Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
লকডাউনে ভিটামিন ডি ঘাটতি

লকডাউনে একটুও রোদ লাগেনি গায়ে? ভয়াবহ এ সব সমস্যা হতে পারে ভিটামিন ডি-র অভাবে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট বিএইচকে-র পরিসরে গায়ে রোদ-মাখার সুযোগ হয়নি। এতেই বেড়েছে সমস্যা।

ভিটামিন ডি-র অভাব থেকে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। ফাইল চিত্র

ভিটামিন ডি-র অভাব থেকে হতে পারে মারাত্মক ক্ষতি। ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ১২:১৩
Share: Save:

লকডাউনে বহুদিন বাড়িতে। বাইরে বেরনো হয়নি একেবারেই। এদিকে, আনলক পর্ব শুরু হলেও অনেকেই আতঙ্কে বাইরে বেরতে পারছেন না। কারও ক্ষেত্রে আনলক পর্বেও কাজ শুরু হলেও সেটাও বাড়ি থেকেই। ফলে সূর্যের দিকে চাওয়ার অবকাশ মেলেনি। ছাদে গিয়ে সামান্য হলেও হাঁটার সুযোগ মিলেছে অনেকের। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছোট বিএইচকে-র পরিসরে গায়ে রোদ-মাখার সুযোগ হয়নি। এতেই বেড়েছে সমস্যা। কিন্তু কেন?

লকডাউনে দীর্ঘসময় বাড়িতে বসে ল্যাপটপে কাজ? সারা ক্ষণ হাত-পা, কোমরে ব্যথা? এদিকে খাবার যথেষ্টই খেয়েছেন। করেছেন শরীরচর্চাও। কিন্তু হাড়ে-পেশীতে টান ধরছে। ভিটামিন ডি-র অভাব নয়তো? রোদে একটুও না বেরনোর ফলে অনেক মানুষের এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। কয়েক মাসে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি সংক্রান্ত সমস্যাও বেড়ে গিয়েছে।

ভিটামিন ডি-র অভাব হলে কেবল মাত্র হাড় ক্ষয়ে যাওয়া বা ব্যথা-বেদনা নয়, তৈরি হতে পারে আরও বড় সমস্যা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, পেশি নাড়াচাড়া করতেও প্রয়োজন হয় এটির। এমনকী এর সাহায্য ছাড়া মস্তিষ্ক থেকে সারা শরীরে বার্তা পর্যন্ত পাঠাতে পারে না স্নায়ু।

আরও পড়ুন: আমার কি করোনা হয়েছে, বুঝব কী উপায়ে?

করোনা আবহে বার বার জোর দেওয়া হচ্ছে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতার উপর। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও ভিটামিন ডি ছাড়া ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাসদের প্রতিহত করা দুঃসাধ্য।

আরও পড়ুন: লকডাউনে রুটিনের দফারফা, ঠিক কতটা জল খেতে হবে এই সময়ে​

এনসিবিআইয়ের সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র বলছে, ভারতের প্রায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ ভিটামিন ডি-র অভাবে ভোগেন। এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট বলছে সারা বিশ্বে প্রায় ১০০ কোটি মানুষ ভিটামিন ডি-র অভাবে ভুগছেন। গ্লোবাল হেলথ প্রবলেম বলা হচ্ছে ভিটামিন ডি-জনিত ঘাটতিকে।

আরও পড়ুন: লকডাউনে ছোটদের কাছে পাচ্ছেন বেশি, ভাল অভ্যাস গড়ে তুলবেন কী ভাবে?​

প্রায় ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে সূর্যালোক থেকে। ত্বকের মাধ্যমে শোষণ হয় সেটি। প্রতিদিন ২০ মিনিট অন্তত রোদে থাকলে ৪০ শতাংশ ভিটামিন ডি শোষিত হয় ত্বকে। কিন্তু লকডাউনে এই রুটিন মানতে পেরেছেন কজন?

এই প্রসঙ্গে মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, "বাইরে বেরনো কমে গিয়েছে। এই কারণে প্রতিদিন কিছুক্ষণ হলেও রোদে থাকতে হবে। ছাদ না হলেও বারান্দা বা জানলা দিয়ে যে রোদ আসে, তা শরীরে লাগানো আবশ্যক। ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে খেতে হবে। দুধ, ছানা এ জাতীয় খাবারে ভিটামিন ডি রয়েছে। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্টস খাওয়া যেতে পারে, তবে তার জন্য অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।''

আরও পড়ুন: ফ্রিজ থেকে কি করোনা ছড়ায়? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা, জেনে নিন

এই প্রসঙ্গে ডায়েটিশিয়ান রেশমী রায়চৌধুরী বলেন, ''যদি চিকিৎসকের বারণ না থাকে। সে ক্ষেত্রে রোজ একটি করে ডিম খেলে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি পূরণ হতে পারে।''

ভিটামিন ডি ঠিক মতো তৈরি না হলে ক্যালসিয়াম কাজ করতে পারে না। ফলে থাবা বসায় ছোটদের রিকেট থেকে শুরু করে বড়দের অস্টিওম্যালশিয়া, অস্টিওপোরেসিস প্রভৃতি নানাবিধ রোগ।

অন্যদিকে, ভিটামিন ডি-র সঙ্গে একাকিত্বের সংযোগের কথা বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্রে উঠে এসেছে সম্প্রতি। ভিটামিন ডি থ্রি-র অভাবে শরীরে সেরোটোনিন হরমোনের ক্ষরণ ঠিকমতো হয় না, আমেরিকার কয়েকটি গবেষণাপত্রে এমনটা প্রকাশিত হয়েছে। সবমিলে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি যে মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, তা বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন: করোনা আবহে মন ভাল রাখতে মানতেই হবে চিকিৎসকদের এই সব পরামর্শ​

কোন বয়সে শরীরে কতখানি ভিটামিন ‘ডি’ প্রয়োজন। ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন বোর্ড (জাতীয় বিশেষজ্ঞদের একটি দল) আন্তর্জাতিক এককে (IU) জানিয়েছে সেই সীমা।

• জন্ম থেকে ১২ মাস : ৪০০ IU

• ১ থেকে ১৩ বছর : ৬০০ IU

• ১৪ থেকে ১৮ বছর : ৬০০ IU

• ১৯ থেকে ৭০ : ৬০০ IU

• তার ঊর্ধ্বে: ৮০০ IU

• গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী তরুণী ও মহিলারা : ৬০০ IU

চিকিৎসকরা বলছেন, রোদ থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি-র কিন্তু কোনও বিকল্প নেই। তাই অসূর্যম্পশ্যা না হয়ে রোজ বরং খানিকটা রোদ মেখে নিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE