ছিপছিপে থাকতে মেনে চলুন কিছু দাওয়াই।
রাজহাঁসের মতো গ্রীবা, কবুতরের ডানার মতো পেলব বাহুডোর, আর বহতা নদীর মতো কোমর। লেখকরা প্রিয়তমার রূপের যে ছবি এঁকেছেন, তা ঠিক যেন আজকের আওয়ার গ্লাস ফিগার। শরীরের আকৃতি হবে সুডৌল, মেদহীন। কোমরের অংশ টানটান। সাধারণত ফ্যাশনদুরস্ত পোশাকের কাট তৈরি হয় এমন গড়ন মনে রেখে। কোমর এতটুকুও ভারী হয়ে গেলে এই পোশাকগুলি পরাই যায় না। অন্য দিকে শাড়ি পরলে তো আকর্ষক কোমর মাস্ট। সুন্দর করে গোছানো কুঁচির ফাঁকে কমনীয় কটিদেশটি উঁকি দেবে, সেখানে একটি বিছে হার বা কোমরবন্ধ পরবেন, তবেই তো মন ভরবে। তাই শৌখিন মহিলারা কোমর একটু গোল হলেই আঁতকে ওঠেন। এ দিকে বয়স তিরিশ ছুঁলেই ভারতীয় মেয়েদের কোমর ভারী হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই কোমরের বহরই বলে দেয় আপনার বয়স ঠিক কত। ফিনফিনে পাতলা কোমরের আড়ালে কিন্তু অনেক বছর অনায়াসে লুকিয়ে ফেলা যায়। তাই ফিগার সংশোধন করতে, একটু সংযম রাখুন আর কয়েকটা নিয়মকানুন মেনে চলুন।
কটিদেশের শত্রু কোটি কোটি
ভুল খাবার আর আলস্যের কারণেই কোমরের প্রস্থ বাড়ে। সফট ড্রিঙ্ক, অনিয়মিত ঘুম, স্ট্রেস, ভুল ভঙ্গিতে দাঁড়ানো, বসা এবং হাঁটাচলা, টিভি দেখতে দেখতে মুখ চালানোর বদভ্যেস কোমরে মেদ জমায়। তার উপরে ইদানীং টাচস্ক্রিনে আঙুল বুলিয়েই আরামদায়ক যানবাহন বাড়ির দরজায় ডেকে আনা যায়। রেস্তরাঁর লোভনীয় পদ মুখের সামনে হাজির হয়ে যায়। এই ‘স্মার্ট’ জীবনযাত্রাতেই পেটের প্রস্থ বাড়তে থাকে। প্রয়োজনে ফিটনেস অ্যাপ ব্যবহার করুন। সমীক্ষা বলছে, সবচেয়ে আগে ও তাড়াতাড়ি মেদ জমে যায় কোমরে। স্বস্তির কথা, তা চটপট ঝরিয়েও ফেলা যায়।
ওয়র্ক আউটে মেদ আউট
ফিটনেস বিশেষজ্ঞ চিন্ময় রায় জানাচ্ছেন, মেদ ঝরাতে সবচেয়ে কার্যকর জোর বাড়ানোর ব্যায়াম। ওজন নিয়ে পায়ের ব্যায়াম করলে দৌড়ানো বা হাঁটার চেয়েও বেশি ফল পাবেন। তাই স্কোয়াট (শরীর আধখানা ভেঙে উবু হয়ে বসা), লাঞ্জ (এক হাঁটু মুড়ে বসা), স্টেপ আপ (বাক্স বা সিঁড়িতে ওঠানামা) করে পা শক্তপোক্ত করুন। শরীরের মধ্যভাগ আপনিই টানটান হবে। সপ্তাহে দু’-তিন দিন প্ল্যাঙ্ক, সাইড প্ল্যাঙ্ক (কনুই ও পায়ের আঙুলের ভরে ওজন রেখে ওঠানামা), ওয়াইপার (পা দিয়ে ঝাঁট দেওয়ার ভঙ্গি) অভ্যেস করুন। প্রথমে সপ্তাহে দিনে পাঁচটা করে পাঁচ বার, দ্বিতীয় সপ্তাহে সাতটা করে সাত বার— ক্রমশ কষ্টসহিষ্ণু হয়ে উঠুন। দুই সপ্তাহ পরে ব্যায়ামগুলি কঠিনতর করতে হাতে ডাম্বল নিয়ে স্টেপ আপ, লাঞ্জ, স্কোয়াট করুন।
ইন্টারভাল কার্ডিয়ো (দু’-তিন মিনিট জোরে দৌড়ে এক মিনিট বিশ্রাম নিয়ে আবার দৌড়। দিনে পাঁচ-ছ’বার), কিক বক্সিং, রোপ ক্লাইম্বিং ইত্যাদিতে অনেক পেশির পরিশ্রম হয়। তাই শরীর ফিট থাকে।
ডায়েটে রাখুন এই সব স্বাস্থ্যকর পানীয়।
পেটাই চেহারার দাওয়াই
শেপ রাখতে অনেকে র্যাপ, থার্মার দিয়ে পেট বেঁধে রাখেন। ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ইলাস্টিক করসেট পরতে পারেন। পেটের মাপ কম দেখায়, মাংসপেশিকে শক্ত রাখে। তবে টানা অনেকক্ষণ পরবেন না লো ওয়েস্ট ডেনিমে বেলিফ্যাট নিয়ন্ত্রণ শক্ত। তবে ফিরছে হাই ওয়েস্ট ডেনিম আর প্যান্টস। এগুলি সুদৃশ্য বড় বেল্ট দিয়ে পরুন কোনও দিন রুটিন ভেঙে চেটেপুটে খেলে একটু বেশিক্ষণ সিঁড়ি ভাঙুন কুঁজো হয়ে বা গা এলিয়ে নয়। টানটান সোজা হয়ে বসুন। ব্যথা কম হবে পেট টাইট রেখে হাঁটার চেষ্টা করুন।
ডায়েট মানেই বিস্বাদ নয়
প্রাতরাশে বাদাম, আখরোট, ফল, ছোলা থাক। সঙ্গে দুটো ডিমের সাদা অংশ আর কলা চটকানো ওটস। সাড়ে দশটা নাগাদ খান অর্ধেক আপেল, ফলের রস বা এক কাপ মাঠাতোলা দুধ। মধ্যাহ্নভোজনে ছোট এক বাটি ভাত বা তিনটি রুটি, ১৫০ গ্রাম চিকেন বা দু’পিস মাছ, হালকা তেলে সাঁতলানো আনাজ বা মুগ ডাল। সঙ্গে টকদই আর স্যালাড। সাড়ে তিনটে নাগাদ মুড়ি ছোলা বা সিদ্ধ ভুট্টাদানা, এক কাপ মাঠাতোলা দুধ। সন্ধে ছ’টায় কালো চা, দুটো বিস্কিট আর ছোট কলা। নৈশাহারের প্লেটে থাকবে বাটি ভরা গরম চিকেন-ভেজিটেবল সুপ, চারধার ঘিরে থাকবে লেবুর রসে জারানো শসা, টম্যাটো, পেঁয়াজ, গাজর। ওয়র্ক আউট আর ডায়েটে এ ভাবে ভারসাম্য রাখলে বডি শেপ ঠিক রাখা কোনও ব্যাপারই নয়।
মেদে বাড়ে অসুখ
অর্থোপেডিক সার্জন ডা. সুদীপ্ত মুখোপাধ্যায় জানালেন, মেয়েদের ক্ষেত্রে হিপ টু ওয়েস্ট অনুপাত
.৮- এর কম থাকা উচিত। এই অনুপাত বার করতে ফিতে দিয়ে নিজের কোমর ও নিতম্বের মাপ নিন। ধরুন, আপনার কোমর ও নিতম্বের মাপ যথাক্রমে ৩৬ ইঞ্চি ও ৪৪ ইঞ্চি। তা হলে অনুপাত হবে ৪৪:৩৬=০.৮১। এই অনুপাত ১-এর বেশি হলেই আপনি ‘ওবিস’। তখনই হাজারো সমস্যা। পেটে মেদ জমলেই পিঠে ভার বাড়ে। এ দিকে স্তন্যপায়ীদের মধ্যে এক মাত্র মানুষই দু’পায়ে হাঁটে। তার পিঠে বোঝা চাপালেই পায়ের উপরে চাপ পড়ে, পিঠের পেশিতে টান লাগে। এই ব্যাক মাসল ঘাড়ের নীচ থেকে শিরদাঁড়ার শেষ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। তাকে অতিরিক্ত প্রেশার দিলেই স্পন্ডিলোসিস আর অর্থোপেডিক গোত্রের রোগে ধরবে। ঘাড়ে যন্ত্রণা, পিঠের দু’পাশে, কোমরে, পায়ে ব্যথা। কম বয়সেই হাঁটু ও নিতম্বে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস, শিরদাঁড়া ভঙ্গুর বা বেঁকে যাওয়ার সমস্যা। আরও ওবিস হলেই অস্টিয়োপোরোসিস। এতে অস্থিবিন্যাসে ফাটল ধরে। তখন অল্পেই হাড় ভেঙে যায়, পড়ে গিয়ে বড় বিপত্তিও বাধতে পারে।
হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পেটের কাছে মেদ দেখলেই সাবধান। ঠিক ওই পরিমাণ ফ্যাট হয়তো করোনারিতেও জমেছে। ওই চর্বি গলিয়ে না ফেললে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। স্ফীত কোমর প্রজনন ক্ষমতার পক্ষেও ক্ষতিকর। চিকিৎসকের পরামর্শ, অসুখ বাড়িয়ে ফিজ়িয়োথেরাপি বা অস্ত্রোপচারের ভরসায় থাকবেন না। ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগা হোন।
ব্যায়ামেই বিনোদন
দিনে ২০-২৫ মিনিট সাঁতার কাটুন। হাতে বোতল নিয়ে সিঁড়ি ভাঙুন।
সকাল থেকে অফিস করে রাতে ক্লান্ত হয়ে ফিরছেন? শারীরিক কসরতের শক্তি ও উদ্যম পাচ্ছেন না? এমন কোনও এক্সারসাইজ় করুন, যা আপনার ভাল লাগে। স্কিপিং করুন। অ্যারোবিক্স ক্লাসে যান। ঘর গোছান। বাচ্চাদের নিয়ে ছুটোছুটি করুন। সাইকেল চালান। মন খুশি থাকলে গুড হরমোনের নিঃসরণ হয়। তার জৌলুস ফুটে ওঠে চামড়ায়। হ্যাপি এক্সারসাইজ়ের মাধ্যমে টক্সিন, কাজের স্ট্রেস আর বাড়তি ওজন সব উধাও হয়।
আর এ ভাবে চললে কোমরও সুন্দর হবে, আপনিও থাকবেন সুস্থ।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।
মডেল: হিয়া মুখোপাধ্যায়, ত্বরিতা চট্টোপাধ্যায়
ছবি: অমিত দাস, দেবর্ষি সরকার (ত্বরিতা, ডান দিকে)
মেকআপ: অভিজিৎ চন্দ (হিয়া), সৈকত নন্দী
শাড়ি ও ব্লাউজ়: সিমায়া, ট্র্যাঙ্গুলার পার্ক
লোকেশন: ভর্দে ভিস্তা কনক্লেভ, চকগড়িয়া (হিয়া), লাহাবাড়ি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy