পাঞ্জাবি, কপালে চন্দন, মাথায় টোপর, গলায় ফুলের মালা, হাতে হিরের আংটি— একটা সময় অবধি বাঙালি পুরুষের বিয়ের সাজে এটাই ছিল চিরচেনা ছবি। কখনও বা থাকত জরি মখমলের সাজ, পাগড়ি-আচকান।
বাঙালি পুরুষ চিরকালীন সাজ সচেতন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের সাজে যোগ হয়েছে নানা মাত্রা। আগে বিয়ের খবর পেলেই বাড়িতে হাজির হত গৃহস্থের বাঁধা শাড়িওয়ালা, স্যাকরা। ফরমায়েশ মাফিক জামাকাপড় কিংবা গয়না সরবরাহ করতেন তাঁরা। এখন দিন-কাল বদলেছে। বিয়ে মানে ‘ইভেন্ট’। প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য রয়েছে আলাদা থিম। সঙ্গে মানানসই পোশাক। বিয়ের সাজের উন্মাদনা কতটা ছুঁয়ে যায় নব্য প্রজন্মের পুরুষকে? ফ্যাশন ডিজ়াইনার অভিষেক রায় বলছেন, “বিয়েটা যখন দু’জনের, তখন শুধু কনে নয় বরের পোশাকও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আজকাল ছেলেরাও চান, নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা দেখাতে। বর-কনের পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে দু’টি পরিবার ও বন্ধুদের পোশাক তৈরিও নতুন ট্রেন্ড। আসলে বাঙালি বিয়ের অনুষ্ঠান এখন হিন্দি সিরিয়ালের দৃশ্যের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়! আট-দশটা অনুষ্ঠান থাকবেই। প্রিওয়েডিং ফোটোশুট, ব্যাচেলর পার্টি, আশীর্বাদ, মেহেন্দি-সঙ্গীত, গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত-রিসেপশন... সব মিলিয়ে হইহই ব্যাপার।”
কেমন ভাবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাজবেন, সেই পরামর্শ দিলেন পোশাকশিল্পী। আগে গায়ে-হলুদের সময়ে ছেলেরা ধুতির উপরে একটা গামছা জড়িয়ে নিত। কিন্তু এখন গায়ে হলুদও ইভেন্টের একটা অংশ। আর এ জন্য চাই নতুন পোশাকও। কটন চান্দেরি, র সিল্ক, চিকন, মলমলের মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ পাঞ্জাবির চল বেশি। গায়ে হলুদের জন্য মডেল যেমন বেছে নিয়েছেন ব্যাম্বার্গ সিল্কের উপর সুতোর কাজের পিন্টস পাঞ্জাবি। সঙ্গে গাঢ় সোনালি পাড়ের কোরা ধুতি। আর ছবিতে বরের বন্ধু পরেছেন চান্দেরি কটনের পাঞ্জাবি ও চোস্ত পায়জামা। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান মানেই এখন নাচ-গান। প্রতিটি মুহূর্ত বিভিন্ন ভাবে ক্যামেরাবন্দি করা হয়। তাই পোশাকের সঙ্গে মেকআপ নিয়েও ছেলেরা সচেতন। মেকআপ শিল্পী অভিজিৎ পাল বলছিলেন, “ত্বকের খুঁত ঢাকতে ছেলেরাও এখন মেকআপ করতে পছন্দ করছেন। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের আগে ফোটোসেশনের জন্য কনের সঙ্গে বরও সাজেন।” এ দিন কনসিলার দিয়ে ত্বকের দাগছোপ মুছে হালকা ফেস শিমার লাগানোর পরামর্শ দিলেন অভিজিৎ। চুলে জেল লাগিয়ে মোহক, স্পাইক বা পছন্দ মতো হেয়ারস্টাইল করা যায়।
একটা সময় বিয়ের সাজে তসর, গরদের পাঞ্জাবিতে কাঁথা, আড়ি, ফ্রেঞ্চনটের কাজ প্রাধান্য পেত। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডিজ়াইনে বৈচিত্র এসেছে। পোশাকশিল্পীর কথায়, “সাবেকি কাট ও ডিজ়াইন নিয়ে সমসময়ের লুক দেওয়াটা এখন বিয়ের সাজের ট্রেন্ড। যেমন পুরনো কাঁথা, আড়ি, ফ্রেঞ্চনটের একটানা ভরাট কাজ না রেখে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ ডিজ়াইন চলছে। একপাশে বোতাম, বেনিয়ান, অঙ্গরাখা কিংবা গলা ও পিঠে ভারী নকশার পাঞ্জাবির চল বেড়েছে।” বাংলার সংস্কৃতির ফেলে আসা ডিজ়াইন দিয়েই তৈরি হয়েছে মডেলদের ধুতি-পাঞ্জাবি। চান্দেরি সিল্কের জমিতে সোনালি জরির হ্যান্ড এমব্রয়ডারি পাঞ্জাবি। এ যেন সুতোর কাজের মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যের হাত ধরেছে আধুনিকতা। সঙ্গে ব্রোকেডের ধুতি। আজকাল ধুতিতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। জামদানি, কাঁথা, এমব্রয়ডারি কাজের জমকালো ধুতি পরার চল শুরু হয়েছে। কনে যে বেনারসি শাড়িটি পরবেন, সেই রকমই আর একটি বেনারসি কিনে ধুতির কায়দায় পরে ফেলাটাও নয়া দস্তুর।
রিসেপশনে রাজকীয় সাজের ছোঁয়া রাখতে পোশাকে ভেলভেটকে প্রাধান্য দিয়েছেন অভিষেক। শৈল্পিক রুচিকে তুলে ধরেছে ভেলভেটের উপর জারদৌসির কাজের শেরওয়ানি সেটটি। তবে গাঢ় রঙের পাশাপাশি হালকা প্যাস্টল শেডের চল বেশি।
মাঘ পড়তেই সানাইয়ের মিঠে সুর শোনা যাচ্ছে। নিমন্ত্রণ আসছে তেল-হলুদ ছোঁয়ানো ‘যদিদং হৃদয়ং...’ বা ‘শুভ বিবাহ’ লেখা কার্ডে। বদলটা যা-ই হোক, সাজের বহরে বিয়ের আনন্দটা একই আছে।
মডেল: মহম্মদ ইকবাল, সায়ন সূর্য, রাজ গুপ্ত;
ছবি: সায়ন্তন দত্ত;
মেকআপ: অভিজিৎ পাল;
পোশাক: বহুরূপী শান্তিনিকেতন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy