প্রতীকী চিত্র।
করোনা আতঙ্কের মাঝেই হাজির নতুন বিপদ স্ক্রাব টাইফাস। খুব ছোট, উড়ন্ত পোকার (মাইট) লালায় থাকা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে জ্বর। এই মাইটের নাম স্ক্রাব টাইফাস। ঝোপেঝাড়ে থাকে তাই অন্য নাম বুশ টাইফাস। ঝোপঝাড় আছে এমন জায়গা থেকে এই রোগ হত নানা প্রাণীর। উকুনের থেকেও ছোট্ট উড়ন্ত এক পোকার কামড়ে এই রোগ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে, বলছেন চিকিৎসকরা। স্ক্রাব টাইফাসের কামড়ে ওরিয়েনশিয়া শুশুগামুসি (Orientia Tsutsugamushi) নামে এক ব্যাক্টেরিয়া বাসা বাধে শরীরে, এমনই বললেন মেডিসিনের চিকিৎসক দীপঙ্কর সরকার।
কী কী উপসর্গ দেখলে সাবধান হতে হবে
এই পোকা কামড়ালে চট করে বোঝা যায় না। পোকা কামড়ানোর ৬ থেকে ২০ দিনের মধ্যে (সাধারণত ১০ দিনের মধ্যেই) কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। মাথা-সহ শরীরের নানা অংশ, হাত-পায়ে যন্ত্রণা শুরু হয়। জ্বরের সঙ্গে র্যাশ বেরোতে পারে অনেক সময়। গলায় আর বাহুমূলে গ্রন্থি বা গ্ল্যান্ড ফুলে যায় অনেক ক্ষেত্রে। তবে সবার যে র্যাশ বেরোয় তা নয়। এক-এক জনের এক-এক রকম উপসর্গ দেখা যায়, তবে জ্বর থাকবেই। স্ক্রাব টাইফাস কামড়ালে সংক্রমণ হলে অসুখের উপসর্গ হিসেবে প্রবল জ্বর হয়, বললেন ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের পতঙ্গবাহিত রোগ ও শিশুবিশেষজ্ঞ প্রভাসপ্রসূন গিরি।
কোভিড-১৯, ডেঙ্গি বা অন্যান্য জ্বরে সর্দি-কাশি থাকলেও স্ক্রাব টাইফাস জ্বরে সর্দি থাকে না। যেখানে পোকা কামড়ায় সেই জায়গায় একটা পোড়া দাগ দেখা যেতে পারে।
এ ছাড়া আরও কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে, সেগুলি হল—
• প্রবল জ্বর টানা ৫–৭ দিন
• মাথায় যন্ত্রণা ও শরীরের নানা অংশ, হাত-পায়ে ব্যথা।
• শরীরের বিভিন্ন অংশে মশার কামড়ের মতো লাল লাল র্যাশ বেরোতে পারে
• মাইটের কামড়ের জায়গায় কালশিটের মতো গোল দাগ দেখা যেতে পারে
• শ্বাসকষ্ট হতে পারে
• প্রবল মাথার যন্ত্রণায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে
আরও পড়ুন: কোভিড শঙ্কায় ছুঁল না কেউ, ফ্রিজারে রইল বৃদ্ধের দেহ
আরও পড়ুন: ‘এলএসি পেরিয়ে বেজিং যাবার ইচ্ছে? গাড়ি ঘোরান!’
স্ক্রাব টাইফাস। ফাইল চিত্র।
স্ক্রাব টাইফাস সন্দেহ হলে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ৪–৫ দিন জ্বরের পরেও ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া বা কোভিড-১৯ নেগেটিভ হলে স্ক্রাব টাইফাস টেস্ট করা উচিত। আইজি_এম এলাইজা টেস্ট করে স্ক্রাব টাইফাস হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, জানান চিকিৎসক।
অবহেলায় ফল হতে পারে মারাত্মক
স্ক্রাব টাইফাসের কারণে জ্বর হলে দু’-তিন দিনের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করলে অসুখ সারতে বেশি সময় লাগে না। কিন্তু ফেলে রাখলে আচমকা বিপদে পড়ার ঝুঁকি থাকে। কারণ ওরিয়েনসিয়া শুশুগামুসি রক্তবাহী ধমনি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পৌঁছে আক্রমণ করে। ফুসফুস, কিডনি, হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে রোগীর অবস্থা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। ফুসফুস আক্রান্ত হলে প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে নিউমোনিয়ার পর্যায়ে যেতে পারে। জীবাণু যদি মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় তা হলে রোগী কোমায় চলে যেতে পারে। তাই উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসা করতে হয়, বললেন দীপঙ্কর সরকার। নির্দিষ্ট ডোজে ডক্সিসাইক্লিন জাতীয় অ্যান্টিবায়োটিক দিলে চট করে অসুখের বাড়বাড়ন্ত থামিয়ে দেওয়া যায়। দীপঙ্করবাবু বললেন, ফুসফুসের সংক্রমণের চিকিৎসাতেও ডক্সিসাইক্লিন উল্লেখযোগ্য কাজ করে।
শহরেও বাড়ছে স্ক্রাব টাইফাস
কয়েক বছর আগেও খড়্গপুর, দুর্গাপুর, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদের মতো মফস্সল শহরেই স্ক্রাব টাইফাসের প্রকোপ দেখা যেত। কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলে সম্প্রতি স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, বললেন দীপঙ্করবাবু। মুর্শিদাবাদ এবং কলকাতার কাছে বারুইপুরে স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। যেহেতু তারা মাঠে বা পার্কে খেলতে যায়। অবশ্য করোনার কারণে বাচ্চাদের বাইরে বেরোন বন্ধ হওয়ায় তারা কিছুটা নিরাপদ বলে আশ্বস্ত করেন চিকিৎসকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy