Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
rain

বৃষ্টি পড়লেই রেনকোটে আশ্রয়? ত্বকের সংক্রমণ এড়াতে অবশ্যই খেয়াল রাখুন এই সব

ঋতুচক্রের নিয়মে হাজির বর্ষাকাল। ভ্যাপসা গরম আর থেকে থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে এ দিকে জীবাণুদের পোয়াবারো। এই অবস্থায় বড় হোক বা ছোট— অনেক ক্ষণ বর্ষাতি পরে থাকলে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে। কেন? জানালেন ত্বক বিশেষজ্ঞ কৌশিক লাহিড়ী। শুনলেন সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়।এই সময়টায় বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণের মধ্যে ফাঙ্গাস অর্থাৎ ছত্রাকের মাধ্যমে ক্ষতি হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে।

বর্ষাতি ব্যবহারের আগে ও পরে সচেতন থাকুন কিছু বিষয়ে। ছবি: আইস্টক।

বর্ষাতি ব্যবহারের আগে ও পরে সচেতন থাকুন কিছু বিষয়ে। ছবি: আইস্টক।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ১১:৫৪
Share: Save:

আগে ভাবা হত শীতে কাঁথা আর বর্ষায় ছাতা— এই দুইয়ের চেয়ে মিত্র কেউ হয় না। কিন্তু সে ভাবনার দিনকাল গিয়েছে। এখন ছাতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বর্ষা রোখে বর্ষাতি। সহজেই যাকে রেনকোট বলে ডাকেন।

তবে বর্ষাতি খোলা-পরার ব্যাপারে কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হয়। এই সময়টায় ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। বৃষ্টি হলেও ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে মুক্তি নেই। তাই বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে রেনকোট জড়ালে গরমে ঘেমেনেয়ে গায়ে ঘাম বসে যায়। ছোটদের বেলায় স্কুলে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রেনকোট খুলে মেলে শুকিয়ে নেওয়া উচিত। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুরা ভিজে বর্ষাতি কোনও রকমে ভাঁজ করে ব্যাগে পুরে রাখে। সেই ভিজে বর্ষাতিই আবার পরে নেয়। এর থেকে এক দিকে ত্বকের নানা সংক্রমণ অন্য দিকে ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বাড়ে। শুধু বর্ষাতিই বা কেন ভিজে জুতো-মোজা পরে থাকলেও পায়ে জীবানুর সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।

এই সময়টায় বিভিন্ন জীবাণুর সংক্রমণের মধ্যে ফাঙ্গাস অর্থাৎ ছত্রাকের মাধ্যমে ক্ষতি হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে যে সব শিশুর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি, তাদের সংক্রমণের প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে কিছুটা বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জীবাণুরা আমাদের ত্বকের উপরে ঘোরাফেরা করে। সুযোগ বুঝলেই আক্রমণ করে একেবারে নাজেহাল করে দেয়। এই সময়টায় বাতাসেও জীবাণুরা ভেসে বেড়ায়। ত্বকে ঘাম জমলে জীবানুরা দ্রুত সেখানে বংশবিস্তার করতে পারে। বর্ষায় যে সব ত্বকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে সেগুলি একে একে জেনে নেওয়া যাক।

আরও পড়ুন: কেনাকাটায় সঙ্গ দেওয়ার নামে জ্বর আসে সঙ্গীর? এ সব উপায়ে সহজেই রাজি করান তাঁকে

রিংওয়ার্ম: ১৫ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে এই ছত্রাকের সংক্রমণ সব থেকে বেশি দেখা যায়। তবে আমাদের দেশে বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবারই রিংওয়ার্মের সংক্রমণ হয়। প্রতি বছর প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষ রিংওয়ার্মে আক্রান্ত হন। প্রায় ৪০ ধরনের ছত্রাক রিংওয়ার্মের জন্য দায়ী। দাদ বা রিংওয়ার্মের ডাক্তারি নাম ‘ডার্মাটোফাইটোসিস’। ত্বকের এই সংক্রমণ শরীরের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। মূলত অপরিচ্ছন্নতা এই ছত্রাকদের দ্রুত বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে। ভিজে পোশাক ও জুতো-মোজা অনেক ক্ষণ পরে থাকলে রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

শিশুদের বর্ষাতি পরালে শিখিয়ে রাখুন কিছু নিয়মকানুন।

পায়ের পাতায় এই সংক্রমণ হলে তাকে বলে টিনিয়া পেডিস বা অ্যাথলেটস ফুট। কুঁচকি, ঊরু ও নিতম্বে সংক্রমণের নাম টিনিয়া ক্রুরিস বা জক ইচ। মাথার তালুতে ঘাড়েও রিংওয়ার্ম হয়। একে বলে টিনিয়া ক্যাপিটিস।

এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন অংশে ছত্রাকের কারণে দাদের সংক্রমণ হয়। কিছুটা গোলাকার সামান্য ফোলা ধার— এমন বৈশিষ্ট্য দিয়ে রোগের সূত্রপাত। এর পাশাপাশি একাধিক আকারের রিংওয়ার্ম দেখা যায়। খুব চুলকোয়।

ছত্রাকের এই সংক্রমণ হলে নিজেরা চিকিৎসা না করে ত্বক বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিতে হবে। বাজারচলতি স্টেরয়েড ক্রিম কিনে লাগিয়ে সমস্যাটাকে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে নিয়ে যান অনেকেই। একেই তো অসুখটা ছড়িয়ে পড়ে, অন্য দিকে স্টেরয়েড লাগিয়ে ত্বকের বিকৃতি পর্যন্ত হতে দেখা যায়। মাথায় রিংওয়ার্ম হলে চুল ঝরে যায়, কুঁচকিতে ব্যথা করে, নখ দিয়ে চুলকে অনেক সময় সেকেন্ডারি ইনফেকশন হয়ে যায়। সেই নখই শরীরের অন্যত্র লাগালে বিভিন্ন অংশে দাদ ছড়িয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শে চিকিৎসা করিয়ে দ্রুত রোগ সারানো দরকার।

আরও পড়ুন: লিভ ইন সম্পর্ক বেছে নিতে চলেছেন? অবশ্যই মাথায় রাখুন এ সব

বর্ষায় ত্বকের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে বেশি ক্ষণ বর্ষাতি পরে না থাকাই ভাল। বরং ছাতা ব্যবহার করুন। একান্তই তা অসম্ভব হলে বাড়ি ফিরেই ভাল করে গা শুকনো করে মুছুন। ভিজে বর্ষাতি ব্যাগে না রেখে বাতাসে মেলে রেখে শুকিয়ে নিতে হবে। ভিজে জুতো-মোজা পরে থাকলেও সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে জুতো পাল্টে নিতে পারলে ভাল হয়। অনেক সময় জুতো-মোজা কাচার পর তা না শুকোলে পরের দিন ভিজে জুতো পরিয়েই কেউ কেউ বাচ্চাকে স্কুলে পাঠান। এই ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হবে। বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষেরও এই ব্যাপারে নজর রাখা উচিত। দরকারে জুতো-মোজার একাধিক সেট মজুত রাখুন। বৃষ্টিতে ভিজে গেলে শুকনো করে মুছে নিতে হবে। সামান্য গরম জলে স্নান করে নিতে পারলে ভাল হয়। বাড়ি ফিরে সাবান দিয়ে পা পরিষ্কার করে গরম জলে পা ডুবিয়ে রাখলে নখকুনি ও এই জাতীয় পায়ের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। বৃষ্টির দিনে স্নান করা বন্ধ করলে সমস্যা বাড়বে বই কমবে না। তাই স্নান না করার ভুল একেবারেই নয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy