Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ডায়েটে শাসন ডায়াবিটিস

আধুনিক জীবনযাপনে অনেকেই মধুমেহর শিকার। কিন্তু তার বশ্যতা থেকে বেরিয়ে আসবেন কী করে? রইল উপায় আধুনিক জীবনযাপনে অনেকেই মধুমেহর শিকার। কিন্তু তার বশ্যতা থেকে বেরিয়ে আসবেন কী করে? রইল উপায়

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০০:৫২
Share: Save:

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঙালি গৃহস্থ বাড়ির যে কোনও বয়সি সদস্যের দুটো নামের সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়, ব্লাড প্রেশার আর সুগার (ডায়াবিটিস)। এক বার এই রোগ দু’টির কবলে পড়লে, তা থেকে নিষ্কৃতি নেই। আমৃত্যু নিয়মের মধ্যে থাকতে হবে। ডায়াবিটিস বংশানুক্রমিক। তবে টেকনোলজি-নির্ভর, দুশ্চিন্তায় ভরা লাইফস্টাইলের কারণে এই রোগ যুব প্রজন্মের মধ্যেও নির্ধারিত সময়ের আগেই কড়া নাড়ছে। দুশ্চিন্তা কমানোর পথ সহজ নয়। তাই রোগের মোকাবিলায় রোগী যা করতে পারেন, তা হল কড়া ডায়েট মেনে চলা। ডায়াটিশিয়ান কোয়েল পাল চৌধুরীর মতে, ডায়েটের অনুশাসন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রোগীও অনেকটা চাপমুক্ত থাকেন।

খাওয়ার ধরন

ডায়াবিটিক রোগীর আদর্শ ডায়েটের ৫০ শতাংশ হবে ফল ও আনাজ। ২৫ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট। বাকি ২৫ শতাংশ প্রোটিন। প্রাণীজ প্রোটিনের মধ্যে মাছ, চিকেন ও ডিম খাওয়া যেতে পারে। নিরামিশাষীদের জন্য পনির, সয়াবিন, ডাল চলতে পারে। ডায়েটে টক দই আবশ্যক। সাধারণত এক জন ডায়াবিটিক রোগীর প্রয়োজন ১২০০-১৬০০ কিলো ক্যালরি। তবে রোগীর বয়স, লিঙ্গ, শরীরের গঠন, লাইফস্টাইলের ধরন, সুগার লেভেল...এগুলির উপরে নির্ভর করে ক্যালরি নির্ধারিত হয়।

কী কী খাওয়া যেতে পারে

পটল, চিচিঙ্গা, চালকুমড়ো, করলা, পেঁপে, ঢ্যাঁড়স, বেগুন, বাঁধাকপি, লাউ, ফুলকপি, শসা, থোর, মোচা, কুদরি, ক্যাপসিকাম, টম্যাটো, পেঁয়াজ, আদা, সব ধরনের শাক, বিনস, ডুমুর, শিম, সজনে ডাঁটা।

খেয়াল রাখতে হবে

• কোন সময়ে খাচ্ছেন, কিছু ক্ষেত্রে তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময়েই চিকিৎসকরা রোজ নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়ার কথা বলে থাকেন। বিশেষ করে যাঁরা মিলটাইমে ইনসুলিন নেন, তাঁদের রোজ একই রকম রুটিন মেনে সময় ধরে খাওয়া উচিত।
• খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার সঙ্গে-সঙ্গেই রোজ শারীরচর্চাও জরুরি। ভারী ব্যায়াম না করে রোজ আধঘণ্টা হাঁটতে পারেন। এতেও সুগার লেভেল অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত থাকে।
• নিয়মিত ব্লাড সুগার চেক করা প্রয়োজন। অনেক সময়েই রুটিন মেনে বেশি ডায়েট করলে সুগার লেভেল হুট করে অনেকটা নেমে যেতে পারে। সে দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

কী কী খাওয়া অনুচিত

মাঠাওয়ালা দুধ, দুগ্ধজাত খাবার যেমন মাখন, ঘি, মিষ্টি, সব রকমের মিষ্টিস্বাদযুক্ত খাবার যেমন, চিনি, মধু, গুড়, লজেন্স, আইসক্রিম, কেক, পেস্ট্রি, ফলের রস, সফ্ট ড্রিঙ্কস, অ্যালকোহল, স্বাস্থ্যকর পানীয়, তেলেভাজা, শিঙাড়া, কচুরি, চপ, কাটলেট ইত্যাদি খাওয়া অনুচিত।

বরং মেপে খেতে পারেন মাখন ছাড়া গুঁড়ো দুধ, ডাবল টোনড দুধ। বিস্কিটের মধ্যে ক্রিমক্র্যাকার, মারি, থিন অ্যারারুট। ফলের মধ্যে মুসাম্বি, কমলালেবু, পাকা পেঁপে, খোসাসুদ্ধ আপেল ইত্যাদি। কার্বোহাইড্রেট হিসেবে খেতে পারেন অল্প ভাত, রুটি, সুজি, চিঁড়ে, কর্নফ্লেক্স, মুড়ি, ব্রাউন ব্রেড ইত্যাদি। আনাজপাতির মধ্যে মেপে খেতে পারেন রাঙা আলু, কচু, কাঁচা কলা, মুলো, গাজর, কুমড়ো ও এঁচোড়। মাছের মধ্যে চিংড়ি ও কাঁকড়া ছাড়া সব রকমের মাছ খাওয়া যাবে।

ডায়েটের নমুনা

জলখাবারের আগে: দুধ চিনি ছাড়া এক কাপ চা + ২টি বিস্কিট + বাদাম

জলখাবারে: আটার রুটি বা ডালিয়া বা ওটস বা সিদ্ধ তরকারি ৩০-৫০ গ্রাম, শসা ১৫০ গ্রাম।

দুপুরের খাবারের আগে: কমলালেবু বা মুসাম্বি বা পেয়ারা বা আপেল বা নাসপাতি ১০০-১৫০ গ্রাম

দুপুরের খাবারে: ভাত ৫০-৮০ গ্রাম, রুটি ২টি, ডাল ২০-৩০ গ্রাম, মাছ ৫০-৭৫ গ্রাম, চিকেন ১০০ গ্রাম, টক দই ১০০-১৫০ গ্রাম।

টিফিনে: মুড়ি বা চিঁড়ে ২০ গ্রাম, এক বাটি ছোলা সিদ্ধ।

রাতের খাবারে: রুটি ২টি, ভাত ৫০-৭০ গ্রাম, চিকেন ১০০ গ্রাম।

এ ক্ষেত্রেও মনে রাখতে হবে, এই পরিমাণ সকলের জন্য এক নয়। ব্যক্তি ও সমস্যাভেদে খাবারের পরিমাণ বদলাবে।

মিথ ভাঙুন

ডায়াবিটিক ডায়েটের মূল মন্ত্র, প্রাতরাশ ভারী হবে, দুপুরের খাবার মাঝারি ও রাতের খাবার হালকা। কিন্তু সাধারণত ব্রেকফাস্ট এড়িয়ে যাওয়া ও রাতে ভারী খাবার খাওয়ার প্রবণতা থাকে রোগীদের মধ্যে। রাতে ভারী খেলে ফাস্টিংয়ের সুগারের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। আর ব্রেকফাস্টে কম খেলে পিপি (পোস্ট প্র্যানডিয়াল)-এর পরিমাণ কমে যায়। দুটোই স্বাভাবিক পরিস্থিতির উল্টো।

বাঙালিদের ভাত-রুটি খাওয়ার দিকে ঝোঁক থাকে। পেট ভরানোর জন্য শসা ও টক দই যদি পরিমাণমতো খাওয়া যায়, তবে ভাত-রুটি খাওয়ার পরিমাণ এমনিতেই কমে যাবে।

দুটো মিলের মাঝে খিদে পেলে কেক বা বিস্কিট বেশি খাওয়া হয়। ডায়াবিটিক রোগীর কার্বোহাইড্রেট স্ন্যাকসের বদলে প্রোটিন স্ন্যাকস খাওয়া উচিত। ছোলা, ছানা, ডিমসিদ্ধ, ছাতু খেতে পারেন।

যে কোনও রোগের গোড়ার কথা, নিয়মমতো পথ্য অনুসরণ করা। ডায়াবিটিস রোগীর ক্ষেত্রে ইনসুলিন-ওষুধপত্র চলতেই থাকবে। তবে ডায়েট ফলো করলে রোগী অনেকটাই সুস্থ থাকবেন।

মডেল: ডিম্পল আচার্য; ছবি: বিপ্রদীপ চক্রবর্তী; মেকআপ: উজ্জ্বল দত্ত; লোকেশন: ফ্যাবকাফে; পোশাক: ফ্যাবইন্ডিয়া, লাউডন স্ট্রিট

অন্য বিষয়গুলি:

Fitness Tips Health Tips Health Diet Diabetes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy