Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
pranayama

শীতে বাড়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যা, এই সব প্রাণায়ামেই রুখে দিন অসুখ

কোন কোন প্রাণায়ামে মিলবে আরাম?

শ্বাসকষ্ট দূর করতে ভরসা থাকুক প্রাণায়ামে। ছবি: আইস্টক।

শ্বাসকষ্ট দূর করতে ভরসা থাকুক প্রাণায়ামে। ছবি: আইস্টক।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২০ ১৩:১০
Share: Save:

শীতে শ্বাসকষ্ট। মোকাবিলায় প্রাণায়াম। আমাদের পরামর্শ:

এক) নাড়িশোধন প্রাণায়াম

পদ্ধতি: মুখের সামনে ডান হাতের আঙুলগুলিকে আনুন, এর পর তর্জনী ও মধ্যমাকে হালকা ভাবে দুই ভুরুর মাঝে রাখুন। বুড়ো আঙুলকে ডান নাকের ছিদ্রে ও অনামিকাকে বাঁ নাকের ছিদ্রে রাখুন। এ বার বুড়ো আঙুলের চাপে নাকের ডান দিকের ছিদ্র বন্ধ করে বাঁ দিকের নাকের ছিদ্র দিয়ে যতটা পারেন শ্বাস নিন। এ বার অনামিকা দিয়ে চেপে ডান দিকের নাকের ছিদ্র বন্ধ করে শ্বাস ছাড়ুন বাঁ নাক দিয়ে। আবার একই ভাবে এক বার বাঁ দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ডান দিকের ছিদ্র দিয়ে শ্বাস নিন ও ডান দিক চেপে বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি নাসারন্ধ্রে ১০-১৫ বার করে অভ্যাস করা হয় এই প্রাণায়াম।

কী খেয়াল রাখব: এই প্রাণায়াম করার সময় কড়ে আঙুলকে মুড়ে রাখতে হবে আরামদায়ক ভাবে। দীর্ঘ দিন বেশ কিছুটা সময় ধরে অভ্যাস করলে বাঁ হাতের তালু দিয়ে ডান হাতের কনুইয়ে ভর পোঁছনো যেতে পারে। বুকের খাঁচায় যাতে কোনও ভাবে চাপ না পড়ে বা সীমাবদ্ধতা না আসে।

দুই) কপালভাতি

পদ্ধতি: আরামদায়ক কোনও একটি আসনের ভঙ্গিতে বসুন, তা পদ্মাসন, বজ্রাসন বা সুখাসনও হতে পারে। মাথা ও মেরুদণ্ড সোজা রাখুন। দুই হাতকে জ্ঞান বা চিন মুদ্রার ভঙ্গিতে (বুড়ো আঙুল ও তর্জনী জুড়ে হাতের তালুকে আকাশের দিকে রাখা হল জ্ঞান মুদ্রা, ওই ভাবেই নীচের দিকে রাখলে তা চিন) রাখুন।

চোখ বন্ধ করে আরামদায়ক অবস্থায় রাখুন গোটা শরীর। স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ার সময় পেটের পেশীর উপর চাপ দিতে হবে। দ্রুত শ্বাস নিতে ও ছাড়তে হয়। এই ভাবে বার দশেক দ্রুত লয়ে এই পদ্ধতি অভ্যাসের পর মিনিট দুই স্বাভাবিক লয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজ সারুন। সবে সবে শুরু করলে প্রতি দশ বারে একটি সেট করুন। পাঁচটি সেটে সম্পূর্ণ হয় এই প্রাণায়ামের অভ্যাস।

কী খেয়াল রাখব: শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার প্রক্রিয়াটি সবটাই পেট থেকে হবে। গোটা প্রক্রিয়ায় কাঁধ ও মুখ স্বাভাবিক ও আরামদায়ক অবস্থায় থাকবে।

সতর্কীকরণ: রক্তচাপের রোগীদের জন্য এই প্রাণায়াম নয়।

তিন) ভামরি

পদ্ধতি: আরামদায়ক ভাবে পদ্মাসন বা সিদ্ধাসনে বসুন। হাত দু’টিকে চিন বা জ্ঞান মুদ্রায় (বুড়ো আঙুল ও তর্জনী জুড়ে হাতের তালুকে আকাশের দিকে রাখা হল জ্ঞান মুদ্রা, ওই ভাবেই নীচের দিকে রাখলে তা হল চিন মুদ্রা) দুই হাঁটুর উপর রাখুন। সোজা হয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আরামদায়ক অবস্থায় রাখুন পুরো শরীরকে। এই প্রাণায়ামের সময় দুই ঠোঁট জোড়া অবস্থায় রাখলেও মুখের ভিতর দাঁতের দুই পাটির মাঝে সামান্য ফাঁক রাখতে হবে। এ বার ধীরে ধীরে দুই হাতের কনুই ভাঁজ করে তাদের দুই কানের কানের গহ্বরের কাছে নিয়ে যান। এ বার তর্জনী ও মধ্যমা দিয়ে কানের গহ্বর বন্ধ করে দিন বা কর্ণগহ্বরের পাশের টুপির মতো মাংসল অংশ চেপে কান বন্ধ ধরুন। তবে কোনও ভাবেই কানের ভিতরে কোনও আঙুল প্রবেশ করানো যাবে না।

শরীরকে একেবারে স্থির রেখে মাথার মধ্যভাগে আজ্ঞাচক্রে মনোনিবেশ করুন। নাক দিয়ে স্বাভাবিক উপায়ে জোরে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ার সময় খুব ধীরে নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে শ্বাস ছাড়তে হবে। এই শ্বাস ছাড়ার সময় ভ্রমরের মতো গভীর, একটানা মৃদু গুঞ্জন করতে হবে মুখ দিয়ে। এতে কানের ভিতর একটি কম্পন তৈরি হবে। প্রতিধ্বনি তৈরি হবে মাথার সামনের অংশেও। শ্বাস ছাড়া সম্পূর্ণ হলে হাতকে ফেরাতে হবে ফের হাঁটুর উপর।

কী খেয়াল রাখব: শ্বাস ছাড়ার সময় গতি যেন ধীরে থাকে ও গুঞ্জনের সময় যেন মস্তিষ্কের সম্মুখভাগে তার প্রতিধ্বনি বোঝা যায়। অভিজ্ঞ ট্রেনারের পরামর্শ নিয়ে এটি অভ্যাস করা উচিত।

চার) অনুলোম-বিলোম

পদ্ধতি: অনুলোমের ক্ষেত্রে এক দিকের নাক বন্ধ থাকবে। প্রথমে ডান দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে, বাঁ দিক দিয়ে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার কাজ করতে হবে। পরে বাঁ দিকের নাকের ছিদ্র চেপে ধরে, ডান দিক দিয়ে শ্বাস গ্রহণ ও বর্জনের অভ্যাস করতে হবে। এই প্রাণায়ামে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হবে হবে তিন ধাপে। প্রথমে কিছুটা শ্বাস নিয়ে দু’ সেকেণ্ড থেমে ফের শ্বাস নিতে হবে, তার পর আবার দু’সেকেণ্ড থেমে পুরো শ্বাস গ্রহণ করতে হবে। শ্বাস ছাড়ার সময়ও বজায় রাখতে হবে এই নিয়ম।

বিলোমের বেলায় দুই নাক দিয়েই একই সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই শ্বাস নেওয়া প্রয়োজন। তবে অনুলোমের মতোই তা হবে তিন ধাপে। অর্থাৎ প্রথমে কিছুটা শ্বাস নিয়ে দু’সেকেন্ড থামতে হবে। আবার শ্বাস নিতে হবে। ফের দু’সেকেন্ড থেমে শেষ ধাপে পুরো শ্বাস নিতে হবে। ছাড়তেও হবে একই পদ্ধতিতে থেমে থেমে তিন ধাপে।

কী খেয়াল রাখব: অনুলোম ও বিলোমের ক্ষেত্রে তিন ধাপের বিরাম যেন সমান থাকে। শ্বাস ছাড়ার শেষ ধাপে ছেড়ে দিতে হবে পুরো বাতাসটাই।

পাঁচ) ভস্ত্রিকা

পদ্ধতি: আরামদায়ক কোনও একটি আসনে বসে হাত দু’টিকে চিন ও জ্ঞানের মুদ্রায় দুই হাঁটুর উপর রাখুন। চোখ বন্ধ করে গোটা শরীর সোজা রাখুন। প্রথমে স্বাভাবিক গতিতে গভীর ভাবে শ্বাস নিন। শ্বাস ছাড়ার সময় নাকের মাধ্যমে জোর প্রয়োগ করে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়তে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই ওই একই পরিমাণ জোরের সঙ্গে শ্বাস গ্রহণ করুন স্বাভাবিক গতিতে। জোরের সঙ্গে শ্বাস নেওয়ার সময় পেটের পেশীরা সম্পূর্ণ ভাবে প্রসারিত হবে। আবার একই জোর দিয়ে শ্বাসবর্জনে পেটের পেশীরা দৃঢ় থাকবে।

শ্বাস নেওয়ার সময় ডায়াফ্রাম নীচের দিকে নামবে ও পেট বাইরের দিকে বেরিয়ে আসবে। শ্বাস ছাড়ার সময় ডায়াফ্রাম উপরের দিকে উঠবে ও পেট ভিতরের দিকে ঢুকে আসবে। এই ভাবে ১০ বারে একটি সেট সম্পূর্ণ হবে। পাঁচটি সেটে প্রাণায়ামটি সম্পূর্ণ হয়।

কী খেয়াল রাখব: শ্বাস বর্জন ও গ্রহণের সময়ের জোরটি যেন সমান হয়। শ্বাস গ্রহণ-বর্জনের সময় গতির ছন্দটিও যেন নিয়ম মেনে হয়।

(অলঙ্করণ: শৌভিক দেবনাথ)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy