Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Cyber Crime

দেখা হয়েছে নিষিদ্ধ পর্ন সাইট, জরিমানা না দিলে হবে হাজতবাস! প্রতারণার নতুন লক্ষ্য এখন ছোটরা

সাম্প্রতিক পুলিশি রিপোর্ট অনুযায়ী, মামলা রুজু হওয়ার ঘটনায় ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশই অনলাইন অপরাধের শিকার। কেউ হুমকির মুখোমুখি হয়েছে, কেউ নিশানা হয়েছে সাইবার বুলিংয়ের।

An image of child

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৭:১৪
Share: Save:

ব্যবহার করার অবস্থায় থাকছে না ল্যাপটপ বা কম্পিউটার। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে যন্ত্রটি বন্ধ করাও যাচ্ছে না। স্ক্রিনের উপরে একটি বার্তা ভাসছে। যেখানে ‘ন্যাশনাল সাইবার ক্রাইম রিপোর্টিং পোর্টাল’-এর লোগো-সহ লেখা, ভারতে নিষিদ্ধ বেশ কিছু পর্নোগ্রাফি সাইট বার বার খোলার জন্য এই কম্পিউটারটি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডের তথ্য বসিয়ে পেমেন্ট করার একটি জায়গা দেখিয়ে মোটা টাকা জরিমানা দিতে বলা হচ্ছে। দ্রুত টাকা না মেটালে বাড়িতে পুলিশ যাওয়ার এবং জরিমানা না মিটিয়ে কম্পিউটারটি খুলে ফেলার চেষ্টা করলে আইন মন্ত্রকে রিপোর্ট পাঠিয়ে হাজতবাস করানোরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে!

গত কয়েক মাসে রাজ্য জুড়ে এমনই কিছু ঘটনা সামনে এসেছে। আজ, বুধবার ইন্টারনেট সুরক্ষা দিবসের আগে যা নতুন করে চিন্তায় রাখছে তদন্তকারীদের। সূত্রের খবর, কলকাতা, বিধাননগর ও ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট মিলিয়ে এমন একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে গত এক মাসে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, এটি টাকা হাতানোর নতুন কৌশল। মূলত বিদেশে বসে এ দেশের কম্পিউটার বা ল্যাপটপকে নিশানা করছে সাইবার অপরাধীরা। এমন কম্পিউটার বা ল্যাপটপকে নিশানা করা হচ্ছে, যা শিশু বা কিশোর-কিশোরীরা ব্যবহার করে। কিন্তু সেগুলির মালিক আদতে সেই শিশুর বাবা-মা অথবা পরিবারের অন্য সদস্য।

লালবাজারের এক কর্তা জানাচ্ছেন, চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি বেহালার এক বাসিন্দা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর ১২ বছরের ছেলে স্কুলের কাজের জন্য যে কম্পিউটার ব্যবহার করে, সেটি হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অফিস থেকে ফিরে ওই ব্যক্তি দেখেন, মাউস বা কি-বোর্ডের কোনওটিই কাজ করছে না। কম্পিউটার বন্ধও করা যাচ্ছে না। উল্টে, তাতে একটি ওয়েবসাইট খোলা। যেখানে লেখা, পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট দেখার জন্য যন্ত্রটি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে। ব্লক খোলার জন্য ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ডে ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা দিতে বলা হয়েছে। না দিলে বাড়িতে পুলিশ পাঠানোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। কার্ডের মাধ্যমে টাকা মিটিয়ে নিষ্কৃতি পেতে গিয়ে সেই ব্যক্তি কয়েক দফায় প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা খোয়ান।

ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘মূলত পরিবারের সম্মান এবং সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে বহু অভিভাবকই টাকা মেটানোর চেষ্টা করেন। সেই ফাঁদে পড়েই অনেকে শেষ পর্যন্ত মোটা টাকা খোয়ান। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন বা অন্য সমস্যায় ভোগা সন্তানের ক্ষেত্রে যদি এমন ঘটে, তখন অভিভাবকেরা আরও তৎপর হয়ে টাকা মেটানোর চেষ্টা করেন। তাঁরা ধরেই নেন, হয়তো তাঁদের সন্তান না বুঝেই কিছু ঘটিয়ে ফেলেছে।’’

লালবাজার জানাচ্ছে, একাধিক সমীক্ষায় তারা দেখেছে, সন্তান অনলাইনে নিরাপদ কি না, সে নিয়ে বিশেষ সচেতন নন বহু অভিভাবকই। সাম্প্রতিক পুলিশি রিপোর্ট অনুযায়ী, মামলা রুজু হওয়ার ঘটনায় ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সিদের মধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশই অনলাইন অপরাধের শিকার। কেউ হুমকির মুখোমুখি হয়েছে, কেউ নিশানা হয়েছে সাইবার বুলিংয়ের। দেখা যাচ্ছে, মামলা হওয়ার ঘটনায় ১৪.৯ শতাংশ সাইবার বুলিংয়ের শিকার। আবার ১৩.৬ শতাংশ শিশু, কিশোর-কিশোরী আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেছে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, যেখানে কাউকে চাপ দিয়ে তৈরি করানো হচ্ছে ডার্ক ওয়েবের ‘কন্টেন্ট’, কেউ বা অজানতেই শিশু পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছে।

গত বছরের ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’ (এনসিআরবি)-র রিপোর্ট দেখিয়েছে, শিশুদের মধ্যে অনলাইন অপরাধের শিকারের ঘটনা বাড়ছে। ভারতের ৮৫ শতাংশ বালক-বালিকাই ‘সাইবার বুলিং’ এবং ৪২ শতাংশ অনলাইনে যৌন হেনস্থার শিকার। ২৮ শতাংশ ব্যক্তিগত ক্ষতির হুমকি পেয়েছে। কিন্তু সন্তান অনলাইন অপরাধের শিকার হলেও পুলিশের কাছে যাচ্ছেন না অনেকেই। ৯০ শতাংশ অভিভাবক এই সংক্রান্ত আইন নিয়ে সচেতনই নন। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তার মন্তব্য, ‘‘দ্রুত অভিযোগ জানালে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ক্ষতি আটকানো যেতে পারে। অভিভাবকদের সচেতন হওয়া সবচেয়ে জরুরি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime Cyber fraud Children
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE