লকডাউনে অ্যাংজাইটির শিকার ছোটরা। ছবি-শাটারস্টক থেকে নেওয়া
বাড়িতে আটকে থেকে বিরক্ত হয়ে পড়ছে ছোট থেকে বড় সকলেই। ছোটদের সামলাতে গিয়ে বাবা মায়েরা হিমশিম খাচ্ছেন। বাড়ছে মনের সমস্যা। স্পেশাল চাইল্ডদের ঠিক মত চেক-আপ হচ্ছে না, বাদ পড়ছে নানা থেরাপি। ফলে সমস্যা বাড়ছে তাদেরও। ছোটদের ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি সহ মনের নানা সমস্যা মোকাবিলা করতে হবে বাড়ির বড়দের। তবে দরকার হলে পেশাদার মনোবিদের সাহায্য নিতেই হবে।
প্রায় চারমাস হল স্কুল পড়ুয়ারা গৃহবন্দি। হয়তো পুজোর আগে পর্যন্ত এই বন্দি দশা চলবে। স্কুল পড়ুয়াদের এই পরিস্থিতিতে সময় কাটানোর অভ্যাস ছিল না। আর সেই কারণেই ওরা ক্রমশ অধৈর্য হয়ে উঠছে, বেশি সমস্যা হচ্ছে বয়ঃসন্ধির ছেলেমেয়েদের। এদের মধ্যে ডিপ্রেশন ও তার প্রকাশ হিসেবে রাগ বাড়ছে, বললেন মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী। শহর ও মফঃস্বলের ছেলেমেয়েদের সমস্যা তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি। যদিও বেশিরভাগ স্কুলে অনলাইন ক্লাস চলছে, কিন্তু তার সময়সীমা ছাত্রছাত্রীদের মন ভাল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ৩ – ৪ ঘণ্টা ক্লাসের পর সারা দিন বলতে গেলে তাদের হাতে অনন্ত সময়। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব, খেলাধুলো, ঝগড়া সবই বন্ধ লকডাউনে। এদিকে ওদের ভরপুর এনার্জি। কিন্তু তা প্রকাশের অভাবেই সমস্যা বাড়ছে।
শর্মিষ্ঠা দেবীর মত, যাঁদের একান্নবর্তী পরিবার নয়, ফ্ল্যাটে থাকেন, তাঁদের বাড়ির ছোটদের সমস্যা অনেক বেশি। বেশিরভাগ বাবা মা ব্যস্ত থাকেন তাঁদের অফিসের কাজ নিয়ে। বাড়িও সামলাতে হয়, তাই ছোটকে সময় দেওয়ার কথা আর মাথায় থাকে না। বাবা-মা অনলাইন ক্লাসের পর ছোটকে চুপ করে বসে পড়াশোনা করতে বলে তাঁদের দায়িত্ব শেষ করছেন অনেক ক্ষেত্রে। ক্লাসের সময় ছাড়া মোবাইল বা ল্যাপটপে খেলা করলে বা চ্যাট করলে বকাবকি ও মারধর করছেন। এর জন্য ছোটদের মধ্যে ডিপ্রেশন ও রাগের প্রকাশ হিসেবে চিৎকার করা বা জিনিসপত্র ছুড়ে ভেঙে ফেলার মত অসংযত আচরণ দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বাবা মায়ের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল শিক্ষকদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে বলে মনে করেন মনোরোগ চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী।
আরও পড়ুন: লকডাউনে একটুও রোদ লাগেনি গায়ে? ভয়াবহ এ সব সমস্যা হতে পারে ভিটামিন ডি-র অভাবে
স্কুলের শিক্ষকরা ছোটদের সরাসরি পড়ানো শুরু করে দেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই। কিন্তু প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে নাম ধরে তাদের দিনযাপনের কথা জানতে চেয়ে হালকাভাবে ক্লাসের প্রথমে পড়াশোনা শুরু করাতে পারলে ভাল হয়। অনেক বাবা-মায়েদের আর একটা সমস্যা স্কুলের পড়া হয়ে গেলেই তাঁরা মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করেন। এক্ষেত্রে ছোটরা আরও মুষড়ে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে পড়াশোনার পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের মোবাইলে খেলতে বা বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার জন্য কিছুটা সময় বরাদ্দ করতে হবে। এছাড়া বাড়িতে যদি দাদু-ঠাকুমা থাকেন তাঁদের কাজে ছেলে মেয়েকে সাহায্য করতে বলতে হবে। ছাদে বা বাড়ির নিচে হাঁটতে যাওয়ার সঙ্গী হতে বলা যেতে পারে। এর ফলে শিশুদের পাশাপাশি বাড়ির প্রবীণদেরও মন ভাল থাকবে। কিন্তু যদি দেখা যায় ছোটদের কোনওভাবেই বাগে আনতেও পারছেন না, মানসিক সমস্যা বেড়ে যাচ্ছে, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে, জানান শর্মিষ্ঠা। অনলাইনে এবং প্রয়োজনে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে মনোবিদের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন: লকডাউনে ছোটদের কাছে পাচ্ছেন বেশি, ভাল অভ্যাস গড়ে তুলবেন কী ভাবে?
ছোটদের মন-মেজাজ ভাল রাখতে শারীরিক পরিশ্রম করানো অত্যন্ত দরকারি, বললেন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট স্মরণিকা ত্রিপাঠী। স্কুলে যাওয়া আসা, বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলো করা, সাঁতার, নাচ, ক্যারাটে ক্লাস সবেতেই ছোটরা ‘ফিজিক্যালি স্টিম্যুলেটেড’ হত। কিন্তু করোনা আবহে লকডাউন সবই বন্ধ। এই কারণেই বাড়ছে মনের সমস্যা। খেলা –সহ অন্যান্য শারীরিক কসরত করলে মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে। ফলে একদিকে মন ভাল থাকে অন্যদিকে পরিশ্রমের ফলে ঘুমোতে অসুবিধে হয় না। বাড়িতে শুয়ে বসে থাকার জন্যে ছোটদের ঘুমেরও অসুবিধা হয়। অনেক ছোট গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে না। সব মিলিয়ে জীবন যাপনের নিজস্ব ছন্দ এলোমেলো হয়ে গেল। একালের বেশিরভাগ মানুষের ২৪ ঘণ্টা বাড়িতে থাকার অভ্যাস নেই। ছোটদের সমস্যা বাড়ছে এই কারণেই। ছোটদের একটা রুটিন করে দেওয়ার চেষ্টা করলেও জোর করে এই নতুন জীবন ও নিয়ম মেনে নিতে ছোট থেকে বয়স্ক সকলেরই অসুবিধা হচ্ছে। ছোটরা অনিশ্চয়তায় ভুগছে। জুলাই মাস থেকে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে স্কুল শুরু হবে বলে ভাবলেও তা হয়নি। কিন্তু এখন স্কুল চালুর ব্যাপারে কেউই নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। এদিকে, স্কুলে অনেক সমবয়সী ছেলে মেয়ের সঙ্গে গল্প করা ও নানা মতের আদান-প্রদান হয়। বাড়িতে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে ছোটদের মন ভারাক্রান্ত হয়ে আছে, বললেন স্মরণিকা। এমন জীবনযাত্রায় ছোটদের কিছুটা হালকা রাখার চেষ্টা করতে হবে বাবা-মা-সহ স্কুলের শিক্ষকদেরও।
অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি ছোটদের বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করার ব্যাপারে শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। শিক্ষকদের ছোটদের কথা শুনতে হবে। একই সঙ্গে কোভিডের ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানাতে হবে। গল্প পড়া ও লেখার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। নিয়ম করে ফান এক্সারসাইজ বা জুম্বা নাচের মত ব্যাপারে উৎসাহ দিতে হবে। ছোটদের মন বোঝার জন্য বাবা-মা-সহ বাড়ির বড়দের কিছুটা সময় দিতে হবে। তবে এটাও ঠিক ছোটরা দ্রুত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। ওদের নির্দিষ্ট কিছু কাজের দায়িত্ব দেওয়া হলে তা পালনও করে। লক ডাউনের স্ট্রেস কাটানোর পাশাপাশি কোভিড -১৯ এর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে মুখে মাস্ক পরা ও মুখে চোখে হাত দেওয়ার আগে এবং খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেওয়ার অভ্যাস বজায় রাখতে হবে ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy