রোগ প্রতিরোধই সুস্থ থাকার সেরা উপায়। প্রতীকী ছবি।
সীমান্তের সৈন্যদলের মতোই এরা নাওয়া-খাওয়া ভুলে দিনরাত পাহারাদারি করে। শত্রু দেখলেই দল বেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শত্রুকে ঘায়েল করে। কিন্তু যখন হেরে যায় তখনই অসুখবিসুখ নাস্তানাবুদ করে ফেলে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা এমনই এক সেনাদল। এই ইমিউন সিস্টেম জোরদার হলে ক্যানসার-সহ অনেক অসুখবিসুখকেই দূরে সরিয়ে রাখা যায় অনায়াসে।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্পেশালিষ্ট পুষ্পিতা মণ্ডলের সমতে, ‘‘ইদানীং জীবন যাত্রার পরিবর্তনের ফলে বাড়তি ওজনের বোঝা বইতে হচ্ছে। নানা অসুখবিসুখের মুলে আছে ওবেসিটি। তাই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বাড়ানোর প্রথম শর্ত: ওজন স্বাভাবিক রাখার জন্য সঠিক খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চা করা। এই অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে ছোটবেলা থেকেই।’’
রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার খুঁটিনাটি
শরীরের বিভিন্ন কোষ, টিস্যু ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নির্দিষ্ট নিয়মে বাইরের যে কোনও বিরূপ ঘাত-প্রতিঘাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। এই সম্পূর্ণ সিস্টেমের ডাক্তারি নাম ‘ইমিউনিটি সিস্টেম’। এর বেশ কয়েকটি ভাগ আছে— যেমন সারফেস বেরিয়ার, ইনেট ইমিউন সিস্টেম, কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম, অ্যাডাপ্টিভ ইমিউন সিস্টেম ইত্যাদি।
সারফেস বেরিয়ারের প্রথম সৈন্যদল হল ত্বক। বাইরের পরিবেশের ঘাত-প্রতিঘাত থেকে আমাদের রক্ষা করে শরীরের সব থেকে বড় অঙ্গ ত্বক। গরম, ঠান্ডা, ধুলো, দূষণ-সহ নানা জীবাণুকে শরীরে প্রবেশ করতে বাধা দেয় এই অতি বিশ্বস্ত পাহারাদার। ইনেট ইমিউন সিস্টেম হল কোনও মাইক্রো-অরগ্যানিজম বা টক্সিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের শরীর থেকে দূর করে দেওয়া। কমপ্লিমেন্ট সিস্টেমের অন্যতম লিউকোসাইট বা শ্বেতকণিকা। এরা সদা জাগ্রত পাহারাদার। বাইরের শত্রু প্রবেশ করলেই রে রে করে তেড়ে যায়। এ ছাড়া আমাদের ইমিউন সিস্টেমের মধ্যে আছে ডেনড্রাইটিক সেল, কিলার টি সেল ইত্যাদি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নজর রাখুন খাবার পাতে। ছবি: শাটারস্টক।
স্ট্রেস বাড়লেই কমজোরি
কখনও রাস্তা জুড়ে মিটিং-মিছিল, কখনও ট্রেন-বাস অবরোধ গন্তব্যে পৌঁছনো নিয়ে দুশ্চিন্তা। সব মিলিয়ে শরীর মনের স্ট্রেস বাড়ে শিশু থেকে বড় সকলেরই। রাতের ঘুমটুকু ছাড়া বিশ্রামের তেমন ফুরসত নেই। তাও পর্যাপ্ত ঘুম হয় না অনেকেরই। এর নিট ফল পড়ে আমাদের শরীরের পুরো সিস্টেমের উপর।
গবেষণায় জানা গিয়েছে, লাগাতার মানসিক চাপের ফলে স্ট্রেস হরমোন গ্লুকোকর্টিকয়েডস নিঃসরণ বেড়ে যায়। এর ফলে আমাদের শরীরের রক্ষা কর্তা লিম্ফোসাইট উৎপাদনকারী থাইমাসের কাজ ব্যহত হয়। ফলশ্রুতি, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। শিশু থেকে বয়স্ক সকলেরই বাড়তি স্ট্রেস ইমিউনিটি কমিয়ে দিয়ে নানা অসুখ ডেকে আনে।
উপায়
স্ট্রেস কমাতে নির্দিষ্ট সময় কাজের পর গান শোনা বা আড্ডা দেওয়া অথবা গল্পের বই পড়া এবং পোষ্যর সঙ্গে সময় কাটানো যেতে পারে। এ ছাড়া নিয়ম করে আট ঘন্টা ঘুমোন জরুরি। ঘুম কম হলেও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে।
সাইটোকাইনস ও হোয়াইট ব্লাড সেল বাড়ানোর উপায়
ভাবছেন এরা আবার কারা! অসুখ নামক জঙ্গী দমনের অন্যতম অস্ত্র এরা। আর এদের শক্তি বাড়ানোর উপায় খুব কঠিন নয়। সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ দিন দৈনিক আধ ঘন্টা অর্থাৎ সপ্তাহে সাকুল্যে ১৫০মিনিট শরীরচর্চা মর্নিং বা ইভিনিং ওয়াক করতেই হবে। তার সঙ্গে নিয়ম করে মিনিট পাঁচেক মেডিটেশন করতে পারলেই কেল্লা ফতে! আর আছে কিছু ইমিউনিটি বুস্টার খাবারদাবার।
চিকিৎসক পুষ্পিতা মণ্ডলের কথায়, ‘‘ভিটামিন সি, বায়ো ফ্ল্যাভোনয়েডস, ফাইটোকেমিক্যাল-সহ বেশ কিছু অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে। ভিটামিন সি আছে আমলকি, কমলালেবু, বাতাবিলেবু-সহ সব ধরনের লেবু জাতীয় ফলে। এ ছাড়া রঙিন টাটকা শাক-সব্জি, তাজা ফল, বাদাম, চিকেন, মাছ, দুধ, ডিম-সহ সব খাবারেই আছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট। তবে ভাজা, তেল, ঝাল-মশলা সহযোগে রান্না করে খাবারের গুণ নষ্ট না করাই ভাল। নিয়ম করে চিনি ছাড়া দইও খাওয়া দরকার।
বাদ দিন প্রক্রিয়াজাত খাবার, বাক্সবন্দি প্রিজারভেটিভ দেওয়া, কৃত্রিম রং ও অ্যাডিটিভ যুক্ত খাবার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy