব সম্পূর্ণ নয়। ছবিটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এআই গড’। যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘কৃত্রিম মেধার ঈশ্বর’। ছবিটি অবশ্য রক্ত-মাংসের মানুষেরই। এক জন প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ অ্যালান টিউরিং। ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ওই গণিতজ্ঞ সাড়া ফেলেছিলেন নাৎজ়িদের পাঠানো সাঙ্কেতিক বার্তার মর্মার্থ উদ্ধার করে। বলা হয়, টিউরিংয়ের ওই পদ্ধতিই নাৎজ়ি এবং তার বন্ধু দেশগুলিকে হারিয়ে প্রতিপক্ষ দেশগুলিকে জিততে সাহায্য করেছিল। পরে টিউরিংয়ের হাত ধরেই কৃত্রিম মেধার সূচনা হয়। টিউরিংকে তাই বলা হয়, কৃত্রিম মেধার জনক। আবার এই টিউরিংই কৃত্রিম মেধার অপব্যবহার নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। হিউম্যানয়েড বা মানুষ সদৃশ রোবট ‘এআই ডিএ’ তার প্রথম শিল্প উৎসর্গ করেছে টিউরিংকেই।
তবে ছবিতে দেখা টিউরিংয়ের মুখের বিভিন্ন অংশ ভেঙেচু়ড়ে এক বিমূর্ত শিল্প তৈরি করেছে শিল্পী রোবট। ছবির ব্যাখ্যা করতে বসে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘‘টিউরিং কৃত্রিম মেধাকে সামলানোর ক্ষেত্রে যে সমস্যার কথা শুনিয়েছিলেন, ওই ছবি সে সমস্যারই প্রতিফলন।’’
তবে ‘এআই-ডিএ’ ওই ছবি তার ‘টিম’-এর সঙ্গে আলোচনার পরে এঁকেছে বলে জানিয়েছে সদবি। তারা বলেছেন, আঁকার আগে এআই-ডিএ টিমের সকলের সঙ্গে আলোচনা করেছিল কৃত্রিম মেধাকে ভাল কাজে ব্যবহার করার বিষয়ে। তার পরেই ওই ছবি আঁকে সে। সদবি জানিয়েছেন, এআই-ডিএ হল বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক এবং অতি বাস্তববাদী যন্ত্রমানব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy