ডেঙ্গির জ্বর থাবা বসানোর আগেই সতর্ক হোন।
ডেঙ্গি হানার মরসুম আসন্ন। কেবল শহর কলকাতাই নয়, শহরতলি, প্রত্যন্ত জেলা ও গ্রামগুলিও এই অসুখে ভুক্তভোগী। ডেঙ্গি নিয়ে প্রতি বছরই স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা নানা সচেতনতা, সতর্কতা জারি করে। চলে নানা বৈঠক ও কর্মশালাও। তবুও ডেঙ্গির প্রকোপ আটকানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীর মতে, ‘‘সাবধানতা বা সতর্কতা শুধু চিকিৎসকদের বা পুরকর্মীদের দায় নয়, সাধারণ মানুষকেও এর দায় ও সচেতনতায় অংশ নিতেই হবে। নইলে মশাবাহিত কোনও অসুখ থেকেই বাঁচা সম্ভব নয়। কিন্তু যে হারে হাইরাইজ তৈরি হয়, স্যাঁতসেতে ইটের পাঁজা দেখা যায়, আবর্জনার স্তূপ জমে থাকে এই শহরে তাতে ডেঙ্গি আটকানো কঠিন।’’ জুওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিজ্ঞানী শঙ্কর সুমনের মতেও এই অসুখ ঠেকাতে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে সাধারণ মানুষকেও। তাঁর মতে, ব্লিচিং বা কীটনাশক দিয়ে মশাকে কিছুটা প্রতিহত করতে পারলেও তার প্রভাব আধ-এক ঘণ্টার বেশি থাকে না। তাই যে সব জায়গায় মশা ডিম পাড়ে, সেই জায়গাগুলি ধ্বংস করাই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।’’
এ বছরই বর্ষাকাল পড়ার আগেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের একাধিক সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে পুরসভা। গত বছর কোন কোন জায়গা, ভবন ও অফিসে মশার লার্ভা মিলেছিল তার ঠিকানা-সহ বিস্তারিত তথ্যও চলে এসেছে সংশ্লিষ্ট দফতরের হাতে। কয়েক দফা অভিযান চালানোর পর পুরসভার চোখেও এমন আবর্জনার স্তূপ ধরা পড়েছে। এর পর রেল, বন্দর, মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ, রাজ্য পূর্ত, আবাসন, কেএমডিএ— সকলকে নিয়ে বৈঠকে বসেন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ ও পুর স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
আরও পড়ুন: বিপজ্জনক ‘সেলফাইটিস’! এই অসুখ দুনিয়া জুড়েই ডেকে আনছে অকালমৃত্যু
সরকারি কর্মসূচি তো বটেই, ডেঙ্গি থেকে দূরে থাকতে কিন্তু আপনাকেও কিছু পদক্ষেপ করতেই হবে। কোন কোন উপায় অবলম্বনে তা সম্ভব? কেমন তা?
ভাঙা টব ও পরিত্যক্ত টায়ার জমতে দেবেন না।
জল সে নোংরা হোক বা পরিষ্কার কিছুতেই জম থাকতে দেবেন না। জলের বালতি ঢেকে রাখুন। বাড়ির চারপাশে যেন কোনও ভাবেই জল না জমতে পারে সে দিকে কড়া নজর রাখুন। প্রয়োজনে কর্পোরেশন, স্থানীয় পুরসভা বা পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ করুন সত্ত্বর। অ্যানোফিলিস ও কিউলেক্স মশা জমা জলে ডিম পাড়ে। আশপাশে থাকা ফুলের টব, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ারে জল যাতে না জমে লক্ষ্য রাখুন। এমনিই বর্ষা কালে রাস্তাঘাট ভিজে থাকে, এর মধ্যে এ সব জায়গায় জল জমে থাকলে তা বিপদ আরও বাড়াবে। জমে থাকা ইট, বালি-সিমেন্টের স্তূপ এ সব মশা বসবাস করে। তাই এলাকার আশপাশে একেবারেই এ সব জমে থাকতে দেবেন না। একান্তই কোনও বাড়ি তৈরির পরিস্থিতি এলে ওই জায়গার চারপাশে নিয়মিত কীটনাশক ও মশা মারার স্প্রে দিন। ব্লিচিং, কীটনাশক বা তেলে ভরসা করুন, তবে তার চেয়েও বেশি জোর দিন আগাছা পরিষ্কারে।
আরও পড়ুন: একান্তই কিনতে হচ্ছে প্রসেসড ফুড? অসুখ রুখতে কেনার সময় মেনে চলুন এ সব সতর্কতা
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
যত অনভ্যাসই থাক, বর্ষার ক’দিন মশারির ভিতর ঘুমোন। বাড়িতে শিশু থাকলে ও বাড়ির চারপাশ অপরিষ্কার হলে অবশ্যই সারা দিন মশারি টাঙিয়ে রাখুন। এলাকায় কারও ডেঙ্গি হলেও এই উপায় অবশ্য পালনীয়। অস্থায়ী কিছু নেট বাজারে মেলে। বর্ষার ক’দিন সেগুলোও লাগিয়ে রাখতে পারেন ঘরের জানালায়। শিশুদের তো বটেই, বাইরে বেরলে নিজেরাও চেষ্টা করুন ফুল হাতা জামা-কাপড় পরতে। রাসায়নিক দেওয়া মশা নিরোধক ক্রিম মাখানোর চেয়ে ঘরোয়া কিছু উপায়ে মশা দমন করুন। তবে ভেষজ কোনও কোনও ধূপেও মশা যায়। সে সব প্রয়োগ করতেই পারেন। বাড়িতে মশা নিরোধক তেল ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মশারিকে ভালবাসুন, ডেঙ্গি থেকে বাঁচার স্বার্থেই।
একান্তই মশা মারার ওষুধ বা তেল ব্যবহার করলে তার উপাদান দেখে নিন। শরীরের জন্য তুলনামূলক কম ক্ষতিকর ওষুধ বা তেল কিনুন। মাঝে মাঝেই বদলে দিন ওষুধ। একই ওষুধ অনেকদিন ব্যবহার করলে মশা নিজের শরীরেও সেই প্রতিষেধকের বিপরীতে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ফেলে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy